ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নির্দেশ মেনে বাংলাদেশিদের গরুর মাংস খাওয়া বন্ধ হলে ভারতই বিপাকে পড়তে পারে বলে মনে করছে দেশটির গণমাধ্যম। বাংলাদেশে গরু না এলে বছরে ৩১ হাজার কোটি রুপি ক্ষতির মুখে পড়বে ভারত। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
আজ শুক্রবার ভারতের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের জওয়ানরা সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করলে বছরে সোয়া কোটি গরু গোয়ালেই থেকে যাবে। তখন এই গরুগুলো পুষতে যে অর্থ খরচ হবে, তা সমন্বিত শিশু উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিশুপুষ্টির জন্য সরকারের বরাদ্দ অর্থের চেয়ে চার গুণ বেশি হবে।
প্রতিবছর গড়ে ২৫ লাখ গরু সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হয়। তবে এই পাচারের অধিকাংশই হয় সীমান্তরক্ষীদের মদদে। যদিও বিএসএফ বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, প্রক্রিয়াজাত মাংস বাংলাদেশে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা। এই মাংসের উৎস গবাদিপশুর বড় জোগানদাতা ভারত। সম্ভবত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর কর্মকর্তারা বিষয়টি জানাননি যে, এই গরুর মাংসের বড় অংশ বাংলাদেশে খাওয়া হয় না, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধিকাংশ বাংলাদেশিরই নিয়মিত গরুর মাংস খাওয়ার সামর্থ্য এখনো নেই। তারা শুধু বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানে গো-মাংস খায়।
বিএসএফের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, ‘সীমান্তের দুই পাড়ের লোকজনেরই অর্থনৈতিক চাপ আছে। বাংলাদেশে গরুর ব্যাপক চাহিদা আছে। দুধ না দেওয়া গরু পুষতেও ভারতের গোয়ালাদের বেগ পেতে হয়। এ কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। আক্রমণের শিকার না হলে আমরা তাই গরু পাচারকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করি না।
আমাদের লোকজন (বিএসএফ) বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করে। এসব কারণেই অবৈধ বাণিজ্য চলে। দুধ না দেওয়া গরুগুলোকে খাওয়ানোর বাস্তবিক কোনো সমাধান না হলে এটা (অবৈধ গরু পাচার) বন্ধ হবে না।’
কিভাবে এলো ৩১০০০ কোটি রুপির হিসাব
ভারতের ডেইরি শিল্পের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে গরুর গড় আয়ু ১৫ থেকে ২০ বছর। ওই গরুগুলোর মারা যাওয়ার পাঁচ বছর আগে দুধ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু বছরে ২৫ লাখ গরু সীমান্ত দিয়ে পারাপার হয়, সেহেতু এই পাচার বন্ধ করলে বছরে সোয়া কোটি দুধ না দেওয়া গরুকে পুষতে হবে। এতে করে গোয়ালের খরচ, রাখালের বেতন ও খাদ্যবাবদ প্রতি গরুর পেছনে খরচ হবে ২৫ হাজার রুপি। এর বার্ষিক পরিমাণ দাঁড়াবে ৩১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে গোয়ালঘরের জমি নির্ধারণ ও অবকাঠামোগত আনুষঙ্গিক খরচের বিষয়টি।
গত বুধবার বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ সদস্যদের কঠোর নজরদারি করতে বলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সীমান্তবর্তী একটি ফাঁড়ি পরিদর্শনের সময় তিনি এ নির্দেশ দেন।
বিএসএফ জওয়ানদের উদ্দেশে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সীমান্তে কঠোর নজরদারি বজায় রাখুন, যেন বাংলাদেশে গরু পাচার একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বেড়ে যায়, যাতে করে দেশটির মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।’