আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত প্রতীকের চেয়ে বৈধ মনোনয়নপত্রের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এখন নতুন প্রতীকের সন্ধান করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। আর এ জন্য অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দের প্রসঙ্গটি টেনে সম্প্রতি ইসি উপ-সচিব সামসুল আলম স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র তিন সিটি রিটার্নিং অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীকে এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১০ বিধিমালা অনুসারে তিনটি পদে নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য ৩৪টি প্রতীক সংরক্ষণ করেছে ইসি। এরমধ্যে মেয়র পদে ১২টি, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২টি এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের জন্য ১০টি প্রতীক আলাদা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে তিন সিটিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রার্থীদের সংখ্যা সংরক্ষিত প্রতীকের চেয়ে বেশি হওয়ায় নতুন করে অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দের কথা ভাবতে হচ্ছে ইসিকে।
তবে অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দ শেষ হতে হবে। তার আগে কোনভাবেই অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে না।
সংরক্ষিত প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়া প্রসঙ্গে ইসি উপ-সচিব সামসুল আলম বলছেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত প্রতীকের চেয়ে প্রার্থী বেশি হলেও কোনো সমস্যা হবে না। সে ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়নি এমন প্রতীক খুঁজে নিয়ে প্রার্থীদের বরাদ্দ দেয়া হবে।’
জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতীক সংরক্ষণ করে রেখেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন পেয়েছে ৩৪টি প্রতীক। এ ৩৪টি প্রতীক আবার ভাগ হতে হবে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের মাঝে। আর এখানেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটিকে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য সংরক্ষিত ৩৪টি প্রতীকের মধ্যে মেয়র পদের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে ১২টি প্রতীক। তবে ঢাকা উত্তরে ১৯ ও দক্ষিণে ২৩ জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য সংরক্ষিত প্রতীক ১২টি হলেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে ৯৮৪ জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ১০টি প্রতীক নির্ধারিত রয়েছে সংরক্ষিত পদের জন্য। এখানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মিলিয়ে ২৪২ জনের মনোনয়পত্র বৈধতা পেয়েছে।
আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ এপ্রিল। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়ের আগে কোন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া যাবে না। ৯ এপ্রিলের পরও যদি প্রার্থীর সংখ্যা সংরক্ষিত প্রতীকের সংখ্যার চেয়ে বেশি থেকে যায়, তখন অতিরিক্ত প্রতীকের প্রয়োজন হবে। নির্বাচন কমিশন তখন বিধিমালার ১৯ (৩) উপবিধি অনুসারে মেয়র, কাউন্সিল ও সংরক্ষিত আসনের জন্য প্রতীকের নতুন তালিকা প্রণয়ন করবে।
প্রতীক বরাদ্দে সতর্কতার বিষয়ে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত প্রতীকের প্রয়োজন হলে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ইসি সচিবালয়ে তা আগেই জানাতে হবে। অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দের আগে সংরক্ষিত প্রতীক বরাদ্দ শেষ হতে হবে। তার আগে কোনভাবে অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে না। এছাড়া একই প্রতীকের জন্য একের অধিক দাবিদার থাকলে পছন্দ বা লটারি আশ্রয় নিতে হবে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি প্রতীক হলো- কমলালেবু, ক্রিকেট ব্যাট, চরকা, টেবিল ঘড়ি, টেলিস্কোপ, ডিশ অ্যান্টেনা, দিয়াশলাই, ফ্লাস্ক, বাস, ময়ূর, হাতি ও ইলিশ মাছ।
সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি প্রতীক হল- কেতলি, গ্লাস, পানপাতা, পিঞ্জর, টিস্যু বক্স, বৈয়ম, মূলা, মোড়া, শিল পাটা ও স্টিল আলমারি।
সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি প্রতীক হলো- কাঁটা চামচ, মিষ্টি কুমড়া, এয়ারকন্ডিশনার, করাত, ঘুড়ি, টিফিন ক্যারিয়ার, ট্রাক্টর, ঠেলাগাড়ি, ঝুড়ি, ব্যাডমিন্টন র্যাকেট, রেডিও এবং লাটিম।
সব ধরনের নির্বাচনের জন্য আলাদা প্রতীক সংরক্ষণ বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘প্রতীক দেখেই যেন বোঝা যায় কোন নির্বাচন হচ্ছে। সে জন্যই সব নির্বাচনের জন্য আলাদা আলাদা প্রতীক সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এক নির্বাচনের প্রতীক অন্য নির্বাচনে ব্যবহার হলে বিভ্রান্তিরও সৃষ্টি হয়।’