সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন বলেই নির্বাচনী প্রচারকাজে অংশ নিতে তার আইনগত বাধা নেই। অন্যদিকে দলের প্রার্থী ও নেতাদের নামে মামলা থাকায় তাদের অনেকেই মাঠে নামার সাহস পাচ্ছেন না। এ প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া প্রচারাভিযানে নামলে গা ঢাকা দেওয়া নেতাকর্মীরাও শামিল হবেন তার সঙ্গে। আগামী ৭ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারকাজ শুরু করতে পারেন তিনি। আন্দোলনের গতি বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিএনপিপ্রধান এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজিত করে সিটি নির্বাচনের জয় ঘরে তুলতে চান বিএনপি নেত্রী। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ উপলক্ষে কয়েকটি বড় সমাবেশেও অংশ নেবেন তিনি। এদিকে পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে ঢাকায় বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘বাসযোগ্য ঢাকা চাই’ বা ‘বাসযোগ্য ঢাকা আন্দোলন’ নামে প্ল্যাটফরম গঠন করা হচ্ছে। আজ পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা প্রথমে নিজেরা বসে ও পরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করে প্ল্যাটফরমের এ নামটি চূড়ান্ত করবেন। দল ও জোটের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্ল্যাটফরম নির্বাচন পরিচালনা করবে। দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনায় আমরাও প্রচারাভিযানে অংশ নেব।এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলেছে, রোববার আদালতে হাজিরা দিতে পারেন খালেদা জিয়া। এর পর তিনি নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেন। গত ৩ জানুয়ারি থেকে পুলিশ ওই কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে রেখেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তালা খুলে কার্যালয়ে বসবেন। সেখান থেকে নির্বাচনী প্রচারকাজে নামবেন বলেও নেতারা জানান।গত ৩ জানুয়ারি থেকেই নিজের গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি নেত্রী।
৫ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা করে কার্যালয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। প্রথমদিকে কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখলেও ১৯ জানুয়ারি প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বের হননি। এর মধ্যে কয়েক দফা আদালতের হাজিরা থেকেও বিরত রয়েছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। রোববার আদালতে গেলে এটা হবে দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময় পর তার ওই কার্যালয় থেকে বেরোনোর ঘটনা।
জানা গেছে, ‘ঝিমিয়ে পড়া’ আন্দোলন চাঙ্গা করতে সিটি নির্বাচনের প্রচার মিছিলের সুযোগ কাজে লাগাতে চান খালেদা জিয়া। তিনি নিজে রাস্তায় নেমে রাজধানীতে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের ‘পুনরায়’ সংগঠিত করার পরিকল্পনা করেছেন। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও তার কিছু দিন পর থেকে চলা লাগাতার হরতালের মধ্যে নেতাকর্মীরা এ পর্যন্ত ঢাকার রাজপথে নামতে পারেননি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে আত্মগোপনে থেকেই অবরোধ-হরতাল ‘পালন’ করছেন ঢাকায় অবস্থানকারী সিনিয়র নেতারা। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার মিছিল করা যাবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনী মিছিলের সঙ্গে সরকারবিরোধী প্রচারকাজও চালাতে চান বিএনপি হাইকমান্ড। সিটি নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলন এক ধাপ এগিয়ে রাখতেই এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক নেতা জানান।
নেতারা জানান, ঢাকা উত্তরে মিন্টুর আপিলের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। ঢাকা দক্ষিণে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকেই সমর্থন দেওয়া হতে পারে দল থেকে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমাদানকারী নেতাদের মধ্য থেকে ‘উপযুক্ত’ প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। উচ্চ পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর দল সমর্থিত নেতাদের তালিকা চূড়ান্ত করার পরই প্রার্থীদের সমর্থনে মিছিলসহ প্রচারকাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে কবে, কোন প্রার্থীর সমর্থনে কোন এলাকায় মিছিল বের করা হবে তার একটি ছকও তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত করার কাজও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ঢাকা উত্তর সিটিতে নির্বাচনী প্রচারকাজের সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ কাইয়ুম, এসএ খালেক ও মহানগর বিএনপির সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার। এ ছাড়া মহানগর দক্ষিণের প্রচারকাজের তত্ত্বাবধান করবেন কেন্দ্রীয় অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ, কাজী আবুল বাশার ও মহানগর বিএনপির সদস্য নবীউল্লাহ নবী। সূত্র- সমকাল।