জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এসময় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাকে।
ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অবস্থিত তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার রবিবার সকাল ১১ টায় এ জামিন মঞ্জুর করেন।
একই সঙ্গে মামলা দুটির পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ৫ মে নির্ধারণ করেন।
বিচারক জামিনের আদেশে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁকে কারাগারে দেওয়া আদালতের উদ্দেশ্য নয়। তিনি ন্যায়বিচার পান, এটাই আদালতের প্রত্যাশা। তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হলো। তিনি আগে যেভাবে জামিনে ছিলেন, এখনো সেভাবে জামিনে থাকবেন।’
এর আগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় জানিনের শুনানিতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার এ জে মোহাম্মদ আলী।
জামিন শুনানিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আদালতকে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদারতে হাজির হতে পারেননি। আজ (রবিবার) তিনি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে আদালতে জামিন আবেদন করেছেন। তাই সবদিক বিবেচনা করে তার জামিন মঞ্জুর কারতে আদালতকে অনুরোধ করছি।’
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া একজন সম্মানী ব্যক্তি। তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। তাই তিনি জামিন পেতে পারেন।’
মামলার বাকি দুই আসামি মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকেও বিচারক জামিন দিয়েছেন।
খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশের পর আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করে তার জন্য নির্ধারিত আসনে বসার অনুমতি চান। আদালত তাকে আসনে বসার অনুমতি দেন।
এর আগে দুটি দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিতে আজ রোববার সকাল ১০টা ৩৪ মিনিটে ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পৌঁছান বিএনপির চেয়ারপারসন। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তিনি তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হন, যেখানে তিনি গত ৩ জানুয়ারি থেকে অবস্থান করছিলেন। এর মাধ্যমে টানা ৯২ দিন পর নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হলের বিএনপির নেত্রী।
খালেদা জিয়ার গাড়িতে তার সঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ছিলেন।
খালেদা জিয়ার চারপাশ ঘিরে রেখেছেন তাঁর আইনজীবী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক প্রহরায় আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রোববার সকাল থেকে বকশিবাজারে ডা. ফজলে রাব্বি হলের সামনে থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। আদালতের আশেপাশের বহুতল ভবনেও অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। আদালতের আশেপাশের দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশেষ জজ আদালতের ভেতরে পুলিশের পাশাপাশি অবস্থান নিয়েছে র্যাব, বিজিবি ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবাহিনী ‘সিএসএফ’-এর সদস্যরা। গণমাধ্যমকর্মী, আইনজীবী সহ সকলকে তল্লাশি করে বিশেষ আদালতের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিন (৫ জানুয়ারি) ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবসের কর্মসূচি ঘোষণার পর গত ৩ জানুয়ারি গুলশানের কার্যালয়ে গেলে সেখানে ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারি কার্যালয় থেকে বের হতে চেয়ে পুলিশি বাধায় কার্যালয়ের ভেতর থেকেই সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন বিএনপির চেয়ারপারসন। ছোট ছেলের মৃত্যুসহ শত প্রতিকূল পরিবেশেও তিনি কার্যালয় ছাড়েননি।
এরই মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সর্বশেষ গত ৪ মার্চ খালেদার পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করে ৫ এপ্রিল শুনানির দিন ঠিক করে দেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে দুদক খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর মামলাটি করে দুদক। এ মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
এরপর অনেকবার মামলার শুনানির তারিখ পিছিয়ে ইতিমধ্যে ছয় বছর পার হয়েছে। গত ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য গ্রহণও পিছিয়েছে কয়েক দফা। কয়েক মাস ধরে আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।