মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি আজ সোমবার রাতেই কার্যকর হতে পারে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রস্তুতি দেখে তেমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক দিয়ে মই দুটি ঢোকানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় এই মই বেয়ে গলায় দড়ি পরানো হয়।
এছাড়া বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে কফিন, শামিয়ানা ও সাদা কাপড় কারাগারের ভেতরে নিতে দেখা গেছে।
সূত্র জানায়, কারাগারের ভেতরে ফাঁসি কার্যকরের সকল প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কফিন সহ লাশ বহনকারী এম্বুলেন্সও ভেতরে নেওয়া হয়েছে। তবে কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য এখনো গনমাধ্যমে দেয়নি।
ইতিমধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য এনে জড়ো করা হয়েছে। সেখানে সাদাপোশাকের পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরাও নজরদারি করছেন। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন।
ফাঁসির দণ্ডাদেশের বিপরীতে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন সোমবার খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তার ফাঁসির আদেশও বহাল রাখেন আদালত।
কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজ করে দেওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদনের জন্য সাত দিন সময় পাবেন কামারুজ্জামান। আর যদি প্রাণভিক্ষা না চান তবে কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরে ব্যবস্থা নেবে।’
তবে সোমবার দুপুরে কামারুজ্জামানের ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, ‘দুপুর ১টায় ডেপুটি জেলার তাঁদের ফোন করে বলেছিলেন যে, তাঁরা (পরিবার) চাইলে বিকেল ৫টার মধ্যে বাবার সাথে দেখা করতে পারেন। আমরা এখন বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।‘
এ বিষয়ে ডেপুটি জেলার বলেন, ‘আমরা রায়ের কপি হাতে পেয়েছি। এখন আমাদের কাজ হলো এটি বাস্তবায়ন করা। আমরা কামারুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করব, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না? যদি চান, তাহলে সাত দিনের মধ্যে তাকে প্রাণভিক্ষা চাইতে হবে। আর যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চান, তাহলে নিয়মানুযায়ী আমরা তার ফাঁসির প্রস্তুতি গ্রহণ করব। সে জন্য তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করতে বলেছি।’
কামারুজ্জামানের প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে তার স্ত্রী নুরুন্নাহারের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, কামারুজ্জামান তাদের আগেই জানিয়েছেন যে, তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন না।
এদিকে, সোমবার দুপুরে শিশির মনিরের নেতৃত্বাধীন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা তার সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সেই অনুমোদন দেয়নি।
সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, সেটি জানার জন্যই কারা কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করছে এবং সে জন্যই কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়ে সাক্ষাৎ করতে বলা হয়েছে। কামারুজ্জামান যদি প্রাণভিক্ষা না চান, তাহলে হয়তো আজ রাতেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে।
কিভাবে হবে
মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর করতে প্রস্তুত কারা কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগে বেশ কিছু নিয়মকানুন পালন করা হবে।
জানা যায়, সুপ্রীমকোর্টের রিভিউ আদেশের শর্টকপি অথবা পূর্ণাঙ্গ কপির লিখিত ট্রাইব্যুনাল হয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হবে। এরপর সেটি কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনানো হবে। এমনকি রায়ের কপি দেখানোও হতে পারে। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, আপনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা? জবাবে তিনি ‘হ্যাঁ’ বললে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। আর যদি ‘না’ বলেন তবে সেই মুহূর্ত থেকে ফাঁসি কার্যকরের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করবে কারা কর্তৃপক্ষ।
কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইলে তিনি আইনজীবীদের সাক্ষাতের অনুমতি চাইতে পারেন। সে সুযোগ দেওয়া হবে তাকে। আইন অনুয়ায়ী কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা সাক্ষাৎ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। আর না চাইলে সেই অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের শেষবারের মতো সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হবে। পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাৎ করে চলে যাওয়ার পর কামারুজ্জামানের ক্ষণ গণনা শুরু হবে।
নিয়ম অনুযায়ী কামারুজ্জামানকে ফাঁসির মঞ্চে তোলার আগে গোসল করানো হবে। এরপর একজন মাওলানার মাধ্যমে তওবা পড়ানো হবে। দুই রাকাত নফল নামাজ শেষবারের মতো পড়ে নিতে পারবেন তিনি। নামাজ শেষে তার কোনো শেষ ইচ্ছে আছে কি না তা জেনে নেওয়া হবে। এরপর তাকে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। ফাঁসির মঞ্চে নেওয়ার পর আসামির মাথায় পরানো হবে একটি কালো টুপি। এই টুপিটিকে বলা হয় ‘যমটুপি।’
ফাঁসির মঞ্চে তোলার পর কামারুজ্জামানের দুই হাত পেছন দিকে বাঁধা হবে। এ সময় ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত থাকবেন কারা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ম্যাজিস্ট্রেট একটি লাল রুমাল হাত থেকে ফেলবেন। সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদগন ফাঁসি কার্যকর করবেন।
এর আগেই ফাঁসির মঞ্চে প্রস্তুত থাকবেন শাহজাহান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি জল্লাদ টিম। মঞ্চে তোলার পর কামারুজ্জামানকে পরানো হবে ফাঁসির দড়ি। এরপর সেই দড়িতে কিছুক্ষণ ঝুলিয়ে রাখা হবে। পরে সেখান থেকে নামিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে মৃত্যু নিশ্চিত হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে কারাগার থেকে কামারুজ্জামানের লাশ বের করা হবে। সবশেষ তাকে পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী জামালপুরের গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।