মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) খারিজের কপিতে এখনো সই করেননি বিচারকরা। তবে আগামীকাল সাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে, এমনটায় জানালেন সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।
যার ফলে ফাঁসির রায় কার্যকরের আজ আর কোন সম্ভাবনা থাকছে না।
এর আগে বিকেল ৫টার দিকে সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জানিয়েছিলেন, ‘কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজ করে দেওয়া আদেশের কপি বিচারপতিদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রার কার্যালয়েও আসেনি।’
এদিকে রায়ের কপি হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী। রায়ের কপি পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে সোমবার বিকেল সোয়া ৫টায় উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। ‘অফিস সময় শেষ হওয়ার পরও এ কপি এসে পৌঁছতে পারে’ বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
ফরমান আলী বলেন, ‘কপি পাওয়ার পর কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হবে। তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাহলে সেই প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। আর ক্ষমা প্রার্থনা না করলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’
ক্ষমা না চাইলে কি আজ (সোমবার) ফাঁসি কার্যকর করা হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জেল সুপার বলেন, ‘সেটা এখনই বলতে চাচ্ছি না, পরে বলব।’
কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেন কারাগারে ডাকা হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিয়মের আওতায় তাদের ডাকা হয়েছে। সাধারণত বিকেল ৫টার পর কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয় না। এ কারণে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের ৫টার মধ্যে আসতে বলা হয়েছে। তারা এখনো আসেননি। আসবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
কারাগারে পৌঁছেছে কামারুজ্জামানের পরিবার
এদিকে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। বড় ছেলে হাসান ইকবালের নেতৃত্বে পরিবারের ১০/১২ জন সদস্য আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ৩২ মিনিটে কারাগারের সামনে পৌঁছান।
এর আগে আজ সোমবার দুপুরে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর পরিবারকে চিঠি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে তাঁদের কারাগারে যেতে বলা হয়। কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল এ কথা জানান।
তবে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েও পাননি তাঁর আইনজীবীরা। দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলন আইনজীবী শিশির মনির এ কথা জানান।
প্রস্তুতি
এদিকে কামারুজ্জামানের ফাঁসি আজ সোমবার রাতেই কার্যকর হতে পারে, এমন সম্ভাবনা নিয়েই সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগারের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে দুটি মই ও কিছু বাঁশ ঢোকানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় এই মই বেয়ে গলায় দড়ি পরানো হয় এবং বাঁশ গুলো শামিয়ানা ও ফাঁসির মঞ্চ ঘেরার কাজে ব্যবহার করা হবে ।
আজ সোমবার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে ধূসর রঙের অ্যাম্বুলেন্সে করে একটি কফিন কারাগারে ঢোকানো হয়। অ্যাম্বুলেন্সে কাফনের কাপড় ও শামিয়ানা ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য এনে জড়ো করা হয়েছে। সেখানে সাদাপোশাকের পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্যরাও নজরদারি করছেন। আশপাশের বিভিন্ন ভবনের ছাদে পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন। কারাগারের সাম্নের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
রিভিউয়ের আবেদন খারিজ
আজ সকালে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনায়ও (রিভিউ) বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ। সোমবার সকালে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন তারা।
বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন— বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল মামলার চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনটি দাখিল করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। মোট ৭০৫ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বাতিল ও তার খালাস চান আসামিপক্ষ।
১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির একই বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করেন। এরপর ১৯ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ তিন বিচারপতি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। অন্য দুই বিচারপতি হচ্ছেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।
এরপর ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মুস্তাফিজুর রহমান মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আইজিপি (প্রিজন) বরাবরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠান। পরে কারাগারে কামারুজ্জামানকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর গত বছরের ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।