আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে আইটিইউর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়েছি।”
সোমবার এই ভোটাভুটি হয়। নির্বাচনে ১৬৭ ভোটের মধ্যে বাংলাদেশ পায় ১১৫ ভোট।
এ অঞ্চল থেকে ২০১৫ - ২০১৮ এই চার বছরের জন্য নির্বাচিত ১৩ কাউন্সিল সদস্যের মধ্যে ভোটের দিক দিয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
১৮টি প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারি দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, লেবানন, ইরান ও বাহরাইন পরাজিত হয়েছে।
সম্মেলন উপলক্ষে বুসানে অবস্থানরত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “এই জয়ের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেল। আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি সংস্থায় আমরা আমাদের অবস্থান করে নিতে পারলাম।”
কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এ অঞ্চলে আইটিইউর নীতিনির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন পলক।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর আইটিইউ এর সভায় বাংলাদেশের পক্ষে ভোট চেয়ে পলক বলেন, “টেলিকম ও প্রযুক্তি খাতের অভিজ্ঞতা ও অর্জন সমূহ আমরা বিশ্বব্যাপী ভাগাভাগি করার মাধ্যমে একটি প্রযুক্তিময় বিশ্ব গড়তে চাই।”
বাংলাদেশের ভবিষ্যত কর্মপন্থা হিসেবে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের ৩৫ শতাংশ জনগণকে ব্রডব্যান্ড ও ৭০ শতাংশ জনগণকে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথাও সভায় তুলে ধরেন তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ ভূখণ্ড ও ৯৯ শতাংশ জনগণ টেলিকম নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত। এ দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১.৬ কোটি; ইন্টারনেট ব্যবহার করেন চার কোটি মানুষ।
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার এই চেষ্টার স্বীকৃতি হিসাবে আইটিইউ থেকে উইসিস (ডব্লিউএসআইএস) অ্যাওয়ার্ড এবং উইটসা (ডব্লিউআইটিএসএ) অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কথাও তিনি সভায় তুলে ধরেন।
এর আগে ২০১০ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো আইটিইউর কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। তারও আগে ১৯৭৩ সালে পায় সাধারণ সদস্যপদ।
আন্তর্জাতিক ফোরামে পর পর বেশ কয়েকটি বড় বিজয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক বলে মনে করসেন বিসেশজ্ঞরা। অতি সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সমুদ্র জয়, প্রধানমন্ত্রী ও তার কন্যার গুরুত্বপূর্ণ দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদ, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) চেয়ারপার্সন, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট এবং সর্বশেষ সোমবার আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার (আইটিইউ) কাউন্সিল সদস্যসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফোরামের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশ। এসব ফোরামের অধিকাংশ নির্বাচনে অনেক শক্তিশালী দেশকেই বড় ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করেছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ অক্টোবর বোস্টনে ব্যাংকিং খাত নিয়ে এক সম্মেলনে মূল বক্তব্যে বাংলাদেশে প্রযুক্তি গ্রহণের প্রবণতার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বিল গেটস।