যৌথ ঘোষণায় অর্থনৈতিকভাবে দুটি দেশের এগিয়ে চলায় পারস্পরিক সহযোগিতার কথা বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুজনই বললেন, বাণিজ্য, নৌ, বাস চলাচলসহ যেসব চুক্তি হয়েছে, তা শুধু দুটি দেশেরই নয় আঞ্চলিক যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ৬৮ বছরের স্থল সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বলিষ্ঠ ভূমিকার প্রশংসা করেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘শাপলা’ হলে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা জানান, দুদেশের মধ্যে ৭টি যৌথ প্রকল্পের ফলক উন্মোচন, ২২টি চুক্তি ও এমওইউ সই হয়েছে। বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে ভারত।
যৌথ ঘোষণার সব অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দিতে সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থনের নিশ্চয়তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কানেকটিভিটি শুধু দুদেশের জন্যই নয়, অঞ্চলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের দলিল বিনিময়ের ফলে ৬৮ বছরের মানবিক সমস্যা সমাধান হওয়ায় আমরা আনন্দিত।’ তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়েই এতদাঞ্চলের জনগণের জন্য আমরা আনতে পারবো একটি বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা। চুক্তিগুলোতে যে নতুন বিষয়গুলো সন্নিবেশিত হয়েছে তার মাধ্যমে বাণিজ্য বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তিনি তাঁর ঢাকা সফরকালে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
বক্তব্যের শুরুতেই ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের যুগের মহান নেতা’ বলে উল্লেখ করেন মোদি। এরপর তিনি বলেন, ‘আজ আমরা দুটি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেছি। এটা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ সম্পর্কের নতুন দিগন্ত সূচনা করবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা কেবল প্রতিবেশীই নই। আমরা ভাতৃপ্রতীম দুটি রাষ্ট্র যারা শিল্প, সংস্কৃতি ও মানসিকতার দিক থেকে এক অপরের সাথে সম্পৃক্ত। দুই দেশের সম্পর্কের ফলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে দুই দেশই লাভবান হবে।’
মোদি বলেন, ‘আমরা কেবল স্থলসীমান্তই নয়, আমরা জলসীমা নিয়েও ঐক্যমতে পৌঁছেছি। এটাই প্রমাণ করে আমাদের দুই দেশের সম্পর্কের দৃঢ়তা।’ তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সহযোগিতায় তিস্তা ও ফেনী নদী নিয়ে চলমান সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।’
এর আগে বিকাল ৪টার দিকে মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা। বৈঠক চলে পৌণে ৬টা পর্যন্ত। বৈঠকের আগে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের প্রটোকল স্বাক্ষর এবং সম্মতিপত্র বিনিময় করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর এ স্বাক্ষর করেন। এ দলিল বিনিময়ের ফলে চার দশক আগের মুজিব-ইন্দিরা স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হলো।
এদিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে হোটেল র্যাডিসনে ফিরে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
শনিবার বিকাল পৌণে ৪টার দিকে বৈঠকে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত হন নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে স্বাগত জানান।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ভারতের বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইট ‘রাজদূত’-এ হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
বিমানবন্দরে পৌঁছালে ফুলেল শুভেচ্ছায় তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যরা। এসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টারমিনালে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও বিশেষ গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
বিমানবন্দর থেকে সরাসরি জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
সেখান থেকে তিনি আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখেন তিনি। তাকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখান বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহেনার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক ববি।