বাংলাদেশে ৩৪ ঘণ্টার সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বহু-প্রতীক্ষিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ রবিবার বিকালে। বৈঠকটি শুরু হয় বিকাল ৪ টা ১০ মিনিটে। চলে প্রায় ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। এর মধ্যে খালেদা জিয়া ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকটি প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী ছিল বলে জানিয়েছেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। বৈঠকের পর এ খবর প্রচার হলে গণমাধ্যকর্মীদের একটি প্রশ্নই বারবার উঠে আসে- কী ছিল ওই বৈঠকে? কী কথা হয়েছিল দুজনের মধ্যে।
উত্তর খুঁজতে বৈঠকের প্রতিনিধি দলের সদস্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে, খুব নিম্নকণ্ঠে তিনি বলেন, রাজনৈতিক আলাপ হয়েছে। অনেকটা চুপিসারে বিএনপির চেয়ারপারসনের বহরের একটি গাড়িতে দ্রুত ওঠে পড়েন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এরপর বৈঠকের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান জানান, খালেদা জিয়া ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি ১০মিনিটের বেশি সময় ছিল। যদিও বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
তবে বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একটি শরিক দলের মহাসচিব বলেন, ‘কিছু নয়, একান্ত বৈঠকের খবরটি হতাশার মাঝে বেঁচে থাকার জন্য কল্পনা।’
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সফররত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রেস্ট্রিকটেড বৈঠক হলেও ‘ওয়ান টু ওয়ান’ বৈঠক হয়নি। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মোদির একান্ত বৈঠকের বিষয়টি আলোচনার খোরাক জোগাবে বলে মন্তব্য এক বিএনপি নেতার।
মোদির সঙ্গে রওশনের ২৫ মিনিট:
খালেদা জিয়ার কিছুক্ষণ আগে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অবস্থান করা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। তিনি জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার প্রতিনিধি দলের ২৫ মিনিট বৈঠক হয়।
সাংবাদিকদের বলেন, অনেক কথা হলো। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। আমাদের সীমান্ত সমস্যা অনেক দিন ধরে ছিল, সেটা হয়েছে। এখন তিস্তা নিয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ করা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে।
রওশন জানান, তিস্তা চুক্তি নিয়ে মোদি আশ্বস্ত করেছেন, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে। দুই দেশ এক সঙ্গে বসে আলোচনা করলে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব বলেও জানান মোদি।
এরপর রওশন এরশাদ চলে যাওয়ার পর বৈঠকে অংশ নেওয়া জাপা নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এলে মোদি নোয়াখালীতে গান্ধী আশ্রমে যাওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। সূত্র- বাংলাট্রিবিউন
ওয়াকার্স পার্টি-জাসদ একসঙ্গে ১৮-২০ মিনিট:
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগ পায় ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়াকার্স পার্টি ও জাসদ। পার্টির সভাপতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে জানান, যে মোদির সঙ্গে ওয়াকার্স পার্টি ও জাসদের ১৮ মিনিটের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের নদী, সীমান্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়।
এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে। সীমান্ত চুক্তি, জঙ্গিবাদ, পানি সমস্যা, সাম্প্রদায়িকতা মোকাবেলায় দুদেশসহ আশেপাশে দেশগুলো কীভাবে কাজ করতে পারে, এ বিষয়ও উঠে এসেছিল আলোচনায়।
তথমন্ত্রী জানান, তিস্তা চুক্তি বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক মনোভাবনা দেখিয়েছেন। তবে রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু দুজনেই বৈঠকে রাজনৈতিক কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানান।
এছাড়া নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও বৈঠক করেন। রবিবার সন্ধ্যার পর রাজধানীতে একটি সম্মাননা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উড়োজাহাজ ‘রাজদূত’ এ চড়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এসময় বিমানবন্দরে ভিভিআইপি টার্মিনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বিদায় জানান।