জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামালের ৬৬তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট তিনি তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বিএ অনার্স পাস করেন।
তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে যথোচিত ভূমিকা পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতি-বিজড়িত ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবন আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন শেখ কামাল।
তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন্ড লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর শেখ কামাল সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করেন।
বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি অঙ্গনের শিক্ষার অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি।
স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি প্রথম সারির সংগঠক ছিলেন। বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’’।
শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তার।
তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শহীদ শেখ কামাল বাংলাদেশে নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মান উন্নয়নে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করতেন।
১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে জাতির জনকের হত্যাকারী মানবতার ঘৃণ্য শত্রুদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনি শাহাদাত বরণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণের সময় বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে এমএ শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
শেখ কামালের ৬৬তম জন্মবার্ষিকীকে যথাযোগ্যভাবে পালনের জন্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সকাল ৯টায় ধানমণ্ডির আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ শেখ কামালের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ যুবলীগ কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বিকাল ৪টায় আবাহনী ক্লাব চত্বরে আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠীর উদ্যোগে হবে আলোচনা সভা। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্রীড়া ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।