রবিবার ইডেন গার্ডেন্সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ড্যারেন স্যামির হাতে উঠলে কি নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন মার্ক নিকোলাস। সেটা জানা মুশকিল কিন্তু শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক যে বার্তা দিয়ে গেলেন, তাতে ওয়াংখেড়ের মতো ইডেন গার্ডেন্সের রাত ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসো ঝঙ্কারে আরও একবার মুখরিত হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।
এদিন স্যামি যা বললেন তা মুটোমুটি এই রকম, এটি তাদের অনেক জবাবের ম্যাচ। তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আমাদের সাফল্য দেখে সাধারণ মানুষের মনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আমরা শুধু অর্থের টানেই ক্রিকেট খেলি। অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডও তেমনটাই মনে করে। কিন্তু সেই ভিত্তিহীন অপবাদ আমাদের একজোট করে দিয়েছে। বিভ্রান্তি দূর করার সেরা সময় কিন্তু এবার এসে গিয়েছে।’
তার পরেই বিস্ফোরণ! প্রাক্তন ইংল্যান্ড ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার মার্ক নিকোলাস সম্প্রতি কলামে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘বুদ্ধিহীন মানুষ।’ স্যামি বলেন, ‘একজন মানুষকে কী করে বুদ্ধিহীন বলা যেতে পারে? সমস্ত প্রাণীরই মস্তিষ্ক রয়েছে। আমরা কেউ জড় পদার্থ নই। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই মন্তব্য একেবারেই মানতে পারিনি। চার বছর আগে যে দলটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তাদের সম্পর্কে ওই ভদ্রলোকের অবিবেচকের মতো এমন উক্তি শুধু অপ্রাসঙ্গিকই নয়। একইসঙ্গে অর্থহীন।’
বোঝাই যাচ্ছে ফাইনালের আগে তেতে রয়েছে ক্যারিবিয়ান শিবির। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ম্যাচ ছিল ইল্যান্ডের বিপক্ষে। ১৬ মার্চ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যেখানে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছির ক্যারিবিয়ানরা। ওইদিন ৪৮ বলে ১১ ছক্কা ও ৫ চারে ১০০ রানে অপরাজিত ছিলেন ক্রিস গেইল। আগে ব্যাট করা ইংল্যান্ডের ১৮২ রানও নস্যি ছিল গেইল ঝড়ের কারণে।
এরপর নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ফাইনালে ওই দুটি দল। আজ ইডেনের প্রথম জয়ের ধারাবাহিকতায় হাঁটবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নাকি দারুণ প্রতিশোধ নিয়ে শিরোপায় চুমু খাবে ইংল্যান্ড, তা সময়ই বলে দেবে। ওহ রবিবার তো শুধু একটি নয় দুটো ফাইনাল। মেয়েদের বিশ্বকাপ ফাইনালে অসিদের মখোমুখি হবে কারিবিয়ান প্রমীলারা!
কেনসিংটন ওভালে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম শিরোপা ঘরে তুলেছিলো ইংল্যান্ড। ঠিক এর পরের আসরে ২০১২ সালে কলম্বোয় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৬ রানের জয় নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজও প্রথম টি-টোয়েন্টি শিরোপার দেখা পায়। আজ দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে নামবে দুই দল।
তবে এ ম্যাচে কিছুটা এগিয়ে ক্যারিবিয়ানরা। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে উইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি বলেন, ‘ফাইনালে আমাদের হারাতে হলে ইংল্যান্ডকে অবশ্যই আমাদের গেইল, স্যামুয়েলস, সিমন্স ও আন্দ্রে রাসেলকে আটকাতে হবে। কেননা ওরা একবার সীমানার বাইরে বল পাঠানো শুরু করলে সেটা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ওদের বিধ্বংষী ব্যাটিংই আমাদের দলকে দিন শেষে জয় এনে দিয়েছে, সেটা আপনারা দেখেছেন। এই ম্যাচেও আশা করছি ওদের এমন পারফরমেন্স অব্যাহত থাকবে।’
পিছিয়ে নেই ইংলিশরাও। কেননা, ক্যারিবীয়দের মতো বিশ্বকাপের এবারের আসরে তারাও কম যায়নি। শেষ দশে নিজেদের চার ম্যাচে একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া কারও বিপক্ষেই হারেনি ইয়ন মর্গানরা। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে দলটির অধিনায়ক ইয়ন মর্গান বললেন, ‘আমাদের সেরা খেলাটি খেলেই সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মতো দাপুটে দলকে হারিয়ে ফাইনালে এসেছি। এবার আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল জয়। দলের সবার ফিটনেস লেভেল এখনও পর্যন্ত সন্তোষজনক। ইনজুরির সমস্যা একেবারেই নেই। আশা করছি সবাই এদিন তাদের সেরা খেলাটিই খেলতে পারবে।’
তবে ফাইনালের আগে পরিসংখ্যানের বিচারে যোজন যোজন এগিয়ে থাকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এই দুটি দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ১৩ বার। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় নয়টিতে। এর মধ্যে তিনটিতেই জয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বেশী হারের রেকর্ড এটি। উৎস- বাংলা ট্রিবিউন