ওই ছবিটির কথা আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়ই। ছবির মৃতপ্রায় ওই শিশুটিকে নাইজেরিয়ার রাস্তা থেকে তুলে এনেছিলেন ত্রাণকর্মী আনজা রিংগ্রেন লোভান। তার মুখে একটুখানি পানি তুলে দিয়ে তিনি তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। তার আদর যত্নে এখন সে পুরোই বদলে গেছে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই এই সেই কঙ্কালসার শিশুটি।
কয়েক মাস আগের ঘটনা। দুই বছরের শিশুটিকে ‘দুষ্ট আত্মা’ বলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন তার বাবা মা। এরপর দীর্ঘ আট মাস ধরে রাস্তাতেই পড়েছিল সে। খাবার নাই, পানি নাই। গায়ে একটুকরো কাপড় পর্যন্ত নেই। অনাহারে মরতে বসেছিল ছোট্ট শিশুটি। গত ৩০ জানুয়ারি তাকে দেখতে পান ত্রাণকর্মী আনজা লোভান। তিনি পিপাসায় কাতর বাচ্চাটির মুখে তুলে দেন খানিকটা জল। শিশুটিকে জল পান করানোর ছবিটি তখন গোটা বিশ্বের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ঝড় তুলেছিল। এরপর উলঙ্গ শিশুটিকে একটা কম্বলে পেচিয়ে কোলে তুলে নেন আনজা। চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করান স্থানীয় এক হাসপাতালে। তার নাম দেন ‘হোপ’ বা আশা।
এদিকে ওই ছবির কল্যাণে মাত্র দু দিনেই ১০৬,৭১২ ইউরো অর্থ সাহায্য পেয়েছিল ‘আফ্রিকান চিলড্রেনস এইড ইডুকেশন এন্ড ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ নামের ত্রাণ সংস্থাটি। এর প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন আনজা। এ সংস্থাটি আফ্রিকার দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সহায়তা করে থাকে। তারা এসব শিশুদের খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। এছাড়া তার স্বামী ডেভিড এমানুয়েল উমেমের সঙ্গে মিলে জানুয়ারি থেকে একটি এতিমখানার কাজও শুরু করেছেন আনজা।
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর হোপের দায়িত্ব তুলে নেয় আনজার সংস্থাটি। মাত্র দু মাসেই তার স্বাস্থ্য ফিরেছে। এখন সে স্বাস্থ্যবান হাসিখুশী এক শিশু। ওই হাড্ডিসার উলঙ্গ শিশুটির সঙ্গে এখনকার হোপকে আপনি কিছুতেই মিলাতে পারবেন না। যদি আগের ঘটনাটি বা ছবিটি না দেখে থাকেন। ছবির ওই দুজন যে একই শিশু এই সত্যটি বিশ্বাস করতে চাইবেন না আপনার মত অনেকেই। বিশ্বাস করন আর না করুন, এর নাম ভালোবাসা, এর নামই আদর। দু মাসের আদর যত্ন দু বছরের শিশুর গোটা জীবনটাকেই বদলে দিয়েছে।
তবে স্বাস্থ্য ফিরে পেলেও হোপের একটা জন্মগত রোগ আছে। এটি সারিয়ে তুলতে আগামী সপ্তাহে তার পুরুষাঙ্গে অস্ত্রেপচার করতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে ওঠবে বলে নিজের ফেসবুকে উল্লেখ করেছেন আনজা।
হোপকে উদ্ধারের পর আনজা তার সংস্থার ওয়েবসাইটে লিখেছেন,‘নাইজেরিয়ায় গত তিন বছরে আমি বহু কিছু দেখেছি। এখানকার বাব-মায়েরা ডাইনি বা অশুভ আত্মা বলে হাজার হাজার শিশুকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। ওই পরিবারগুলো এসব শিশুদের ওপর চালায় নানা অকথ্য অত্যাচার। তাদের অকথ্য অত্যাচারের কারণে বহু শিশু তো মারাও যায়।’ এসব শিশুদের রক্ষার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন আনজা। এটিই তার নিজস্ব লড়াই। এসব শিশুদের জন্য যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত আনজা। উৎস- বাংলা মেইল