ধীরে ধীরে রাজধানীর রাজপথ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে হলদে সোডিয়াম বাতি। এর বদলে নগরীতে সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই জ্বলে উঠছে উজ্জ্বল ডিজিটাল এলইডি বাতি। আর এরই মধ্য দিয়ে সোডিয়াম আলোর যুগ থেকে রাজধানী ঢাকা প্রবেশ করছে আধুনিক এলইডি বাতির যুগে। মূলত আধুনিক আলোক-উজ্জ্বল ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ও সড়কবাতি ব্যবহার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় দুই সিটি করপোরেশন ঢাকায় লাইট ইমিটিং ডায়োড (এলইডি) সড়কবাতি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে রাতের বেলা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন সড়ক এলইডি বাতির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুরের বিভিন্ন সড়ক, কারওয়ান বাজার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও হানিফ ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন এলাকায় এলইডি বাতি লাগানো হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে নগরীর অন্যান্য এলাকাগুলোয়ও এলইডি বাতি লাগানো হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রায় ৬০ ভাগ এলাকা এরই মধ্যে এলইডি বাতির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।
ডিএসসিসির বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এলাকাভুক্ত সড়কগুলোতে পর্যায়ক্রমে এলইডি সড়কবাতি লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড সড়কে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি সড়কবাতির জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে। এই প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ ছাড়া ডিএসসিসির আওতায় রাজধানীর ভিআইপি সড়কগুলোতে এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পের আওতায় চীন থেকে এলইডি বাতি আনা হয়। জানা যায়, এসব ডিজিটাল বাতির স্থায়িত্বকাল সোডিয়াম বাতির তুলনায় ১০ গুণ বেশি। প্রতিটি ডিজিটাল বাতির মধ্যে থাকা ডিভাইস সংযোগ নগর ভবনে স্থাপিত। যা দিয়ে এসব বাতি অন/অফ ও বাতির উজ্জ্ব্বলতা বাড়ানো এবং কমানো যাবে।
এরই মধ্যে দক্ষিণ সিটি এলাকায় আড়াই হাজারের বেশি এলইডি বাতি লাগানো হয়েছে। আরও চার হাজার চাইনিজ এলইডি বাতি লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে দক্ষিণে ৩৭ হাজার এলইডি বাতি লাগানোর পরিকল্পনা আছে বলে জানান দক্ষিণ সিটির মেয়র।
পর্যায়ক্রমে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের কদম ফোয়ারা থেকে কাকরাইল মসজিদ হয়ে রূপসী বাংলা মোড়, জিরো পয়েন্ট থেকে কার্জন হল, ফকিরাপুল থেকে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে রাজউক ভবন, বঙ্গভবনের সামনের সড়ক, বিজয়নগর থেকে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে গোলাপ শাহ মাজার, কাকরাইল ক্রসিং থেকে ফকিরাপুল হয়ে আরামবাগ পুলিশ বক্স, গুলিস্তান থেকে ইংলিশ রোড হয়ে সদরঘাট, দক্ষিণ সায়েদাবাদ ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকায় এলইডি বাতি লাগানো হবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এলইডি সড়কবাতির ফলে রাতে নির্দিষ্ট এলাকার রাস্তাগুলো আগের চেয়ে বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। এলাকাবাসীও এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সিসিটিভি ফুটেজে ধারণকৃত অপরাধীদের ছবি স্পষ্টভাবে দেখতে পারবে।
তারা আরও জানান, সোডিয়াম বাতির দাম বেশি, এর স্থায়িত্বও কম এবং এতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়।
তবে প্রচলিত এলইডি বাতির ক্ষতিকর দিক আছে এমন উল্লেখ করে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ইউরোপিয়ান এলইডি বাতি কেনার পরিকল্পনা নিয়েছেন। এ জন্য ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দও রেখেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। চলতি বছর উত্তরের ৫০ ভাগ রাস্তায় এলইডি বাতি লাগানো হবে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, বাজেট স্বল্পতার কারণে তারা অর্থ সাশ্রয়ের চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে সড়কে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাতি লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানীর মিরপুর এলাকার পল্লবী সাড়ে এগারো বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০ নম্বর এলাকায় এলইডি লাইট লাগানো হয়েছে। এতে এই এলাকায় রাতে আগের চেয়ে অপরাধ দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে গেছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা দাবি করেন। উৎস- বিডি প্রতিদিন