নিজামীর রায় ঘোষণার খবর শাহবাগে এসে পৌঁছালে সেখানে আনন্দের বন্যা বইয়ে যায়। তাঁরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন ও উল্লাস প্রকাশ করেন।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা টেলিভিশনে ট্রাইব্যুনালের খবর দেখছিলেন। টিভি স্ক্রলে নিজামীর ফাঁসির সংবাদ দেখানো মাত্র সেখানে উচ্ছ্বসিত ব্যক্তিদের চিৎকার শুরু হয়। নেতা-কর্মীরা মিছিলের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের দুই অংশ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয়। তারা বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় জাসদ ছাত্রলীগ ও অপরাজেয় বাংলাদেশ নামে দুটি সংগঠন আলাদা ব্যানার নিয়ে নিজামীর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে।
শাহবাগ থেকে প্রথম আনন্দ মিছিল বের করে গণজাগরণ মঞ্চের কামাল পাশা চৌধুরী সমর্থক অংশটি। দুই অংশের মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়া মহাজোট সরকারের ছাত্র সংগঠন ও ‘শাহবাগ আন্দোলনের’ নেতা-কর্মীরা এই অংশের মিছিলে যোগ দেন।এর আগে নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শাহবাগে অবস্থান নেয় ডা. ইমরানের নেতৃতে গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের কর্মীরা।
মুক্তিযুদ্ধকালে যার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল, সেই মতিউর রহমান নিজামীকে ফাঁসির রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের অভিযোগগুলোর জন্য নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এবার অবিলম্বে রায় কার্যকর করতে হবে।’
এসময় তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাঈদীর রিভিউ পিটিশনের রায় অবিলম্বে ঘোষণা করার দাবি জানান।
এছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারে যে ধীর গতি চলছিল নিজামীর ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে তাতে গতি ফিরবে বলে মনে করেন তিনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারে যে ধীর গতি চলছিল নিজামীর ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে তাতে গতি ফিরবে। সরকারের প্রতি জনগণের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল তা কিছুটা হলেও দূর হবে।’
ইমরান আরো বলেন, “সব যুদ্ধাপরাধীর রায় দ্রুত ঘোষণা করে সরকারকে প্রমাণ করতে হবে তারা বিচারের ব্যাপারে আন্তরিক।”
কামাল পাশা চৌধুরীর অংশটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে শাহবাগে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সেখানে কামাল পাশা ট্রাইব্যুনালকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা কাগুজে রায় দেখেছি, আমরা আর কাগুজে রায় দেখতে চাই না। বাস্তব রায় চাই। কাগজে-কলমে ফাঁসি চাই না, বাস্তবে ফাঁসি চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, নিজামীকে লটকে দেওয়া হয়েছে। কাগুজে রায় দেওয়ার পরে গোলাম আযম স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছে। সাঈদী আর নিজামীর বেলায় আমরা সে কাগুজে রায় দেখতে চাই না।’
এ সময় মধুর ক্যানটিন থেকে ছাত্রলীগের একটি মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে শাহবাগের দিকে আসে। শাহবাগ মোড় থেকে ঘুরে চারুকলার সামনে সমাবেশ করে তাঁরা। এ সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ বক্তব্য দেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির রায় ঘোষণায় শাহবাগে আনন্দ মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চের দুই অংশ ও ছাত্রলীগ।