কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায়, অসুস্থ গরু থেকে সাবধান

ছবি: সংগ্রহীতআসন্ন ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য দেশে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে। সরকারের হিসাবে, এবারে চাহিদার তুলনায় পশুর সংখ্যা বেশি। তবে এত পশুর ভিড়েও কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায় নিয়ে অনেকেই চিন্তিত।

কোরবানির ঈদের সময় দেশে সবচেয়ে বেশি পশু বিক্রি হয়, এরমধ্যে সিংহভাগই গরু ও ছাগল। বিরাট এই বাণিজ্যের সুযোগ কাজে লাগাতে উঠেপড়ে লাগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। বেশি লাভের আশায় কৃত্রিম উপায়ে স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করে তারা।

অল্প সময়ে বেশি মুনাফার আশা পশু মোটাতাজা করতে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ইনজেকশন ও রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, যা হার্ট ও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অসুস্থ পশুর মাংস খেলে শরীরে মারাত্মক ব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। তাই পশু বিশেষ করে গরু কেনার সময় মাথায় রাখতে হবে যে, মোটা মানেই কিন্তু সুস্থ নয়।

কোরবানির জন্য সুস্থ পশু চেনা যদিও কঠিন, তবে সামান্য খোঁজ রাখলেই অসুস্থ পশু চিহ্নিত করা যায় খুব সহজে।এক্ষেত্রে কোরবানির গরু কেনার সময় অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে রাখলে খুব ভালো হয়।

পশুর বয়সও গুরুত্বপূর্ণ

আবার কোরবানির গরুর জন্য বয়স খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রেও ক্রেতাদের অনেক সময় প্রতারিত করেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই বিভ্রান্তি এড়াতে দাঁত দেখে বয়স নির্ধারণের চেষ্টা করেন। তবে অভিজ্ঞ কেউ সঙ্গে থাকলে খুব ভালো হয়।

কোরবানির গরুর বয়স হতে হবে কমপক্ষে দুই বছর। সাধারণত এটা দাঁত দেখে এটা বুঝতে করেন অনেকেই। দুই দাঁত হলেই ধরা হয় বয়স হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও হতে পারে। ছাগল কোরবানির জন্য কমপক্ষে এক বছর বয়স হতে হবে। আর উটের বয়স হতে হবে কমপক্ষে পাঁচ বছর।

কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায়

কোরবানির সুস্থ গরু চেনার উপায় নিয়ে সরকারের প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে বেশকিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলো মাথায় রাখলে এক নজরে সুস্থ গরু চেনা সম্ভব। কোরবানির পশু কেনার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:

পশু সর্বদাই লেজ নাড়িয়ে মশা-মাছি তাড়াতে ব্যস্ত থাকবে ও কিছুক্ষণ পর পর নড়াচড়া করবে।

খাবার দিলে তা স্বাভাবিকভাবে খাবে ও অবসর সময়ে জাবর কাটবে।

চোখ বড় ও উজ্জ্বল দেখাবে।

নাকের নিচের কালো অংশ (মাজল) ভেজা ভেজা থাকবে, মনে হবে যেন ফোঁটা ফোঁটা শিশির জমেছে।

সুস্থ গরুর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।

শ্বাসপ্রশ্বাস থাকবে স্বাভাবিক, অস্বস্তিতে ছটফট করবে না।

গরু-মহিষের ক্ষেত্রে বয়স দুই বছরের বেশি এবং ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি হতে হবে।

সম্ভব হলে পশুর প্রস্রাব ও গোবর স্বাভাবিক কি না তা যাচাই করতে হবে।

গর্ভবতী পশু কোরবানি দেওয়া যায় না। তাই কেনার আগে সেটা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।

সুস্থ পশুর পিঠের কুঁজ মোটা ও টান টান হয়, তাই এটি দেখে নিতে হবে।

সুস্থ গরুর গায়ের রং চকচকে থাকবে, কুঁজ মোটা থাকবে, চামড়া টানটান থাকবে এবং চামড়ায় কোনো দাগ থাকবে না।

সুস্থ গরুর গায়ে স্পর্শ করলে সে স্থানে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে।

কোরবানির অসুস্থ গরু চেনার উপায়

কীভাবে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা অথবা অসুস্থ গরু চেনা যায় তা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম।

ডেক্সামেথাসন, ওরাডেক্সন, প্রেডনিসোলন জাতীয় ওষুধ সেবন করিয়ে অথবা ডেকাসন, ওরাডেক্সন স্টেরয়েড জাতীয় ইনজেকশন দিয়ে গরুকে মোটাতাজা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের হরমোন যেমন ট্রেনবোলন, প্রোজেস্টিন, টেস্টোস্টেরন প্রয়োগ করেও গরুকে মোটাতাজা করা হয়।

কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা অসুস্থ গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে পানি জমে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। মূত্রনালি, যকৃতসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোরবানির হাটে গিয়ে কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা অথবা অসুস্থ পশু চেনার উপায় নিয়ে বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এসবের মধ্যে রয়েছে:

কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু ঘন ঘন শ্বাস নিবে। একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাবে। সর্বদা ক্লান্ত দেখাবে।

গরুর দেহ থলথলে থাকবে এবং দেহে পানির পরিমাণ বেশি দেখা যাবে।

গরুর গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস দেবে যাবে এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে।

এসব গরুর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি থাকবে।

কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু খাবার খেতে চাইবে না বরং ক্ষুধামন্দার লক্ষণ দেখা দিবে। নিয়মিত জাবর কাটবে না।

অসুস্থ গরুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়তে থাকে এবং এই লালা ফেনাযুক্তও হতে পারে অথবা ফেনা ছাড়াও হতে পারে।

ইনজেকশন দেয়ায় গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর রানের মাংসের চেয়ে অনেক নরম থাকে।

অসুস্থ গরুর নাকের উপরের অংশ বা মাজেল শুষ্ক থাকবে।

বেশি পানি জমার কারণে গরু সহজে হাঁটতে চায় না এবং এক জায়গায় বসে থাকে।

কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরুর হাড় খুবই নরম থাকবে। কোনো কারণে যদি দুর্ঘটনাবশত গরুটি পড়ে যায়, তাহলে তার হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সবসময় দেশীয় জাতের গরু কেনার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক সময় সীমান্ত পার হয়ে আসা গরুগুলো অনেক দূর থেকে আসে বলে ক্লান্ত হয়। সেগুলো ছোটোখাটো আঘাতপ্রাপ্তও হয়। আর দুর্বল গরু সুস্থ নাকি অসুস্থ সেটা বোঝা বেশ কষ্টকর।

পশু কেনার আগে এর শরীরের কোথাও ক্ষত আছে কিনা পরীক্ষা করে নিতে হবে। শিং ভাঙা আছে কিনা, লেজ, মুখ, দাঁত, খুর এসব কিছুই পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, কোনো ত্রুটি চোখে পড়ে কিনা। এসব কিছু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে খুব সহজেই সুস্থ পশু কেনা অনেক সহজ হবে।


কৃষি বিভাগের আরো খবর...
সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে  হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসা উচিত: প্রধানমন্ত্রী সরকারি চাকরিতে কোটা ইস্যুতে হাইকোর্ট থেকে সমাধান আসা উচিত: প্রধানমন্ত্রী
আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেল বাংলাদেশ আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তি পেল বাংলাদেশ
ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম
গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা
আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ
জুনেই ঢাকায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি জুনেই ঢাকায় আসতে পারেন নরেন্দ্র মোদি

কোরবানির সুস্থ পশু চেনার উপায়, অসুস্থ গরু থেকে সাবধান
(সংবাদটি ভালো লাগলে কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।)
tweet