গলায় সোনালী জরির কাজ করা লাল উত্তরীয়। গায়ে সোনালী পাঞ্জাবি। বর বেশে অতিথি ঘেরা মঞ্চে বসে আছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। আজ তার গায়ে হলুদ।
“নির্ধারিত বয়সে বিয়ে করলে যা হতো (যে উৎসাহ থাকত), আগে থেকে এখন দ্বিগুণ উৎসাহ পাচ্ছি। প্রতিদিন আমাকে ফোনে ভক্ত ও কর্মীরা উৎসাহ দিচ্ছে। দেশের মানুষ, দলীয় নেতা-কর্মী, ব্যবসায়ী, সুধীসমাজ ও সাংবাদিকেরা এ বিয়ে নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা প্রকাশ করছে। প্রতিদিন সকলের কাছ থেকে উৎসাহ পাই। সকলের ভালোবাসা ও স্নেহের নিদর্শনস্বরূপ এ গায়েহলুদ।”
নিজের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক।
আজ বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়ি কৃষি ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে রেলপথমন্ত্রীর গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হয়। একই স্থানে কনে হনুফা আক্তার ওরফে রিক্তারও গায়েহলুদ হয়।
অনুষ্ঠানে সরকারদলীয় সাংসদ, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, দলীয় নেতা-কর্মী, মন্ত্রী ও কনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বললেন, “আমি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে গতকালও দোয়া নিয়ে এসেছি। তিনি আমাকে দোয়া করেছেন যাতে বিয়ের সব অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে হয়।”
“আমার নেত্রী দোয়া করার পর দলীয় নেতারা সবাই খুশি, দেশবাসীও খুশি, এর কারণ দেশের মানুষ আমাকে স্নেহ ও মমতা করে।”
হলুদ অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা হবু স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে একসঙ্গে করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের পরিবার ও রিক্তাদের পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একসঙ্গে হলুদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।”
“রিক্তা এসেছে তার পরিবার নিয়ে একটি মঞ্চে বসেছে, আমি আমার আত্মীয় স্বজন নিয়ে আরেকটি মঞ্চে বসেছি।”
এর আগে বুধবার দুপুর ১টায় অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন বর। কনেও ততক্ষণে চলে এসেছেন। পরনে হলুদ শাড়ি আর ফুলের গহনা।
বর-কনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে আলাদা মঞ্চ। বর ও কনের নাম লিখে বড় আকারের দুইটি কেকও ছিল মঞ্চের সামনে। আয়োজন করা হয়েছে প্রায় ৫০০ জনের দুপুরের খাবার।
জমজমাট এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য মুরগি, পোলাও, খাসির মাংস, চটপটি ও মিষ্টির ব্যবস্থা ছিল।
মন্ত্রীর গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে গান-বাজনারও আয়োজন করা হয়। এতে গান পরিবেশন করেন আরেফিন রুমী।
এদিকে সারা জীবন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পাশে থাকবেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার নববধূ হনুফা আক্তার রিক্তা। এসময় তিনি দেশবাসীর দোয়া চান।
রেলমন্ত্রীর নিজের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। আর পাত্রী হনুফা আক্তার রিক্তা কুমিল্লার চান্দিনার মেয়ে।
সেতুবন্ধনে কোনো ঘটক বা মধ্যস্থতাকারী ছিল কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেছিলেন, পাত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় বছর তিনেক আগে। সেই সূত্রেই বিয়ে।
এদিকে আগামী শুক্রবার দুপুরে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক ৫০০ জন বরযাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মীরাখলা গ্রামে যাবেন। সেখানে বিয়ে সম্পন্ন হবে। এ উপলক্ষে কনের বাড়ি সাজানো হচ্ছে। সেখানে নতুন করে সড়ক ও ঘর মেরামত করা হয়েছে। এ বিয়ে দেখার জন্য আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা মুখিয়ে আছেন।
শুক্রবার বিয়ের পর নববধূকে নিয়ে মন্ত্রী ঢাকার বেইলি রোডের মন্ত্রীপাড়ার বাসভবনে যাবেন বলে জানা গেছে।
বিয়ের পর আগামী ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনের ২ নম্বর এলইডি হলে আয়োজন করা হয়েছে বিবাহত্তোর সংবর্ধনার।
এতে মন্ত্রী-এমপিসহ সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও রাজনৈতিক দলের নেতারা শরিক হবেন এই অনুস্থানে।
এছাড়াও ১৬ নভেম্বর কুমিল্লায় নিজের এলাকায় আলাদাভাবে বধূ বরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৯৪৭ সালের ৩১ মে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বসুয়ারা গ্রামে জন্ম বর মো. মুজিবুল হকের। ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে তিনি চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা-১১) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া মুজিবুল হক ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি রেলপথমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে ১৯৮৫ সালের ২০ মে হনুফা আক্তার ওরফে রিক্তা জন্মগ্রহণ করেন। ২০০১ সালে গল্লাই আবেদা নূর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে রিক্তা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে এলএলবি পাস করেন। বর্তমানে তিনি হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ লিমিটেডের আইন উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন।
মন্ত্রীর গায়ে হলুদের কিছু ছবি