এই অপমান আর সহ্য হচ্ছে না সিয়েরা লিওন জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক জন ট্রাইয়ের। হোক না তাঁর দেশ ইবোলা মহামারিতে আক্রান্ত, তাই বলে মানুষের আচরণ এমন হবে কেন? বিদেশের মাটিতে খেলতে গেছেন, কোথায় সাদরে-অতিথি বরণ হবে, সুযোগ-সুবিধার সর্বোচ্চটা পাবেন, তা না, ইবোলার কারণে সবাই এড়িয়ে চলছে তাঁদের।
অপমানের চূড়ান্তটা দেখেছেন ক্যামেরুনে আফ্রিকান কাপ অব নেশনসের বাছাই ম্যাচ খেলতে গিয়ে। হোটেলে কেলেঙ্কারি তো হয়েছেই, মাঠেও খেলা শেষে ক্যামেরুনের খেলোয়াড়েরা নাকি তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন!
গত মে মাসে সিয়েরা লিওনে ইবোলা ভাইরাসের ভয়ংকর রূপ ধরা পড়ে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ইতিমধ্যেই দেশটিতে মহামারির আকার ধারণ করেছে। সিয়েরা লিওন জাতীয় দল ইবোলার কারণেই দেশের মাটিতে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিদেশে খেলতে গিয়েও তাঁদের এমন অপমানের পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে, যা মনুষ্যত্বকেই লজ্জায় ফেলে দেয়।
এবার শুনুন ক্যামেরুনে সিয়েরা লিওনকে কী অবস্থায় পড়তে হয়েছে। বিমানবন্দরে ইবোলা-পরীক্ষা থাকতেই পারে, কিন্তু সেটা এমন অবমাননাকর হবে কেন? সিয়েরা লিওনের খেলোয়াড়দের সঙ্গে নাকি এমন আচরণ করা হয়েছে যেন বন্য প্রাণীদের ইবোলার পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। হোটেলে পৌঁছেও চিত্তির। সিয়েরা লিওন জাতীয় দল হোটেলে উঠবে শুনে নাকি অতিথিরা রীতিমতো হইচই জুড়ে দিয়েছিলেন। সিয়েরা লিওন দল থাকলে কোনোমতেই সেই হোটেলে তাঁরা থাকবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন অতিথিরা। পরে সিয়েরা লিওন দলকে এমন একটা হোটেলে ওঠানো হয়, যেখানে তাঁরা ছাড়া আর কোনো অতিথি ছিল না। হোটেলের বয়-বেয়ারারাও নাকি সিয়েরা লিওন দলের সঙ্গে যা-তা ব্যবহার করেছেন।
গোলরক্ষক জন ট্রাই এসব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘নিজেদের মানুষ বলেই মনে হচ্ছে না। এমন অপমান মানুষ মানুষকে করতে পারে! নিজেদের কেমন যেন জঞ্জালের মতো অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছে।’
রাইয়ের মতে, অপমানের ব্যাপারটা একেবারেই নজিরবিহীন, ‘দেখুন কেউই চান না তাঁদের দেশ ইবোলায় আক্রান্ত হোক। সিয়েরা লিওন এই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে, আমাদের দেশ এটার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এখন ইবোলা মানেই সিয়েরা লিওন আর সিয়েরা লিওন মানেই যদি ইবোলা হয়, তাহলে তো দুঃখের সীমা থাকে না। সবাই এমন ভাব করছে যেন আমরা ব্যাগে করে বা শরীরে ইবোলা ভাইরাস বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। সুযোগ পেলেই তা ছড়িয়ে দেব অন্যের মাঝে।’
বল সিয়েরা লিওন দল নয়, ইবোলা ভাইরাসের সঙ্গে সারা দুনিয়াতেই গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে কালো জনগোষ্ঠীকে। ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের দেখা হচ্ছে সন্দেহের দৃষ্টিতে। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের কলম্বাস ক্রু দলের সিয়েরা লিওন ফুটবলার কেই কামারা বলেছেন, অন্য খেলোয়াড়েরা নাকি তাঁর সঙ্গে মেশাও কমিয়ে দিয়েছেন। দিনে তিন-চারবার করে ইবোলার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। আমাদের জীবন ইতিমধ্যেই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।’ সূত্র: বিবিসি।