সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে খুলনা টেস্টে দারুণ এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। শতকের পাশাপাশি ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেট নিয়ে অনন্য এক অলরাউন্ড কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সেরা এই ক্রিকেটার, সেই সাথে নাম লেখালেন ইতিহাসে। এর আগে ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র দুজন খেলোয়াড়, ইমরান খান ও ইয়ান বোথাম এই কীর্তি গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন।
একইসাথে দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারো বহুল আরাধ্য টেষ্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ নিলো টাইগাররা। শুক্রবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে পঞ্চম দিনে ৩১৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সাকিব-তাইজুল-জুবায়ের এই ত্রয়ীর স্পিনের সামনে মাত্র ১৫১ রানেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। এই জয়ের ফলে দীর্ঘ দশ বছর আবারো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।
এরআগে দিনের শুরুতে বাংলাদেশ ৩১৩ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করলে শুরুতেই হোঁচট খায় জিম্বাবুইয়ানরা। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ দলের আক্রমণাত্মক বোলিং এবং সাকিব-তাইজুলের স্পিন সামলাতে হিমশিম খায় জিম্বাবুয়ের ওপেনাররা। ফলে দলীয় ১১ রানে তাইজুলের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান চারি। এরপর দলীয় স্কোরকার্ডে মাত্র ২ রান যোগ করতেই সাকিবের ঘূর্ণিতে মমিনুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন সিকান্দার।
জয়ের জন্য তখনো জিম্বাবুয়ে দলের প্রয়োজন ছিলো আরো ৩০১ রান আর বাংলাদেশের দরকার ছিলো ৮ উইকেট। হাতে ছিলো আর দু’টি সেশন।
এরপর প্রতিরোধে নামেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মাসাকাদজা ও অধিনায়ক টেইলর। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির পর টেইলরকেও ফেরান সাকিব।
এরপর দলের হাল ধরেন চাকাবভা ও মাসাকাদজা। প্রথম ইনিংসের মতো তারা আবারো ইনিংস গড়ার কাজ শুরু করেন। সকালের দিকে পিচ থেকে বাংলাদেশ যে সহায়তা পাচ্ছিলো, সেই পিচটিই এক পর্যায়ে অদ্ভূত আচরণ করতে থাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকবভা-মাসাকাদজা জুটি ভাঙ্গেন জুবায়ের। দলীয় স্কোর তখন ৮৫/৪
আরভিনকে নিয়ে এরপর আবারো পার্টনারশীপ গড়েন মাসাকাদজা। কিন্তু তাদের সে প্রতিরোধ বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি জুবায়ের। চা বিরতির ঠিক আগে স্টাম্পিংয়ের মাধ্যমে তিনি সাজঘরে ফেরান আরভিনকে।
এর কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য এনে দেন সাকিব। ভয়ংকর রুপ ধারণ করা মাসাকদজাকে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন সাকিব । জিম্বাবুয়ে দলের স্কোর তখন ১৩৭/৬। মাসাকাদজা আউট হোন ৬১ রানে।
বাকি ৪ উইকেটের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ওয়ালার ও মুশাংগাকে দ্রুত সাজঘরে ফেরান তাইজুল ও সাকিব। শেষ ব্যাটসম্যান চাতারাকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করা মধ্যদিয়ে শেষ হয় ১৫১ রানেই জিম্বাবুয়ের ইনিংস।
বাংলাদেশ পায় ১৬২ রানের বড় জয়।
দিনের শুরুতে মাহমুদুল্লাহকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের উইকেটের পতন ঘটান মুশাংগে। তবে আউট হবার আগে মাহমুদুল্লাহ তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। তিনি করেন ৭১ রান যেখানে ছিলো ৭ টি চারের সমাহার।
মাহমুদুল্লাহর আউটের কিছুক্ষণ পরই আউট হোন তাইজুল। মাহমুদুল্লাহ ও তাইজুল আউট হলেও শুভাগত তার অর্ধশতকের লক্ষ্যে ধীরগতিতে খেলছিলেন। তাছাড়া জিম্বাবুয়াইনরাও ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে বেশ রক্ষণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে। ফলে বাউন্ডারির জন্য দলের খেলোয়াড়দের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। রান আসছিলো ধীরগতিতে।
শুভাগতকে সঙ্গ দেয়া শাহাদত আউট হোন ৩ রানে। ধীরগতিতে ব্যাটিং করতে থাকা শুভাগত অবশেষে তার ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক তুলে নেন। ১০২ বলের খরচায় তিনি এই অর্ধশতক তুলে নেন যেখানে ছিলো ৪ টি চার। অর্ধশতকের পরপরই শুভাগত আউট হলে দলীয় ২৪৮ রানে বাংলাদেশ দল তাদের ইনিংস ঘোষণা করে। জিম্বাবুয়ের সামনে ছুঁড়ে দেয় ৩১৪ রানের লক্ষ্য।
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হোন সাকিব আল হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৩৩ (সাকিব ১৩৭, তামিম ১০৯, মাহমুদুল্লাহ ৫৬; পানিয়াঙ্গারা ২/৪৯, চাটারা ২/৬১, ওয়ালার ২/৬৫) ও ২৪৮/৯ ডিক্লে. (তামিম ২০, শামসুর ২৩, মুমিনুল ৫৪, মাহমুদুল্লাহ ৭১, সাকিব ৬, মুশফিক ০, শুভাগত ৫০, তাইজুল ১, শাহাদাত ৩, রুবেল ৮*; ওয়ালার ৪/৫৯, মুশাংওয়ে ৪/৮২, পানিয়াঙ্গারা ১/৪৫)
জিম্বাবুয়ে: ৩৬৮ (মাসাকাদজা ১৫৮, চাকাবভা ১০১,; সাকিব ৫/৮০) ও ১৫১ (রাজা ৯, চারি ৪, মাসাকাদজা ৬১, টেইলর ০, চাকাবভা ২৭, আরভিন ২১, চিগুম্বুরা ১২, ওয়ালার ৪, পানিয়াঙ্গারা ৮*, মুশাংওয়ে ০, চাটারা ১; সাকিব ৫/৪৪, তাইজুল ৩/৪৪, জুবায়ের ২/৪২)