প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) ঘাঁটি জহুরুল হককে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেছেন। এ সময় তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিএএফ দেশপ্রেম ও পেশাগত দক্ষতার মাধ্যমে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ডের সম্মান, সুনাম ও গৌরব সমুন্নত রাখবে। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে সুদৃঢ়, শক্তিশালী ও কার্যকর করতে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উন্নয়ন ও এর সদস্যদের কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
আজ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক এর ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের আগেই আমরা বিমান বাহিনীকে আরো আধুনিকায়নের মাধ্যমে শক্তিশালী ও কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।’
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলসহ সমুদ্রসীমার সার্বিক নিরাপত্তার প্রয়োজনে স্বাধীনতার পর স্থাপিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর ঘাঁটিটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন । বিমান বাহিনীকে শক্তিশালীকরণে ও জাতির স্বার্থে এই ঘাঁটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জহুরুল হক বিমান ঘাঁটির প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। গ্রুপ ক্যাপ্টেন সৈয়দ সায়েদুর রহমান কুচকাওয়াজ পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারি, এনডিসি,পিএসসি এবং ঘাঁটির কমান্ডিং অফিসার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর তাকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। কুচকাওয়াজকালে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ন্যাশনাল স্যালুট’ প্রদান করা হয় এবং এ সময় তিনবার ‘চিয়ার আপ’ প্রতিধ্বনিত ও জাতীয় পতাকাবাহী হেলিকপ্টার পাষ্ট পরিচালনা করা হয়।
এ সময় কেবিনেট সদস্য, সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ সেনা ও নৌবাহিনীর প্রধানগণ, সশস্ত্র বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ, আধা সামরিক বাহিনী, কুটনীতিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন,সরকার ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ এর আলোকে বিমান বাহিনীকে একটি যুগোপযোগী ও চৌকস বাহিনীতে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস আধুনিকীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশ ও জাতির উন্নয়ন কর্মকান্ডে আরও সক্রিয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য সেনা ও নৌ বাহিনীর উন্নয়নকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। গত মেয়াদে সেনা ও নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সীমিত সম্পদ দিয়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সুষম উন্নয়ন বাস্তবায়ন করছে।
তিনি আশা করেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের বুকে সমুন্নত রাখবে। বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে তুলে ধরবে।
যে কোন বাহিনীর সদস্যের জন্য পেশাগত দক্ষতা অর্জন আবশ্যকীয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দক্ষতা যেমন একদিকে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় তেমনি সংগঠনের জন্য বয়ে আনে সুনাম ও মর্যাদা।
তিনি দক্ষ ও আদর্শ বিমানসেনা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে বিমান বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এ জন্যে প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ ও কঠোর পরিশ্রম। পাশাপাশি আপনাদের স্মরণে রাখতে হবে, স্বাধীনতার জন্য লক্ষ প্রাণের ত্যাগ ও তিতিক্ষার ইতিহাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উন্নয়নে অবদান রেখেছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান মিগ-২৯ সংযোজন করি। এছাড়া বিমান বাহিনীতে সুপরিসর সি-১৩০ পরিবহণ বিমান এবং উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার স্থাপন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে সরকার বিমান বাহিনীর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
তিনি বলেন, চীন থেকে ১৬টি যুদ্ধবিমান এবং রাশিয়া থেকে ৩টি গর-১৭১ হেলিকপ্টার বিমান বাহিনীতে অর্ন্তভ’ক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কক্সবাজারে একটি বিমান ঘাঁটি স্থাপন করেছে। বিমান বাহিনীর জন্য এই ঘাঁটিতেই প্রথমবারের মতো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে ‘বঙ্গবন্ধু এ্যারোনটিক্যাল সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উদ্ধার ও নিরাপত্তা পরিচালনার জন্য দুটি অত্যাধুনিক মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার অড-১৩৯ অতিশীঘ্রই বিমান বাহিনীতে সংযোজন করা হবে যা এই ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিমান বাহিনীর শিক্ষানবিশ বৈমানিক ও অন্যান্য শিক্ষানবিশ অফিসারদের গবেষণা ও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বিমান বাহিনী একাডেমী, যশোরে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিমান বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বিমান বাহিনীতে নতুন নতুন ইউনিট স্থাপনের ফলে জনবল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, এতে পদোন্নতির পথ সুগম হচ্ছে। বিমান বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বৈমানিকদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কার্যকরভাবে দেশের কাজে লাগানোর জন্য তাঁদের চাকুরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পদবীর সাথে সঙ্গতি রেখে বিমান সেনাদের চাকুরির মেয়াদও পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও এর সকল সদস্যের সুন্দর ভবিষ্যত ও অব্যাহত সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সকলে প্রতি আহ্বান জানান।