নতুন আইন করছে বাংলাদেশ সরকার। বৈবাহিক সূত্রে অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে নতুন এই আইন দ্বারা।
আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত করে শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর ওই খসড়া উপস্থাপন করা হবে আগামী সংক্ষিপ্ত সংসদ অধিবেশনের পরের অধিবেশনে পাসের জন্য।
বর্তমানে ১৯৭২ সালের ‘দ্য বাংলাদেশ সিটিজেনশিপ এবং ১৯৪৬ সালের ‘দ্য ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৪৬’ আইন চালু রয়েছে। তবে এ আইনে কোনো বিদেশির বৈবাহিক সূত্রে এদেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ নেই। নতুন আইন পাসের মধ্য দিয়ে আগের আইন দু’টি রহিত হবে।
ইতোমধ্যে নতুন ‘নাগরিকত্ব আইন, ২০১৪’এর খসড়া প্রস্তুত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নতুন আইনে যারা বৈবাহিক সূত্রে নাগরিক হবেন তাদের প্রত্যেককেই তিন বছর নিরবচ্ছিন্ন বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে। তবে চিকিৎসা, শিক্ষাসহ জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে অবস্থান করলে প্রথম আগমনের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে মোট তিন বছর পূরণ হলে তা নিরবচ্ছিন্ন বলে গণ্য হবে।
যেসব সূত্রে নাগরিকত্ব
এই আইনে জন্ম সূত্রে, বংশ সূত্রে, নিবন্ধন সূত্রে, দেশীয়করণ সূত্রে এবং বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব লাভ করার বিধান রাখা হয়েছে।
জন্ম সূত্রে নাগরিকত্ব
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। যদি তার বাবা-মা এই আইন বলবৎ হওয়ার দিন, আগে বা পরে নাগরিক হন। এছাড়া ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে আইনটি বলবৎ হওয়ার আগে যারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক তারাও এ আইনের আওতায় পড়বেন।
এই আইন বলবৎ হওয়ার দুই বছর বয়স পর্যন্ত কোনো শিশুকে যদি বাংলাদেশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া আর বাবা-মা বাংলাদেশের নাগরিক হন তাহলে ওই শিশু বাংলাদেশের নাগরিক হবে।
বংশ সূত্রে নাগরিক
বাবা বা মায়ের বংশ সূত্র ছাড়াও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে এই আইন বলবৎ হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্য কোনোভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। এই আইন বলবৎ হওয়ার দিন বাবা অথবা মা বংশ সূত্র ছাড়াও অন্য কোনোভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন।
বংশ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হবে না
বাবা অথবা মা বংশ সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও শিশুর জন্মগ্রহণের দুই বছরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি মিশনে জন্ম নিবন্ধন না করানো হলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন না।
কেউ বিদেশে জন্মগ্রহণ করলে সেই দেশের নিয়ম অনুযায়ী জন্ম নিবন্ধন না করালে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হবেন না। জন্মকালে বাবা অথবা মা বাংলাদেশ সরকারের অধীনে প্রেষণ বা লিয়নে চাকরিরত না থাকলে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশের নাগরিক হবে না।
সামরিক, আধাসামরিক বা বিশেষ বাহিনীতে যোগদান করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে ওই ব্যক্তিও বাংলাদেশের নাগরিক বিবেচিত হবেন না।
বাংলাদেশের স্বীকৃত নয় এমন কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে বা বাংলাদেশের অস্তিত্ব অস্বীকার করলে সেই ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক থাকবেন না।
বৈবাহিক সূত্রে নাগরিকত্ব
বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ কোনো ব্যক্তি নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন।
তবে অনূর্ধ্ব তিন বছর বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বসবাস করতে হবে। ওই তিন বছরের মধ্যে চিকিৎসা, শিক্ষা অথবা জরুরি প্রয়োজনে বাংলাদেশের বাইরে গেলে ওই সাময়িক অবস্থানকাল পরবর্তীতে তাকে বাংলাদেশে অবস্থান করে প্রথম আগমনের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বছর পূর্ণ করতে হবে। এ সময় নিরবচ্ছিন্ন বসবাসের আওতাধীন বলে গণ্য হবে।
সার্কভুক্ত দেশের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব মিলবে না
প্রবাসে অর্জিত নাগরিকত্বের কারণে অর্জিত নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে না। প্রয়োজনে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। যা দ্বৈত নাগরিকত্ব হিসেবে গণ্য হবে।
বাংলাদেশের কোনো নাগরিক মায়ানমার বা সার্কভুক্ত কোনো দেশ ছাড়া অন্য কোনে দেশের সরকারের গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা নাগরিকত্ব নিলে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাবেন। তবে বিদেশে নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় বাংলাদেশের আনুগত্য প্রত্যাহার করলে নাগরিকত্ব পাবেন না।
দেশীয়করণ সূত্রে নাগরিক
সরকার নির্ধারিত পদ্ধতিতে কোনো সাবালক বা সামর্থ্য ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘দ্য ন্যচারাইলেজেশন অ্যাক্ট, ১৯২৬’ এর অধীনে দেশীয়করণের মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিক হবেন। এক্ষেত্রে ওই আবেদনকারীকে বাংলাদেশের বসবাসকারী হতে হবে।
এছাড়া আবেদনকারী ব্যক্তি বাংলাদেশের বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্পকর্ম, সাহিত্য, শান্তি, মানব উন্নয়ন ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলে, দেশীয়করণ ছাড়াই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত হতে পারবেন।
নিবন্ধন সূত্রে নাগরিক
এই আইনে যিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধিত হবেন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তবে নিবন্ধন ইস্যু ততক্ষণ হবে না, যতক্ষণ না শপথ গ্রহণ, ঘোষণা না করেন বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর না করেন।
স্থায়ী নিবাস সনদ
বিদেশি কোনো ব্যক্তি এক বছর নিরবচ্ছিন্ন বাংলাদেশে বসবাস করলে এবং সরকার সন্তুষ্ট হলে নির্ধারিত আবেদনের মাধ্যমে স্থায়ী নিবাস সনদ পাবেন।
নাগরিকত্ব পরিত্যাগ
কোনো সাবালক ও সামর্থ্য নাগরিক কোনো হলফনামা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করলে ওই ব্যক্তির নাগরিকত্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
নাগরিকত্বের অবসান
নিন্ধন সূত্রে বা দেশীয় সকল সূত্রে অর্জিত নাগরিকত্ব নেওয়ার পর যদি তথ্য গোপন, মিথ্যা তথ্য প্রদান করা হলে সরকারি আদেশ দ্বারা তার নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে।
কোনো কাজে বা আচরণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বা সংবিধানের প্রতি অনুগত্যহীনতা প্রকাশ করেন বা আদালতে রাষ্ট্রের অপরাধ সাধনে দোষী প্রমাণিত হন তাহলে তার নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে।
বাংলাদেশ যুদ্ধে লিপ্ত থাকার অবস্থায় কোনো ব্যক্তি শত্রুর সঙ্গে ব্যবসার মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে যোগাযোগ করেছেন বা করছেন বা ব্যবসায় লিপ্ত আছেন বা যুদ্ধে শত্রুকে জ্ঞাতসারে সাহায্য করছেন এমন প্রমাণ হলে তার নাগরিকত্ব বাতিল হবে।
নিবন্ধন বা দেশীয়করণের পর পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো দেশে দুই বছরের মধ্যে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে তার নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে।
নিবন্ধন বা দেশীয়করণের ১০ বছরের বেশি সময় বিদেশে অবস্থান করলে অর্জিত নাগরিকত্বের অবসান ঘটবে।
কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্বের অবসান ঘটলে ৩০ দিনের মধ্যে তিনি নাগরিকত্ব পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন।