দেশের শীর্ষ স্থানীয় চার মোবাইল ফোন অপারেটরে (গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও সিটিসেল) ৩হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর। বাংলাদেশ ব্যাংক শীর্ষ ৫০ ঋণগ্রহিতার তালিকা করেছে। ওই তালিকা থেকে জানা গেছে, দেশী-বিদেশী ২৫টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪ মোবাইল কোম্পানিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে।
শীর্ষ ৫০ ঋণগ্রহীতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সিটিসেল রয়েছে অষ্টম অবস্থানে। ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি। ৭৪৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে এয়ারটেল ২৯তম স্থানে, ৬৭৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বাংলালিংক ৩৫তম ও ৫২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গ্রামীণফোন ৪৯তম অবস্থানে রয়েছে।
ব্যাংকিং খাত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ঋণগ্রহীতার তালিকা থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।
প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (সিটিসেল) দেশের প্রথম মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সময়ে এ প্রতিষ্ঠান ২০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঋণ শ্রেণীকৃত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সিটিসেলের গৃহীত ঋণের মধ্যে এবি ব্যাংকের ১৪০ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৬১ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ১০৪ কোটি টাকা, সিটি ব্যাংকের ১৭০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংকের ১১১ কোটি ও আইএফআইসি ব্যাংকের ১৩২ কোটি টাকা রয়েছে। যার মধ্যে ঢাকা ব্যাংকের ১২ কোটি ও সিটি ব্যাংকের ৫৬ লাখ টাকা শ্রেণীকৃত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংকের ৩২ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংকের ১৭ কোটি টাকা ও ইন্টারন্যাশানাল লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সের দেওয়া ১১ কোটি টাকার ঋণের পুরাটাই শ্রেণীকৃত হয়ে পড়েছে। ফলে এই অর্থ আদায় নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে সিটিসেলের মিডিয়া বিভাগের প্রধান মোসাদ্দেক মিলন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ব্যাংক ঋণের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমার কাজ বিজ্ঞাপন নিয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ ৫০ ঋণ গ্রহীতার তালিকায় এয়ারটেলের অবস্থান ২৯তম। প্রতিষ্ঠানটির ৭৪৪ কোটি ঋণের বেশিরভাগই অর্থায়ন করেছে তিন বিদেশী ব্যাংক । সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে এইচএসবিসি- ৩৫৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া সিটি ব্যাংক ১১৭ কোটি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ৩৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংক ১৭৪ কোটি ও ওয়ান ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
এই বিষয়ে জানতে এয়ারটেলের মার্কেটিং এ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের স্পেশালিস্ট মোহাম্মদ সাজ্জাদ মাহমুদের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সুমিত মাহবুব সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
অন্যদিকে সুমিত মাহবুব সাহাবুদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
৬৭৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শীর্ষ ঋণ গ্রহীতার তালিকায় ৩৫তম অবস্থানে রয়েছে বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিতে বড় অঙ্কের অর্থায়নকারী ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক ১০০ কোটি, পূবালী ব্যাংক ১০৫ কোটি, সিটি ব্যাংক ৮০ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ৬৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকা করে ঋণ রয়েছে।
এই বিষয়ে জনসংযোগ ও কমিউনিকেশন সিনিয়র ম্যানেজার সাজ্জাদ এস. হোসেন বলেন, এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না।
গ্রামীণফোনের ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৫২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ১৮০ কোটি, ইউসিবিএল ২৩১ কোটি, আল আরাফা ২৯ কোটি, কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন ৬৫ কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ১৪ কোটি টাকা।
এই বিষয়ে গ্রামীণফোনের জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র স্পেশালিস্ট এমডি মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকের কাছে ঋণের বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। তাকে কোন ব্যাংক থেকে কি পরিমাণ ঋণ নিয়েছে গ্রামীণফোন তা জানানো হয়। এরপর তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার পক্ষে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। সূত্র: রিপোর্ট২৪