ঢাকাঃ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকা প্রায় আড়াই লাখ পদে নিয়োগ দ্রুত শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪১২টি সরকারি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে গত এক বছরের ব্যবধানে অনুমোদিত সরকারি পদের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ ৬০ হাজার ৯৯৩।
গত ২১ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণের নির্দেশ দেন। এর পরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ ব্যাপারে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শূন্য পদের সর্বশেষ তালিকা এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে।
বেশিরভাগ নিয়োগ চলতি অর্থবছরেই সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য আসছে বড় ধরনের সুখবর।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে প্রথম শ্রেণির ১২ হাজার ৬৯৬টি শূন্য পদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৬৭টি সহকারী সচিব পদমর্যাদার। শীঘ্রই প্রথম শ্রেণির প্রায় দুই হাজার পদে নিয়োগ দেয়া হবে। ৩৫তম বিসিএসের দরখাস্ত ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি শূন্য পদ রয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়গুলো নিজ উদ্যোগেই এগুলো পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। শূন্য পদের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলেও সহনশীল পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে।’
২১ অক্টোবরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেয়া এক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বৈঠকে ১০ হাজারের বেশি শূন্য পদ থাকা সাতটি মন্ত্রণালয়ের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ সাতটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে মোট শূন্য পদের সংখ্যাই এক লাখ ৩১ হাজার ৬৩৪।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, এসব নিয়োগ যেন ন্যায়ভিত্তিক ও প্রতিযোগিতামূলক হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অথর্বছরে (২০১৩-১৪) অনুমোদিত এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি পদের মধ্যে বেশিরভাগই নতুন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুমোদিত পদ ছিল ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৩। গত অর্থবছরে অনুমোদিত পদ বাড়ছে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং পদের সংখ্যা ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৩১৬।
সবচেয়ে বেশি শূন্যপদ সাত মন্ত্রণালয়ে: সবচেয়ে বেশি শূন্য পদ রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। এর সংখ্যা ৩৬ হাজার ১৪৬টি। বেশিরভাগই চিকিৎসক ও নার্স। বতর্মানে স্বাস্থ্য খাতে এক লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৫টি পদ রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২১ হাজার ৮৭০টি পদ শূন্য। বেশিরভাগই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হবে প্রায় ২৪ হাজার। ইতিমধ্যে নয় হাজার শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০ হাজার ৬১২টি পদ শূন্য, এগুলোর বেশিরভাগই পুলিশের। সেখানেও চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ১৫ হাজার ৫২৪টি পদ শূন্য রয়েছে। মামলাজনিত কারণে অনেক নিয়োগ আটকে রয়েছে বলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৩ হাজার ৯১৪টি পদের মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষক। সরকারি কলেজের প্রভাষকের প্রায় তিন হাজার পদ শূন্য। ৩৫তম বিসিএস ও বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকার কলেজগুলোর শূন্য পদ পূরণ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির এক হাজার ৯৬৫টি পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলে আসছে কয়েক বছর ধরে। ২০১৩ সালের জুন মাসে ওই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তার পর থেকে অনিয়মের অভিযোগে ওই নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। অথচ জনবলের অভাবে অধিদপ্তর ও এর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ১২ হাজার ১০৭ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ১১ হাজার ৪৯৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, পাট অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণির পদে ২০ হাজার লোক নিয়োগ করা হবে।
কেএম/প্র/১০১১