ঢাকাঃ ঘোষণা দিয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। সোমবার সকাল থেকে দিনভর রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মোহাম্মদপুরের কলেজগেট, বনানীর কাকলী, বাবুবাজার ব্রিজের ঢাল, গাবতলী ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এ অভিযান চলেছে।
অভিযানে ফিটনেসবিহীন ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি চালানোর অপরাধে ৭৭টি মামলা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া দুই চালককে ১৫ দিন করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া একটি গাড়ি জব্দ ও দুটি গাড়ির কাগজপত্র রেখে দেয়া হয়েছে।
রাজধানীতে বিআরটিএর চার ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান পরিচালনা করেন। বেলা তিনটায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজধানীসহ সারাদেশে যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন এবং বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র।
অভিযানে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, লাইসেন্সবিহীন গাড়িচালক, ভুয়া লাইসেন্সধারী গাড়িচালক, ট্রাফিক আইনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ যানবাহন ও মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলাচলকারী অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বড় কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার পর ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। এর পর গত ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় সোমবার থেকে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান শুরু হয়েছে।
এদিকে ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি ধরতে রাজধানীর তিনটি স্পটে বিআরটিএর বিশেষ ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর পর সড়কগুলো থেকে পালিয়েছে গণপরিবহন। এতে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এদিকে বিচার করার জন্য যেতে রাস্তায় বাস পাননি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরাও।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আদালতের খবর। এতে ত্রুটিপূর্ণ বাস নিয়ে রাস্তায় নামছে না অনেকেই। অনেকেই আবার মাঝ পথে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বাঁক নেয় অন্য পথে, নিরাপদে যেতে। স্ট্যান্ডগুলোতে বাস না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
কারওয়ানবাজারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেবাশীষ নাগ বিশেষ আদালতের অভিযান চালানোর সময় জানান, গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করা হচ্ছে। কোনো ধরনের ত্রুটি পাওয়া গেলে তাত্ক্ষণিক জরিমানা করা হচ্ছে। এক ঘণ্টার মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে গাড়ি ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিআরটিএর তথ্যমতে, দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ২১ লাখ ৫ হাজার ১৪০টি। মোটরসাইকেল বাদে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৩৫টিতে। সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী এসব যানবাহনের মধ্যে ৩৩ শতাংশেরই নেই কোনো ফিটনেস সনদ। ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ১৩ হাজারে।
এর মধ্যে খোদ রাজধানীতেই ফিটনেসবিহীন চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা ৯৩ হাজার ৬০৪টি। এ কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছাড়াও বড় অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এসবের বাইরে সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন শ্রেণির মোটরযান।
অন্যদিকে মোটরযান চালান এমন চালকদের মধ্যে সাড়ে ছয় লাখের নেই কোনো বৈধ লাইসেন্স। এতে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
পাশাপাশি বিআরটিএর রয়েছে জনবল সঙ্কট। ১৩টি ম্যাজিস্ট্রেট পদের বিপরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর জন্যে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন মাত্র তিনজন।
এ বাস্তবতায় দেশব্যাপী এ অভিযান কতটুকু সফলতা আনবে- এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, বিআরটিএ কাজ করে দুইভাবে। একটি সচেতনতা বৃদ্ধি, অন্যটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান।
তিনি বলেন, নাটোরের বড়াইগ্রাম দুর্ঘটনার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ ব্যাপারে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন। সারাদেশে অভিযান চলছে, যা পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।