শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস করে ছাত্রলীগের বদনাম করলে তাদের সহ্য না করতে সংগঠনটির নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস করলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় গণভবনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ পরামর্শ দেন জয়, যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে জয় বলেন, “যারা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস করে ছাত্রলীগের বদনাম করবে কোনো দিন তাদের সহ্য করবা না।
“আমাদের আওয়ামী লীগের যত সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আছে সবাই একসময় ছাত্রলীগ করত। আমার নানাও মেধা দিয়ে, শ্রম দিয়ে দেশের জন্য কাজ করেছেন।
“তোমরাও মেধা দিয়ে, শ্রম দিয়ে, দেশের জন্য কাজ কর… তোমাদের মাঝেই ভবিষ্যৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, তোমাদের মাঝেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের নেতৃত্ব। তোমরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, এটা কোনো দিন ভুলবে না।”
ছাত্রলীগ সম্পর্কে আলোচনায় সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর থেকে ছাত্রলীগে আমরা নির্ধারিত কিছু নিয়ম মেনে চলি। কেউ ছাত্রলীগের সদস্য হতে হলে ছাত্র হতে হবে এবং বয়সের একটা সীমা আছে। বৃদ্ধ বয়সের কেউ ছাত্রলীগে আসতে পারে না।”
“ছাত্রলীগ হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে পুরাতন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। আমাদের দেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন এই ছাত্রলীগই আরম্ভ করেছে।”
নিজের জীবন শিক্ষার কথা তুলে ধরে তরুণ এ তথ্য-প্রযুক্তিবিদ বলেন, “আমি যখন ছোট তখন থেকেই আমাকে, আমার বোনকে, আমার পরিবারকে আমার মা একটি কথা বারবার বলতেন- যেখানেই থাক, যাই করো, তুমি কার নাতি। সেই মহান ব্যক্তি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তুমি তার নাতি।
“এই নামটাকে কোনো দিন বদনাম হতে দেবে না। তুমি কোনো দিন এমন কোনো কাজ করবে না যাতে এই নামের বদনাম হয়। ইনশাল্লাহ আমি এই জীবনে সেরকম কোনো কিছু করি নাই।”
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরও এর প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু নাতি সজীব ওয়াজেদ বলেন, “সেইভাবে আমারও তোমাদের প্রতি একটি অনুরোধ, এই যে আমাদের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, এই সেই ঐতিহাসিক ছাত্রলীগ, তোমরা এমন কিছু করবা না যাতে এই প্রতিষ্ঠানের বদনাম হয়।
“যখন দল ক্ষমতায় থাকে, তখন অনেকেই.. সবাই তখন ছাত্রলীগ- আওয়ামী লীগ হয়ে যায়; নিজেদের লাভের জন্য, দুর্নীতি করার জন্য। আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলতেই থাকে।
“একাত্তরেও সেই ষড়যন্ত্র ছিল। বাস্তব কথা হচ্ছে যে, আমাদের দেশেরই একশ্রেণির মানুষ তারা কোনো দিন বাংলাদেশ চায়নি।”
‘তারা বাঙালি না, তারা পাকিস্তানি এজেন্ট’-মন্তব্য করে জয় বলেন, “আর এখনো তারা আমাদের মাঝে আছে। তারা সেই পাকিস্তানের পক্ষে এখনো কিন্তু আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারা তো কোনো দিন দেশের জন্য কিছু করতে চায় না। বাংলাদেশই চায়নি।”
তবে ক্ষমতায় না থাকলে তারা ‘ষড়যন্ত্র, বদনাম, অপপ্রচার’ নানা কিছু চালাতে থাকে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
“তবে এই অপপ্রচারে কান দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা যদি সৎ থাকি, ছাত্রলীগ যদি সৎ থাকে তাহলে আমাদের চিন্তার কিছু নেই,” বলেন তিনি।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে ছাত্রলীগ নেতাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ যে কোনো ক্যাম্পাসে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করে, সন্ত্রাস করে তাকে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেবে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। কারণ বিশৃঙ্খলা, নির্যাতন, সন্ত্রাস আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার সহ্য করে না এবং ছাত্রলীগও সহ্য করবে না।
“সারাজীবন আমার মা আমাকে আরেকটি কথা বলতেন, পড়ালেখা কর, নিজের পায়ে দাঁড়াও। শিক্ষা থাকলে তোমাকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না, কোনো দিন অভাব হবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, কারো কাছে হাত পাততে হবে না। আমি পড়ালেখা করেছি, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি।”
এসময় ডিজিটাল সেন্টার উদ্যোক্তাদের প্রসঙ্গ টেনে জয় বলেন, “এই ১১ হাজার উদ্যোক্তা, তারা তাদের মেধা দিয়ে, শ্রম দিয়ে একেকটা ইউনিয়নে বসে মাসে ৫০, ৬০, ৭০ হাজার টাকা কামাচ্ছে। তাদের কারো কাছে হাত পাততে হচ্ছে না। তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।
“আমি চাই যে তোমরাও, ছাত্রলীগের সকল সদস্য, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ভাল মতো পড়ালেখা করলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবা।”
দেশের অর্থনীতির প্রসঙ্গ টেনে সজীব ওয়াজেদ বলেন, “আমাদের অর্থনীতি বাড়ছে। অর্থনীতির গতির দিক দিয়ে আমাদের অর্থনীতি সারা বিশ্বে এখন চতুর্থ অবস্থানে আছে। আমাদের দেশে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, নিজের চেষ্টায় মেধা দিয়ে আয় করার অনেক সুযোগ আছে।”
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বক্তব্য দেন।
এসময় ছাত্রলীগ নেতারা জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা ‘ক্লিন ক্যাম্পাস’ কর্মসূচি শুরু করছেন, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, “তোমাদের এই ক্লিন সেট ক্যাম্পাসের ওয়াদা শুনে আমি খুবই আনন্দিত। আমি এটা আজকে তোমাদের কাছে, ছাত্রলীগের কাছে দাবি করতে এসেছিলাম। আমি চাই বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ থাকবে, পরিষ্কোর থাকবে, পরিচ্ছন্ন থাকবে। ছাত্রলীগে মেধাবী ছেলেমেয়েরা যোগ দেবে।”
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন উপস্থিত ছিলেন।