ঢাকা: জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও বোমাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সরকার সবকিছু করবে।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গীবাদ ও বোমাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমি সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। আমরা কাউকে জনগণের শান্তি বিনষ্ট করতে দেবো না। জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় আমরা সবকিছু করবো।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, অরাজকতা এবং বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘বোমা তৈরি ও নিক্ষেপকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশকে সহায়তা করুন। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।’
বিকাল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ২টা ৩৫ মিনিটে ওলামা লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসাইন বিন হিলালী কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই সমাবেশে প্রায় ৪০ মিনিট বক্তব্যে রাখেন জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও মোহাম্মদ নাসিম, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও বক্তৃতা করেন। সমাবেশে পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসিম কুমার উকিল।
সমাবেশে রংবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি নিয়ে বাদ্যের তালে তালে দলের ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলকাসমূহের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হয়।
বেগম খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতির রানী হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জনগণের ওপর জুলুম ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় জনগণ যদি ক্ষেপে যায় পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেগম খালেদা জিয়া জনগণকে হত্যা এবং জিম্মি করবেন এটা কিছুতেই সহ্য করা হবে না।
তিনি বলেন, ‘জনগণ শান্তি ও নিরাপত্তা চায়। আমি খালেদা জিয়াকে পরিষ্কারভাবে বলতে চাই জনগণের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন বন্ধ করুন। আপনি যে ভুল রাজনীতি করছেন তার মূল্য আপনাকে দিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতাল ও অবরোধ আরোপ করে বেগম জিয়া দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে চান।
তিনি বলেন, ‘বাঙ্গালি একটি বিজয়ী জাতি। বেগম জিয়া যাদের প্রভূ হিসেবে ভাবেন বাঙালি জাতি তাদের পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে সহ্য করবো না এবং জনগণের ভাগ্য নিয়ে পরাজিত অপশক্তি রাজাকার, আল-বদর ও দালালদের ছিনিমিনি খেলতে দেবো না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন এবং তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাবে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম জিয়ার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে বসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘তারেক জিয়া দুর্নীতির মাধ্যমে শুধু সম্পদই গ্রাস করেনি- সে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বর্বরোচিতভাবে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আইভি রহমানসহ দলের ২২ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। এখন সে বিদেশে বসে সন্ত্রাস ও জঙ্গী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। যোগ্য মায়ের যোগ্য সন্তানই বটে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা যদি ভুল সিদ্ধান্ত নেন তবে তার দলকে সে জন্য মূল্য দিতে হবে। খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছেন। তাই তার দলকে এ জন্য মূল্য দিতে হচ্ছে। সে জন্য দেশের জনগণকে কেনো হত্যা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণের জীবন, সম্পদ ও মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। এ কাজ থেকে কেউ আমাদের বিরত রাখতে পারবে না। ধৈর্যেরও একটা সীমা আছে।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্যায়ের সময় অবরোধ আরোপের জন্য খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, হজ্বের পরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার সময় আন্দোলনের নামে এ ধরনের অবরোধ আরোপে তিনি কোনপ্রকার দ্বিধা করেননি।
তিনি বলেন, ধর্মের নামে যে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করে তারাও ইজতেমার সময় অবরোধ আরোপে নিরব ভূমিকা পালন করছে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে সহায়তা করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আওয়ামীগ নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের দুর্বৃত্তদের বিচার করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণা করা হচ্ছে এবং জাতিকে কলংকমুক্ত করতে রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে।
সফলতার এক বছর
সফলতার সঙ্গে বিজয়ের এক বছর পার করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। ২০১৪ সালের এই দিনে বর্তমান মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহন করে, সেই হিসাবে আজ সরকার এক বছর পূর্ণ করল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিচর্বাচনের পর বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে সুমদ্র সীমা জয় করেছি। এছাড়া অর্থনৈতিক মন্দা দূর করেছি। মূল্যস্ফীতি ৬.২ এ নিয়ে এসেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ওয়াদা করেছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। কিন্তু আমরা এ ওয়াদা পূরণ করতেও সক্ষম হয়েছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এক বছরে দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছি। শেখ হাসিনা তার রূপকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ’।
কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং ডিজিটালাইজেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও যে ৫টি দেশ চমৎকার অগ্রগতি অর্জন করেছে- বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি।
পেট্রোলবোমা উদ্ধার
এদিকে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে শুরুর কিছুক্ষণ পর বাংলা একাডেমির সামনে থেকে ৩টি পেট্রোলবোমা উদ্ধার করে পুলিশ। এখান থেকে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) নামে এক যুবকে আটক করে পুলিশ। একই সময় ‘দোয়েল চত্বরের’ কাছে ৩টি হাতবোমার বিস্ফোরণ হয়।