ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাদারিত্বের সাক্ষ্য বহন করে। আমি নিশ্চিত, আমাদের সেনাবাহিনী যে কোন অশুভ শক্তির মোকাবেলা করতে প্রস্তুত এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় সক্ষম।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সমর্থন ও আস্থা ছাড়া একজন সৈনিক যুদ্ধে বিজয়ী হতে পারে না। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রধান শক্তি হচ্ছে জনগণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২০১৪-২০১৫ সালের শীতকালীন মহড়ার এবং রাজবাড়ী জেলার সোনকান্দিতে গড়াই নদীর তীরে এ্যাসাল্ট রিভার ক্রসিং অপারেশনের সমাপনি অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের দরবারে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি আধুনিক ও সুসজ্জিত বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁর অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সেনাবাহিনী জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের ক’টনীতিকগণ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের মহড়া দেখেন এবং তাদের সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে নদীর অপর পাড়ে শত্রুদের অবস্থানের ওপর হামলা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণ বিশ্বাস করতেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর প্রয়োজন। এ জন্য বঙ্গবন্ধু স্বাধীনাতর পরই সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর জন্য উপযুক্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে মিলিটারি একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি প্রথম বিএমএ শর্ট কোর্সের ‘রাষ্ট্রপতি কুজকাওয়াজে’ সালাম গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬ মেয়াদে সামরিক বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। ওই সময় সেনাবাহিনীতে একটি কম্পোজিট বিগ্রেড, স্পেশাল ওয়ার্ক অর্গানাইজেশনসহ একাধিক আর্টিলারী রেজিমেন্ট, রিভারাইন ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন, পদাতিক সাপোর্ট ব্যাটালিয়ন, ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্ড ও ডিভ অর্ডন্যান্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ এবং মিলিটারী ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাজবাড়ী এবং বরিশাল-পটুয়াখালীর লেবুখালীতে সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও সহায়তায় একটি কম্পোজিট বিগ্রেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক বাহিনীর জন্য এসপি গান, এটিজিডব্লিউ, উইপেন লোকেটিং রাডার, এমবিআরএল এবং এমবিটি ২০০০ ট্যাংকসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেও ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রতিটি স্তরে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে আর্মি ইনফরমেশন টেকনোলজি সাপোর্ট অর্গানাইজেশন গঠিত হয়েছে। একইভাবে বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পেশাগত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দেশ ও জাতির প্রয়োজনে অর্পিত দায়িত্বও পালন করছে। গত নির্বাচনে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করেছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে সেনাবাহিনী দেশে বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়া তারা যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলায় সেনাবাহিনী বিশেষ করে ৫৫ পদাতিক ডিভিশন দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ডিভিশন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণই হচ্ছে দেশের শক্তি। সেনাবাহিনী হচ্ছে জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এজন্য সকলের দায়িত্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন। এক্ষেত্রে জনগণের আস্থা অর্জন অত্যন্ত জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনী কল্যাণ তহবিলের আয় বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার ট্রাস্ট ব্যাংক ও হোটেল রেডিসন প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব নিয়ে সেনা সদস্যদের রসদ বৃদ্ধি করে বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর সমান করা হয়েছে। অস্থায়ী কর্তব্য পালনে জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের দৈনিক ভাতা, ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার দায়িত্ব পালনের দৈনিক ভাতা এবং এলপিআর-এর সময়কাল ৪ মাস থেকে ৬ মাস বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। একইভাবে অবসরপ্রাপ্ত মৃত সেনা সদস্যদের পারিবারিক পেনশনের হার ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি এবং জেসিওদের প্রথম শ্রেণী ও সার্জেন্টদের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, দেশকে এগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ আজ আর পরমুখাপেক্ষী দেশ নয়, বরং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের আমলে দেশের অর্জিত অগ্রগতির উল্লেখ করে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৩ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। ১৪টি বৃহৎ সেতু, ৪ হাজার ৫০৭টি মাঝারি ও ছোট সেতু, ১৩ হাজার ৭৫১ কালভার্ট ও ২১ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মিত এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার চালু হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি শীতকালীন প্রশিক্ষণ চলাকালে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা ও অন্যান্য জনহিতকর কাজের জন্য ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের প্রশংসা করে আশাবাদ প্রকাশ করেন জনগণের অকৃতিম ভালবাসা ও আস্থা অর্জনে এ ধরনের মহতী উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববাসী আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সুশৃংখল বাহিনী হিসেবে জানে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীর অবদান আজ সর্বজন স্বীকৃত ও বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন শীর্ষে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের শীতকালীন মহড়া প্রত্যক্ষ করেন। এতে প্রায় ৮ হাজার সেনা, ২৬৫ প্যারা কমান্ডার, দু’টি ফাইটার জেট,দুটি কার্ডো প্লেন ও ৪টি হেলিকপ্টার অংশগ্রহণ করে।
‘দুর্জয় বাংলা’ নামে মহড়াটি প্রদর্শন করে ৫৫ পদাতিক ডিভিশন। মহড়ায় দুইটি অংশ ছিল। এক অংশে ছিল লাল দল (শত্রু পক্ষ) ও নীল দল (বাংলাদেশ)। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেখে শত্রু পক্ষ ঈর্ষান্বিত হয়ে বাংলাদেশে আক্রমণ চালায়। কিন্তু বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী একযোগে স্থল, নৌ ও বিমান হামলা চালিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে।
মহড়াটি দূর থেকে কয়েকটি গ্রামের মানুষও উপভোগ করে।
পরে প্রধানমন্ত্রী গরীবদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।