২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর, শেখ হাসিনার সরকার নারী উন্নয়নের জন্য নানাবিধ কর্মসূচী ও প্রকল্প হাতে নেয়া শুরু করেছে। নারীর উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়ন সরকারের পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরে। বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫), যেখানে জাতীয় মাঝারি পর্যায়ের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ২০২১ সাল (ভিশন ২০২১ নামেও পরিচিত) নাগাদ একটি মধ্য আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ, নারীকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করাকে নারীর ক্ষমতায়নের প্রধানতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে।
বর্তমান সরকার সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি ২০১৫ অর্জনের নিমিত্তে, লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন সেই সাথে নারীর প্রতি সবরকমের বৈষম্য দূরীকরণের নিয়মপত্র (CEDAW) এবং বেইজিং প্লাটফরম ফর অ্যাকশন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার জাতীয় পর্যায়ে লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এমডিজি-৩ যথার্থভাবেই অর্জনে সমর্থ হয়েছে। এই ইতিবাচক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে মেয়ে ছাত্রীদের জন্য সরকারের বিশেষ দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে, যেমন বৃত্তিপ্রদান এবং গ্রামাঞ্চলে ছাত্রীদের শিক্ষাখরচ অব্যাহতি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রীদের বৃত্তিদানের মাধ্যমে। আর তাই ইউএনডিপিও মন্তব্য করেছে, “বাংলাদেশ লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।”
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলসভাবেই, নারীদের মূলধারার আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমান এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করানো এবং ক্ষমতায়নের বিভিন্ন অন্তরায়সমূহ দূর করার মাধ্যমে, নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছে। বিশ্ব লৈঙ্গিক বৈসাদৃশ্য রিপোর্ট ২০১২ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বে ৮ম অবস্থানে আছে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে, যা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের নারী-বান্ধব নীতিসমূহের করণে। বাংলাদেশ লৈঙ্গিক বৈষম্য সূচকে (জিআইআই), একটি বহিঅংশে সমন্বিত সূচক যাতে মানব উন্নয়নের জন্য লিঙ্গ বৈষম্যের ক্ষতির পরিমাপ করে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। এই লৈঙ্গিক বৈষম্য সূচকের ১১১তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ, যেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১২৩তম এবং ভারতের অবস্থান ১৩৩তম।
অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উদ্যোগ
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে সম্ভব করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাদেরকে ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষিত করা, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা, শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং ক্ষুদ্র ও মধ্যম নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে। বিবিধ ধরনের ভাতা প্রদানের মাধ্যমে বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা জাল প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যেমন দু:স্থ নারী ভাতা, মাতৃকালীন এবং দুগ্ধদায়ী মায়ের জন্য ভাতা, অক্ষম মায়ের ভাতা, তালাকপ্রাপ্তা ভাতা ইত্যাদি। অরক্ষিত গ্রুপ পোষণ (ভিজিএফ) দেয়া হয় অরক্ষিত অতিদরিদ্র নারীদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য। গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য, জামানতদারসহ ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া হয় মাত্র ৫% সেবামূল্যের বিনিময়ে। নারী উদ্যোক্তারা ক্ষুদ্র উদ্যোগ তহবিলের ১০% এবং বাণিজ্যিক খাতের ১০% পেযে থাকে। বর্তমানে ৩০ লাখের বেশি নারী কেবল তৈরি পোষাক কারখানায় তথা গার্মেন্টসে কাজ করে। বাংলাদেশের নারী শ্রমশক্তি ২০১০ সালের ২৪% থেকে উন্নীত হয়ে ২০১৩তে এসে ৩৬% হয়েছে। গত বছরের মতোই, সাম্প্রতিক ২০১৪-১৫ বাজেটেও ৪০টি মন্ত্রণালয়ের জন্য লিঙ্গ সংবেদী বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে, যেটিতে ১০ কোটি টাকা বরাদ্ধ বিশেষভাবে নারী উন্নয়নের জন্য ধরা হয়েছে, যা এই খাত ও মন্ত্রণালয়েরগুলোর বরাদ্ধের উদ্বৃত্ত।
কৃষিউৎপাদনে নারীর অংশগ্রহণের সুবিধা দিতে কৃষি-সংক্রান্ত প্রযুক্তি এবং ঋণ দেয়া হয় কৃষিজাত প্রক্রিয়াকরণ, গার্হস্থ্য বাগান, নার্সারি, মৌ-চাষ এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের জন্য। প্রান্তিক এবং ভুমিহীন চাষীদের, যাদের ৫০%ই নারী, সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ‘একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পে’ গ্রামের দরিদ্র নারীদের আরো বেশি অংশগ্রহণ একটি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে প্রত্যেক গ্রামের প্রতিটি গৃহে।
নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে, বেশ কিছু সংখ্যক উদ্দীপনা দেয়া হয়ে থাকে। ২০১০ থেকে ২০১৩তে, ব্যাংক এবং ব্যাংক ব্যতীত অন্যান্য অার্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নারী উদ্যোক্তাদেরকে ৬৭০কোটি টাকা দিয়েছে নিজেদের উৎস থেকে। ২০১০ সালে, ১৩,৮৩১ নারী উদ্যোক্ত ১৮০কোটি টাকা পেয়েছে; ২০১১সালে, ১৬,৬৯৬ নারী উদ্যোক্তা পেয়েছে ২০০কোটি টাকা এবং ২০১২ সালে, ১৭,৩৬২ নারী উদ্যোক্তা পেয়েছে ২২০ কোটি এসএমই ঋণ। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি ব্যয়ের সংখ্যা ও পরিমাণ উভয়ই বেড়েছে।
নারী উদ্যোক্তাগণ এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের তহবিল থেকে পুন:অর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। নারীরা বিশেষ সুবিধাযুক্ত ১০% সুদে ঋণ পাচ্ছে। পুন:অর্থায়ন তহবিলের ১৫% বরাদ্ধ রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য। নারীরা ২৫লাখ পর্যন্ত এসএমই ঋণ সুবিধা পাচ্ছে জামানতদার ছাড়া, কেবলই ব্যক্তিগত গ্যারান্টিতে। তদুপরি, সকল ব্যাংক এবং ব্যাংক ব্যতীত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডেডিকেটেড ডেস্ক খুলেছে, যেখানে ব্যাংক কর্মকর্তাগণ নারী উদ্যোক্তাদের তথ্য ও সেবা দিয়ে থাকে।
মাতৃত্ব ও স্বাস্থ্য
মায়েদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে, বর্তমান সরকার মাতৃত্বকালীন ছুটিকে চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাসের করেছে। বাংলাদেশ মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার (MMR) ব্যাপক সাফল্যের সাথে কমিয়ে এনেছে। এই মৃত্যুহার গত দু্ই দশকে ৬৬%এরও বেশি কমেছে এবং তা প্রতি বছর এখন ৫.৫% মতো নেমে এসেছে, যার ফলে বাংলাদেশ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) এর ইপ্সিত প্রতি ১০০,০০০ টি জন্মগ্রহণের মধ্যে ১৪৩টি মৃত্যুর লক্ষ্যমাত্রার কাছে পৌঁছাতে পারবে ২০১৫এর মধ্যে।
জাতিসংঘের কিছু সংস্থার ২০১৩সালে চালানো জরীপে, বাংলাদেশের মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহার প্রতি ১০০,০০০টি জীবিত জন্মগ্রহণের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে ১৭০টি। বর্তমান সরকার এই মাতৃত্বকালীন মৃত্যুহারকে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি ১০০,০০০টি জীবিত জন্মগ্রহণের বিপরীতে ৬৩টিতে নামিয়ে আনতে চায়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে গ্রামীন, প্রান্তিক ও দুস্থ্য নারীদের কাছে পৌঁছে দেবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নারী বান্ধব মডেল হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে জেলায় জেলায়। মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের আওতায় একটি ভাউচার প্যাকেজ দেয়া হয় যার অধীনে তিনটি প্রসব পূর্ব চেকআপ, দক্ষ দাইয়ের অধীনে নিরাপদ জন্মদান, একটি প্রসব পরবর্তী চেকআপ এবং যাতায়াত খরচ বাহিত হয়।
শিক্ষা
শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নের জন্য মেয়েদের শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা ৬ থেকে ১০ বছরের সকল শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক এবং বিনামূল্যে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত সকল শিশু বিনামূল্য পাঠ্যপুস্তক পেয়ে থাকে। দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সকল মেয়েদের সরকারী বিদ্যায়তনগুলোতে শিক্ষা খরচ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে এবং ঝরে পড়ার হার কমাতে, বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। মেয়েদের শিক্ষার জন্য এই প্ররোচক কৌশলের ফলে লৈঙ্গিক সমতার সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মেয়েদের ভর্তির হার এখন ৫১% এবং মাধ্যমিকে তা ৫৩%, যেখানে ছেলেদের ক্ষেত্রে তা ৪৭%, মাত্র কিছু বছর পেছনে ফিরে দেখা যাবে যখন ছেলেদের ছিল ৬৫% এবং মেয়েদের মাত্র ৩৫%।
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১
নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯এ ক্ষমতায় আসার পরে প্রধান যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা হলো জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ যেখানে নারীদের সম্পদের সমান অধিকার এবং ব্যবসায়ের সুযোগ সৃষ্টি করে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল নারীর অধিকার এই নীতির ফলে আরো উচ্চকিত হয়েছে। এই নীতি রাষ্ট্রকে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেয় তার অধিকারের প্রতি তার জমিতে, অর্জিত সম্পত্তিতে, স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, প্রশিক্ষণে, তথ্যে, উত্তরাধিকারে, ঋণে, প্রযুক্তিতে এবং উপার্জনের সুযোগে, আর এই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নেরও নির্দেশ দিয়ে থাকে। আগস্ট ২০১৩তে, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে এই নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ বাস্তবায়নের জন্য। আর এটাও বিশেষভাবে স্মরণীয় শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সকল নারীর সমতা বাস্তবায়নের জন্য সৃষ্ট এই ২০১১ এর নীতির অঙ্গীকার থেকে কখনওই পিছুপা হয়নি, যদিও তারা প্রচণ্ড বিরোধিতার সম্মুখীনও হয়েছে, যা কখনো চরম সহিংস এবং সন্ত্রাসমূলক প্রতিরোধ ছিল ধর্মীয় চরমপন্থী দলগুলোর থেকে; যেমন, জামাত-ই-ইসলাম বা হেফাজত-ই-ইসলামি।
নারীর প্রতি সহিংসতা দমন
ডিসেম্বর ২০১০, সংসদে পারিবারিক সহিংসতা (দমন এবং নিরাপত্তা) আইন ২০১০ পাশ করা হয়, যেখানে বাংলাদেশের পারিবারিক সহিংসতাকে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আইন নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের নিয়মপত্র (CEDAW) এবং সংবিধানের ২৮ তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা স্পষ্ট করে, যা নারী ও শিশুর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণকে নিশ্চয়তা দেয়। আইনটিকে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে, সরকার পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা) বিধি ২০১৩ প্রণয়ন করেছে।
বর্তমান সরকার প্রণীত নারীর প্রতি সহিংসতা দমনের জন্য অন্যান্য আইনের মধ্যে আছে মানব পাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১১। আইন প্রণয়নের পাশাপাশি, ৭টি বিভাগে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারগুলো মেডিক্যাল চিকিৎসা, আইনি সহায়তা, পলিসি সহায়তা এবং আক্রান্তদের পুনর্বাসন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। লিঙ্গ সম্পর্কিত অপরাধ যেমন ধর্ষণের কার্যকর তদন্তের জন্য কিছু জাতীয় হাসপাতালে ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাব এবং ডিএনএ স্ক্রিনিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
আক্রান্ত নারীদের জন্য আরো সহজ করতে দুস্থ সহায়তা কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হচ্ছে প্রশিক্ষিত এবং পেশাদার নারী অফিসারদের দ্বারা। আন্তর্জাতিক আইন এবং কনভেনশনের উপর জাজ এবং আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা নারীর প্রতি সহিংসতা এবং লিঙ্গ সংবেদনশীতা সম্পর্কিত প্রচলিত আন্তর্জাতিক কাঠামোগুলো সম্পর্কে ওয়াকিফহাল থাকেন। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় (MoWCA), নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের সমন্বয় সাধনের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি পরিচালনা করে থাকে এবং সহিংসতায় আক্রান্তদেরকে যথাযথ প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা করে থাকে। এই মন্ত্রণালয় এখন একটি হেল্পলাইন (১০৯২১) পরিচালনা করে থাকে যা সহিংসতায় আক্রান্তদেরকে আইনি, মেডিক্যাল, পুনর্বাসন এবং পরামর্শ সহায়তা দিয়ে থাকে।
অকাল এবং বাল্য বিবাহের সমাপ্তি
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য জাতীয়ভাবে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রচারিত একটি ক্যাম্পেইন হচ্ছে, “মেয়ে, কনে নয়”। বাংলাদেশে, গত দু’দশকে বাল্যবিবাহ বেশ কমে এসেছে। নারীর বিবাহযোগ্য বয়স হচ্ছে ১৮, কিন্তু ২০ বছর আগে দেশের ৫১% মেয়ের বিয়ে হয়ে যেতো ১৫ বয়সের মধ্যেই। বর্তমানে এই হার কমে ১৭% হয়েছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সচেতনতার কারণে অপরিণত কৌশোরে বিয়ের দেবার প্রবণতা কমে আসছে ক্রমশই। বাল্যবিবাহ আইন ১৯২৯ এর সংশোধন চলছে এবং শিশুদের কল্যান নিশ্চিত করার জন্য প্রথমবারের মতো শিশু আইনও প্রণীত হচ্ছে। সম্প্রতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ এর মধ্য দেশ থেকে বাল্যবিবাহ সম্পর্ণ নির্মূলের অঙ্গীকার করেছেন গত ২২শে জুলাইতে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনে।
রাজনীতি, প্রশাসন এবং নিরাপত্তায় নারী
নারীর ক্ষমতায়নকে বাড়ানোর জন্য জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা আরো ৫টি বাড়িয়ে, ৫০টি করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনগুলোতে নির্বাচিত নারী সাংসদের সংখ্যাও (মোট আসনের ২০%) নিশ্চিতভাবে বাড়ছে। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগবৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন কাউন্সিল, উপজেলা পরিষদ এবং মিউনিসিপ্যালিটিগুলোতেও সংরক্ষিত আসন মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বাড়ানো হয়েছে এবং সেসব সিটে নারীরা সরাসরিও নির্বাচিত হতে পারে। স্থানীয় সরকারের শেষ পর্যায়ে ১২,০০০ এর বেশি নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পীকার এবং সংসদের উপনেতা সবাই নারী। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় - সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ কমিশনার, পুলিশের উচ্চ পর্যায়, সশস্ত্রবাহিনী, ইউএন শান্তিকর্মী ইত্যাদিতে নারীর সংখ্যা নিশ্চিতভাবেই নারীর ক্ষমতায়নের উন্নতি নির্দেশ করে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রশাসনের সব পর্যায়ে নারীর কর্মসংস্থান বাড়াতে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কোটা রাখার কারণে।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতেও লৈঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গীটি সমন্বিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানগুলোতে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি নারী পুলিশ পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষাবাহিনী লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা, স্থানীয় নারী পুলিশ অফিসারদেরকে উপদেশ ও পরামর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রে নারীর ক্ষমতায়ন সেই সাথে সামাজিক সংযোগ বাড়াচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশি ১৯০ জন নারী অফিসার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা মিশনের কাজে নিয়োজিত আছেন।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
জাতিসংঘের সাধারণ সভার জন্য সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র্য এবং অসমতা উভয়কেই সংকটাপন্ন গুরুত্বের সাথে দেখিয়েছে এবং ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়নের বিষয়সূচিতে লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রধান গুরুত্ব হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রিপোর্টে প্রদর্শিত লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে একটি স্বতন্ত্র লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন যেখানে চারটি প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে: নারী এবং মেয়েদের প্রতি সহিংসতা নির্মূল, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশীদারিত্ব যা গৃহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য এবং বাল্যবিবাহ রোধ। যদি সাম্প্রতিক সময়ের সাফল্যগুলোকে কোনো সূচক হিসেবে দেখা যায়, তবে নিরাপদভাবেই আশাবাদী হওয়া যায়, বাংলাদেশ ২০১৫ পরবর্তী নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলোও অর্জনে সফল হবে। শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের বলিষ্ঠ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেতৃত্বে, বাংলাদেশের নারীর সামনে এমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই যা তাদের প্রতিহত করতে পারে।