মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে আনার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বনানী কবরস্থানের বি ব্লক, ১৮ নম্বর সড়ক ১৮৩৮/১৪৭ নম্বর কবরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।আরাফাত রহমান কোকোর দাফন পরবর্তী মোনাজাতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, আলহাজ মোসাদ্দেক আলী ফালু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস কাদের চৌধুরী প্রমুখ।
এ ছাড়া ২০ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতাকর্মী, কোকোর পরিবারসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাত শেষে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। মোনাজাত পরচালনা করেন মওলানা নেছারুল হক।
সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছেলেকে বিএনপি সেনা কবরস্থানে দাফন করতে চাইলেও তার অনুমতি মেলেনি।
এর আগে, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা সালাউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার বাদ আছর কোকোর নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হাজার হাজার নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের লাখো মানুষ অংশ নেন।
জানাজার আগে থেকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ ফটক সংলগ্ন সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। উত্তর ফটকে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে দৈনিক বাংলা মোড়, দক্ষিণে জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান ফ্লাইওভার পর্যন্ত পুরো সড়ক ভরে ছিল জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষে।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে জানাজায় ছিলেন মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, মীর মো. নাছিরউদ্দিন, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, রুহুল আলম চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, নেছারুল হক প্রমুখ।
জানাজায় রাজনীতিকদের মধ্যে ছিলেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, অলি আহমদ, আবদুল মান্নান, রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, মজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, আবদুল লতিফ নেজামী, মুহাম্মদ ইসহাক, আহমেদ আবদুল কাদের, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এম এম আমিনুর রহমান, খন্দকার গোলাম মূর্তজা, আবদুল মোবিন, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি, গোলাম মুস্তফা ভুঁইয়া, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুৎফর রহমান।
এর আগে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। বিমানবন্দর থেকে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে আলিফ মেডিকেল সার্ভিসের এ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ গুলশান কার্যালয়ে আনা হয়, যেখানে গত ৩ জানুয়ারি থেকে অবস্থান নিয়ে আছেন কোকোর মা খালেদা জিয়া।
কোকোর কফিন রাখা হয় কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে। মিনিট দশেক পর ওপরের চেম্বার থেকে নেমে এসে ছেলের কফিনের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।
কফিনের পাশে বসে দুই নাতনী জাফিয়া ও জাহিয়াকে জড়িয়ে ধরেও কাঁদতে দেখা যায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। এ সময় তাকে দুই পাশ থেকে ধরে রাখেন পুত্রবধূ শর্মিলা এবং দুই ভ্রাতৃবধূ নাসরিন সাঈদ ও কানিজ ফাতেমা।
নিচ তলার ওই কক্ষে আত্মীয় ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবালমান্দ বানু, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরিবারের সদস্যদের শেষবার দেখার জন্য কোকোর কফিন ওই কক্ষে রাখা হয় প্রায় এক ঘণ্টা। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ মিনিট খালেদা জিয়া সেখানে ছিলেন। কফিনের পাশে বসেই ছেলের জন্য মোনাজাত করেন তিনি।
পরে তার সামনেই কফিনটি ঢেকে দেওয়া হয় এবং অশ্রুসিক্ত খালেদা দাঁড়িয়ে থেকে ছোট ছেলেকে শেষ বিদায় জানান।
একদিকে লাশের কফিন অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে দুই পাশ থেকে ধরে দোতলায় নিয়ে যান তার দুই ভাইয়ের স্ত্রী।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে একই অ্যাম্বুলেন্সে করে কোকোর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বায়তুল মোকাররমে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বেষ্টনিতে পৌনে ৫টায় কফিন সেখানে পৌঁছায়। সেখান থেকে পৌনে ৬টায় কফিন নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে।
অবরোধের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের কার্যালয়, সেখান থেকে বায়তুল মোকাররম, জানাজা শেষে বনানীতে নেওয়ার পুরোটা সময় কফিনের সঙ্গে ছিল বিএনপি নেতাদের কয়েকটি গাড়ি; সামনে ছিল মোটর সাইকেলের বহর; আর কফিন ঘিরে হাঁটছিলেন বহু নেতা-কর্মী।
২৪ জানুয়ারি শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের জাতীয় মসজিদ নাগারায় রবিবার দুপুরে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
মামা শামীম এস্কান্দারসহ স্বজনরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে কোকোর মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে মঙ্গলবার সারাদেশে মিলাদ মাহফিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।