নৈরাজ্য ও সহিংসতা বন্ধের দাবিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অনশনে বসেছেন।
‘শুধু সংসদ ভবনে গণতন্ত্র আছে, দেশের আর কোথাও গণতন্ত্র নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
এরশাদ বলেন, “শেরেবাংলা নগর ও সংসদের বাইরে কোনো গণতন্ত্র নেই। বাইরে আছে শুধু সন্ত্রাসতন্ত্র। দেশের মানুষ আজ জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সন্ত্রাসতন্ত্রের প্রতিবাদ করছে।”
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার বিকেলে জাপা ঢাকা মহানগর আয়োজিত প্রতীকী গণঅনশন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এরশাদ এসব কথা বলেন।
‘দুই নেত্রীকে না বলুন। দেশে আগুন জ্বলছে। আমরা ওই আগুন নেভাব’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ দূত বলেন, “আমরা মানুষের মুখে হাসি দেখতে চাই। দেশে শান্তি দেখতে চাই।”
বেলা ১১টার দিকে অনশন শুরু করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। বিকেল ৪টায় এরশাদের মুখে পানি দিয়ে অনশন ভাঙান জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, “টেলিভিশনে একজন সন্তানহারা মায়ের কান্না দেখেছি। তার কারণে অনেক মা কান্না করছে যা আমরা টিভি পর্দায় দেখছি না। মা হারার বেদনা তিনি হয়তো আজ উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আশা করি অন্যের কান্নাও অনুভব করবেন তিনি।”
‘কয়েক দিন পরে দেখবেন এক মসজিদে নামাজ পড়াও দুরূহ হয়ে পড়েছে’ মন্তব্য করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, “আজ দেশ থেকে রাজনৈতিক সহনশীলতা, শ্রদ্ধাবোধ ও সামাজিক শিষ্টাচার উঠে গেছে। ক্ষমতার জন্য সামাজিক শিষ্টাচারও আমরা ভুলে গেছি।”
তিনি বলেন, “দেশের মানুষ আজ শান্তিতে নেই। সবাই শান্তি চায়। দেশে সহিংসতা বাড়ছে। মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। মানুষের কান্নার শেষ নেই। সবাই এর সমাপ্তি চায়।”
নেতাকর্মীদের জেগে উঠার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ বলেন, “তোমরা জেগে ওঠো। সহিংসতার বিরুদ্ধে তোমরা জেগে ওঠো। সত্যিকার গণতন্ত্র চাইলে তোমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।”
এরশাদ বলেন, “দেশে শান্তি শুধু জাতীয় পার্টিই আনতে পারে। আমরা ক্ষমতায় বিশ্বাস করি না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।”
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের বলেন, “দেশে এখন যুদ্ধ চলছে। র্যাব ও পুলিশ গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে”
জাতীয় পার্টির উদ্যোগে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও ও দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে এই গণঅনশন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মো. আবুল কাশেম, এম এ হান্নান এমপি, গোলাম কিবরিয়া টিপু, আলহাজ সাহিদুর রহমান টেপা, এ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, সৈয়দ মো. আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন প্রমুখ।
এরশাদের প্রতীকী গণঅনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এ আর খানসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।