বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান অবরোধে নাশকতা ও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “হয় বিএনপি-জামায়াতকে বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে, না হয় তাদের জনগণের রুদ্ররোষে পড়তে হবে।”
বাংলা একাডেমিতে রবিবার বিকেলে মাসব্যাপি ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিএনপি-জামায়াতের প্রতি সাধারণ মানুষের ওপর বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানাই।’
‘আর যেন মানুষের উপর বোমা হামলা না করা হয়।’ এসময় হুশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে যখনই তারা শান্তিতে থাকতে শুরু করে, তখনই কোথা থেকে একটা কালো মেঘ এসে ঠেকে যায় আমাদের আকাশে।”
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, “৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও এমন অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল। পরে আমরা সে অবস্থা কাটিয়ে উঠেছিলাম। দেশের মানুষ এক বছর শান্তিতে ছিল। কিন্তু যখনই শান্তি ও সমৃদ্ধির একটু সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখনই চরম আঘাত আসে।”
সহিংস বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বার্ন ইউনিটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ। কী কারণে তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। কেন তাদের এ অবস্থা হলো তারা তা-ও জানলো না।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, “হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আর দগ্ধদের আর্তনাদ শুনতে চাই না।”
বিএনপি ও দলটির নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেউ যদি রাজনীতি করতে গিয়ে সিদ্ধান্তে ভুল করেন সেই ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে। তার খেসারত কেন জনগণ দেবে। মানুষের উপর বোমা হামলা কোনো আন্দোলন হতে পারে না। বাংলাদেশ এই জঙ্গিবাদের কাছে পরাভব ও পরাজয় মানবে না।”
এসময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখেন, “কী অপরাধ করেছে সাধারণ মানুষ যে, তাদের পুড়িয়ে মারতে হবে?”
তিনি বলেন, “আমরা চাই দেশের মানুষের জীবন শান্তিতে ভরে উঠুক। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল দিয়ে তারা শিশুদের জীবন নিয়ে খেলতে চায়। তাই আমরা পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছি। কারণ জঙ্গীদের তো আবার কোনো হিতাহিত জ্ঞান নেই। তাদের হামলা থেকে তো শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর এমেরিটাস আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বিশেষ অতিথির উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেলিন, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, রেলমন্ত্রী মজিবুল হক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীসহ দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, কবি ও লেখকেরা।
আন্তর্জাতি সাহিত্য সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় আগত বিভিন্ন দেশের কবি ও লেখকেরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বক্তব্য শেষে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন’র মাসব্যাপি আয়োজনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বইমেলার বিভিন্ন স্টলও ঘুরে দেখেন শেখ হাসিনা।