ভারতের চেন্নাইতে নগর কর্পোরেশন একটি পাঁচতারা হোটেলের বকেয়া কর আদায়ে সেখানে হিজড়াদের দল পাঠিয়ে সফল হওয়ার পর এই পদ্ধতির ভালমন্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হিজড়ারা ওই হোটেলের সামনে গিয়ে হইচই শুরু করার পর মাত্র আধঘন্টার মধ্যে হোটেল কর্তৃপক্ষ বকেয়া কর মিটিয়ে দেন বলে জানা গেছে।
তাদের আগামীতেও এই ধরনের কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে, কিন্তু এতে আখেরে হিজড়াদের লাভ হবে না ক্ষতি - তা নিয়ে যারা তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেন তাদের মধ্যেও পরিষ্কার দ্বিমত চোখে পড়ছে।
দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইতে সবচেয়ে দামী ও বিলাসবহুল হোটেলগুলোর একটি, চেন্নাই হিল্টনের সঙ্গে নগর কর্পোরেশনের বিবাদ চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও হিল্টন প্রায় ৩৪ লক্ষ রুপি বকেয়া কর মেটায়নি, তাই এ সপ্তাহে চেন্নাই কর্পোরেশন একদল হিজড়াকে ভাড়া করে সেই হোটেলের সামনে হাঙ্গামা করতে পাঠায়।
ঢাকঢোল নিয়ে গিয়ে তারা ওই পাঁচতারা হোটেলের সামনে গানবাজনা আর চেঁচামেচি শুরু করার মিনিটকয়েক পরেই বিব্রত হোটেল কর্তৃপক্ষ পুরো কর মিটিয়ে দেন বলে জানা গেছে। অভিযানের সাফল্যে চেন্নাই কর্পোরেশন যথারীতি খুব খুশি, কিন্তু ভারতে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারের জন্য যারা লড়াই করেন তারা সবাই পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না।নাজ ফাউন্ডেশনের অঞ্জলি গোপালন বলেন, “জোর করে টাকা আদায় করে বলে হিজড়াদের এমনিতেই বদনাম। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ওরা তো ভয় দেখিয়ে টাকা তোলে - আপনি কেন ওদের জন্য লড়ছেন? ফলে আমার আশঙ্কা হল, এই ধরনের খবর প্রচার হলে হিজড়ারা শুধু জোর করে টাকা আদায় করে - তাদের ওপর সেই ছাপ্পাটাই আরও জেঁকে বসবে, লোকে বলবে ওরা তো ওরকমই!”
তবে আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট আদিত্য ব্যানার্জি - যিনি আদালতে এলজিবিটি ইস্যুতে বহু মামলা লড়েছেন - তিনি কিন্তু চেন্নাই কর্পোরেশনের অনুসরণ করা পদ্ধতিতে অসুবিধার কিছু দেখছেন না।
তিনি বলেন, “আইন না ভাঙা হলেই হল। কর বা বকেয়া ঋণ আদায়ের জন্য বিভিন্ন সংস্থা মাসলম্যান কাজে লাগায় বা আরও নানা বেআইনি পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। তাতে আপত্তি না-থাকলে এখানে কীসের আপত্তি?”
অঞ্জলি গোপালন কিন্তু মনে করছেন, “ব্যাখ্যাটা অত সরল নয় - কারণ হিজড়াদের এখানে শেমিং টুল বা লজ্জায় ফেলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যেটা সেই সমাজের জন্য খুব কাঙ্ক্ষিত নয়।”
তাঁর প্রশ্ন, “আমাদের ভাবতে হবে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ আগে কেন বকেয়া মেটাননি, আর এখন হিজড়াদের দেখেই বা কেন মেটাচ্ছেন? কর না-মেটানো তত লজ্জার নয়, কিন্তু হিজড়ারা তার চেয়েও বেশি লজ্জার?”
আদিত্য ব্যানার্জি আবার হিজড়াদের কর্মসংস্থানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তিনি বলছেন এভাবে কর আদায়ের মাধ্যমে হিজড়াদের উপার্জনের একটা পথ খুলে যেতে পারে। আর এখানে যে একটি সরকারি সংস্থাই তাদের কাজে লাগিয়েছে, সেটাও তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
ইতিমধ্যে চেন্নাই কর্পোরেশন আরও বিভিন্ন সংস্থার বকয়ো কর আদায়ে হিজড়াদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছেন বলে জানা যাচ্ছে - কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তাতে হিজড়াদের আদৌ কোনও লাভ হবে কি না তা নিয়ে ভারতের অ্যাক্টিভিস্টরাই একমত হতে পারছেন না! তথ্যসূত্র: বিবিসি