সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত প্রায় ১০ ঘণ্টায় নবজাতকসহ ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল সাতটার মধ্যে এ সব শিশু মারা যায়। ১০ শিশু ছাড়াও মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরো ২২ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের শিশু বিভাগের ২১, ২২ নম্বর ওয়ার্ড এবং গাইনি ওয়ার্ডে এসব শিশুর মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুস সালাম জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৭টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ নম্বর ওয়ার্ডে দুই, ২২ নম্বরে পাঁচ এবং গাইনি ওয়ার্ডে বাকি তিনজন মারা গেছে।
এরা হলো- সিলেটের গোয়াইনঘাটের সায়মা (দেড় বছর), জকিগঞ্জের দশগ্রামের আকাশ (সাত দিন), সুনামগঞ্জ সদরের তাজরিয়া (সাড়ে তিন বছর), মেহেদী (আড়াই মাস), ছাতকের শাফরাজ (তিন বছর), বিশ্বম্ভরপুরের নাদিনা (ছয় মাস), হবিগঞ্জের ইয়াসমিন (তিন দিন) এবং নগরীর শেখঘাটের নিলুফার নবজাতক মেয়ে, শাহপরাণ এলাকার আসমা ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকার সন্ধ্যা রাণীর নবজাতক মেয়ে।
এদের ছয়জন জন্ম জটিলতায়, দুই জন অপুষ্টিজনিত সংক্রমণে, একজন নিউমোনিয়ায় ও অন্য একজন ঠাণ্ডাজনিত রোগে মারা গেছে বলে জানান হাসপাতালের উপপরিচালক সালাম।
“জন্মগত জটিলতা, মারাত্মক সংক্রমণ, অপুষ্টি ও নিউমোনিয়ার কারণেই শিশুগুলোর মৃত্যু হয়েছে। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু,” বলেন তিনি।
তবে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এতোগুলো শিশুর মৃত্যুর এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অন্যান্য রোগী এবং মৃত শিশুদের স্বজনরা বলছেন, চিকিৎসায় অবহেলার কারণেই এতগুলো শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
নবজাতক সন্তানকে হারানো সন্ধ্যা রানীর স্বামী রানা পাল বলেন, “হাসপাতালের নার্স ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অবহেলার কারণেই শিশুগুলো মারা গেছে। ভর্তির পর শিশুর ঠিকমতো পরিচর্যা করেননি ডাক্তার-নার্সরা। স্বজনরা রোগীদের অবস্থা জানাতে নার্স ও চিকিৎসকদের কাছে গেলে তারা দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন।”
তদন্ত করে দায়ী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এই ঘটনার পর সকালে শিশু বিভাগ পরিদর্শন করে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুস সবুর বলেন, “চিকিৎসকদের কোনো অবহেলা নেই। আমরা বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছি।”
তবে স্বজনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ ঘটনায় মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ইসমাইল পাটোয়ারীকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক আবদুস সালাম জানিয়েছেন। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
হাসপাতাল পরিচালকের তথ্য অনুযায়ী ওসমানী হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগী মারা যান, যার মধ্যে দু’য়েকজন শিশুও থাকে।
এ ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হবে বলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন।
দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমাদের জানামতে সেখানে কোনো অঘটন ঘটেনি। কিছু ঘটলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হবে বলে জানান তিনি।