পহেলা ফাল্গুনের রঙিন আবহ না কাটতেই আজ আরেক রঙের স্রোত বইছে। আজ ভ্যালেনটাইনস ডে। ভালোবাসা দিবস। পৃথিবীর কোথাও কোথাও বন্ধু দিবস হিসেবেও মহাসমারোহে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি বসন্তের ২য় এই দিনটি ভালোবাসার দিন, ভাল লাগার দিন, প্রিয়জনকে নতুন করে ভালোবাসা নিবেদনের দিন। সারা দুনিয়ার মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসবে। স্বামী ভালোবাসবে স্ত্রীকে, স্ত্রী ভালোবাসবে স্বামীকে, প্রিয় ভালোবাসবে প্রিয়াকে- প্রিয়া তার ভালবাসা উজাড় করে দিবে প্রিয়-জনের জন্য, সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভালোবাসবে, পিতা-মাতা তার প্রাণ উজাড় করে দেবেন সন্তানের জন্য। এই দিন থেকে অনুরাগ নিয়ে সারা দুনিয়া আমরা ঢেকে দেবো ভালোবাসার জালে। দিনটি তরুণ-তরুণী ছাড়িয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মনে দোলা দিয়ে রঙিন এই দিবসটি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও আগে থেকেই এ দিবস সামনে রেখে প্রস্তুতি চারদিকে। দিবসটি উপলক্ষে নানা সাজে সেজেছে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ-বিপণি বিতান আর মিলনকেন্দ্র। ফুলের দোকানে ভিড়। কার্ডের দোকানে কার্ড কেনার ধুম। ক্যাফে কিংবা বিনোদনকেন্দ্রে অগণন প্রেমিক যুগলের সরব উপস্থিতি। এসব দৃশ্য খুব সহজেই মূর্ত করে তুলছে ভালোবাসা দিবসের অস্তিত্ব। দিবসটি সম্পর্কে মতভেদ থাকলেও এ দেশে পাশ্চাত্য দুনিয়ার মতো ভালোবাসা দিবস উদ্যাপন করা হচ্ছে।
প্রেম-ভালোবাসার সঙ্গে এই দিবসের যোগসূত্র খুঁজতে গিয়ে কবি ও দার্শনিক জিওফ্রে চসার কথা বলেন বোদ্ধারা। ইংরেজি সাহিত্যের পিতা হিসেবে পরিচিত মধ্যযুগের খ্যাতিমান কবি জিওফ্রে চসার ‘অগণন পাখির সমাবেশ’ (১৩৮২) শিরোনামে ৭০০ লাইনের কাব্যগ্রন্থে লেখেন, ‘এই তো ভালোবাসা ভ্যালেনটাইনের দিনে/সব পাখির পরাণ পোড়ে/প্রিয়তমের তরে…।’ ইংরেজ রাজা দ্বিতীয় রিচার্ড ও আন্নে বোহেমিয়ার বিয়ের এক বছর পূর্তিতে তাঁদের সম্মানে কবিতাটি লেখেন এই কবি।
উন্মুক্ত তথ্যকোষ উইকিপিডিয়া বলে, ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেইন্ট ভ্যালেনটাইন নামের একজন খ্রিস্ট্রীয় পাদ্রি ও চিকিৎসককে ধর্ম প্রচারের অভিযোগে বন্দি করেন তখনকার রোমান সম্রাট ক্রাডিয়াস। কারাবাসে তিনি দৃষ্টিহীন এক মেয়ের সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। এতে ভ্যালেনটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে সম্রাট তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ওই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।
৪৯৬ সালে পোপ প্রথম সেইন্ট জেলাসিয়াস ভ্যালেনটাইনের স্মরণে দিনটিকে ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন। ধীরে ধীরে এই দিবসটি ভোগের উৎসবে পরিণত হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার ভ্যালেনটাইন উত্সব নিষদ্ধি করে। পরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানিতে বিভিন্ন সময় প্রত্যাখ্যাত হয় এই উৎসব।
এর পরও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে দিবসটির সৌরভ। যুদ্ধবাজ রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ২৭০ সালে রোমান তরুণ-যুবকদের যুদ্ধে মনোযোগী করতে বিয়ে বেআইনি ঘোষণা করেন। এ আইনের বিরুদ্ধে সেইন্ট ভ্যালেনটাইনের সংগ্রাম ছিল কার্যত স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রাম। এখন সেই মহান ভ্যালেনটাইনের প্রেমের সংগ্রামী চেতনা থাকুক বা না থাকুক, ভালোবাসাটুকু ঠিকই ছড়িয়ে আছে।
অনুষ্ঠান
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির মুনীর চেৌধুরী মিলনায়তনে ‘ভালোবাসা চিরঞ্জীব’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মাস্তুল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সকাল ১১টায় ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরেও রয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান।