অবরোধে গাড়িতে পেট্রোল বোমা ও আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার সকালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ক চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এটা তো মানুষ খুন করা। এরা তো খুনের দায়ে অভিযুক্ত। এটা তো গণহত্যা করা। বিএনপি-জামাত জোট মিলে গণহত্যা চালাচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারো পক্ষেই তাদের এ ধরনের নৃশংসতা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের নির্মম কর্মকা- বন্ধ করতে আল্লাহ তাদের সুমতি দিন।’
চলমান অবরোধে গত ৫৩ দিনের সহিংসতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। মানুষ তাদের এই ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে সাড়া দেয়নি। এ জন্য তারা পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার কৌশল নিয়েছে।
“বাসে সাধারণ যাত্রী চলাচল করে, সেখানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ যাচ্ছে- সেখানে পেট্রোল বোমা মারছে বা বোমা মারছে। এটা কোন ধরনের জুলুম?”
ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষের গা লক্ষ্য করে বোমা মারা হচ্ছে, পেট্রোল বোমা মারা হচ্ছে। মানুষকে পোড়ানো, মানুষকে মারা- এটাই হচ্ছে যেন আন্দোলন।নিরীহ, সাধারণ, খেটে খাওয়া মানুষের গায়ে আগুন দেওয়া হচ্ছে। ট্রেন লাইনের ফিস প্লেট খুলে, ট্রেন ফেলে, অ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়ে মানুষ মারা। সিএনজি, রিকশা কোনো কিছু বাদ যাচ্ছে না। এমনকি লঞ্চেও আগুন দিচ্ছে।”
সম্প্রতি মুরগির বাচ্চা বোঝাই একটি ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মুরগির বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছে। সেটাও রেহাই পায় নাই, আগুন দেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের বীভৎসতা?”
এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা কোন ধরনের রাজনীতি? এটা তো রাজনীতি না। এটা সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড।
“শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে পোড়ানো হচ্ছে।এটা সহ্য করা যায় না।এটা খুব দুঃখের, খুব কষ্টের।”
“একটা মানুষ কীভাবে অন্য মানুষকে পুড়িয়ে মারছে,” প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
৬ দশমিক ২ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন, মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৯০ ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার কমে ২৪ শতাংশে নেমে আসা সহ সরকারের অর্জিত সাফল্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যদি দেশ চালাতে ব্যর্থ হতাম- তাহলে বুঝতাম সরকার উৎখাতের আন্দোলন। বাংলাদেশে তো ব্যর্থতার কোনো চিহ্ন নেই।”
অনুষ্ঠানে অগ্নিদগ্ধদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
আন্তরিকতার সঙ্গে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। এই সীমিত সম্পদ নিয়েও আপনারা দিন-রাত খেটে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের যে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন সেজন্য আমি জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।”
দ্য সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনস বাংলাদেশ (এসপিএসবি) এর আয়োজনে ৪ দিনের এই সম্মেলনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালিক বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া সোসাইটি অফ প্লাস্টিক সার্জনস বাংলাদেশের সভাপতি ডা. সামন্ত লাল সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, এসপিএসবি মহাসচিব ডা. মো. আবুল কালাম, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অঞ্জন কুমার দেব বক্তব্য রাখেন।