বাংলাদেশের দর্শকেরা সেরা দর্শক। স্বাগতিক হিসেবে ২০১১ বিশ্বকাপে সেটা আমরা দেখিয়ে দিয়েছি।
৫৮ বিপর্যয়ের পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাসে ছোড়া ঢিল আমাদের মাথা নিচু করেছিল, তবে ওটা ছিল একজন মাত্র অবিমৃষ্যকারীর কাণ্ড! এর বাইরে আমাদের আচরণ ছিল খেলোয়াড়সুলভ, আমরা অন্য দেশের সমর্থকদের সম্মান জানিয়েছি, আতিথেয়তা করেছি।
এমনকি পাকিস্তান বা ভারতের সমর্থকেরাও আমাদের কাছ থেকে সামান্যতম বিরূপ ব্যবহার পাননি। এশিয়া কাপে শচীন তেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরির পরে সবাই দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছি।
তার পরেও মনে হয়, ক্রিকেটপাগল জাতি হিসেবে আমাদের আরেকটু পরিপক্কতার পরিচয় দিতে হবে। আমরা কেবল মাশরাফি তামিম সাকিবের কাছ থেকে সেরা খেলাটা চাই, তা নয়, আমাদেরও সেরা আচরণটা দিতে জানতে হবে।
এবার বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানো অনেক বড় ঘটনা, আর খেলাটা যেভাবে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গিয়েছিল, ১০ বলে ১৬ এর মতো সমীকরণ যখন আমাদেরকে উদ্বেগে দমবন্ধ করে মারছিল, তখনই পরপর দুটো উইকেট বোল্ড করে ফেলে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া বাঁধভাঙা হওয়াই স্বাভাবিক।
আমরা তো ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বই, রাস্তায় নাচানাচি করব। রংও ছিটানো বিচিত্র নয়। কিন্তু আমাদের এই আনন্দ উচ্ছ্বাস যেন কারও বেদনার কারণ না হয়। এবারেও মেয়েরা অভিযোগ করেছেন, তারা ছেলেদের বেপরোয়া কিংবা উদ্দেশ্যমূলক রং-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মারামারি হয়েছে, পুলিশ দুজনকে ধরেও নিয়ে গেছে।
আমরা আশা করি, দোয়া করি, প্রার্থনা করি, কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা যেন জয়লাভ করি। বড় কোনো দল, ভারত কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আমরা হারাব। তাহলে সেদিনের উচ্ছ্বাসটা কী রকম হবে?
আমরা কি রাস্তায় গাড়ির ওপরে লাফিয়ে গাড়ি ভাঙব? মেয়েদের হলের দিকে ধেয়ে যাব? পথচারীদের নির্বিচারে রং দেব?
আমরা কেবল আমাদের খেলোয়াড়দের কাছে শ্রেষ্ঠতম পারফরমেন্স চাইব, কিন্তু দর্শক হিসেবে, সমর্থক হিসেবে সুন্দরতম আচরণ করব না, করার কথা ভাবব না, প্রচার করব না, সেটা হয় না।
আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হেইট স্পিচ প্রচার করা ভালো লক্ষণ নয়। এক্ষেত্রেও আমাদের শালীন ও সংযত হতে হবে। ওরা অধম হতে পারে, তাই বলে আমরা উত্তম হব না কেন?
আমরা আমাদের হাজার বছরের সভ্যতার নিদর্শন দর্শক হিসেবে, সমর্থক হিসেবে তুলে ধরব পৃথিবীর কাছে। আর আমার পাশের জন যেন আমার আনন্দ উদযাপনের কারণে দুঃখ না পান। এবং কোনো পুরুষের আচরণে কোনো নারী যেন দুঃখ না পান। আহত বোধ না করেন।
আমরা যেন বড় সাফল্য অর্জন ও ধারণের যোগ্য করে নিজেদের গড়ে তুলতে পারি।
লেখক: সাংবাদিক, কথা-সাহিত্যিক, নাট্যকার, কলাম লেখক
(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)