বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে এদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের ৪৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকেট ও সদ্য সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা।
আর ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকেট বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল তা ধীরে ধীরে কেটে উঠছে।’
বাংলাদেশের প্রশংসা করে বিসওয়াল বলেন, “বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলতে অন্যের ওপর নির্ভরতার প্রয়োজন পড়বে না।”
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন অনেক গভীর বলে এসময় মন্তব্য করেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই মার্কিন কূটনীতিক।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায় প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ওই বটগাছ গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এসে ঐতিহাসিক ওই স্থানেই একটি বটগাছের চারা লাগান প্রয়াত সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, যিনি মুক্তিযুদ্ধকালে মার্কিন নীতির তুমুল বিরোধিতা করে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তার লাগানো চারা গাছটিই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক হিসেবে।
সম্পর্কের বিস্তৃতি বোঝাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাগানো বটগাছের চারা প্রসঙ্গ টেনে বিসওয়াল বলেন, “৪৪ বছরে ওই চারা গাছটি এখন পরিপূর্ণ একটি বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ডালপালা বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে শেকড়ও অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে। সে বৃক্ষটি এখন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জীবন্ত উদাহরণে পরিণত হয়েছে।”
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে বলেও মন্তব্য করেন বিসওয়াল।
বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়েছে এবং নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার বলেই তারা এগিয়ে চলেছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে যেতে আমরা বাংলাদেশের মানুষের পাশে ছিলাম এবং সব সময় থাকব।”
অনুষ্ঠানে ঢাকায় বর্তমান রাষ্ট্রদূত বার্নিকেট, মজীনাসহ পাঁচ সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কয়েকজন কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ইঙ্গিত করে বিসওয়াল বলেন, “বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এতোটাই জোরালো ও গভীর বলেই আমরা অনেকে এসেছি স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে।”উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে রাষ্ট্রদূত বার্নিকেট বলেন, “নতুন কর্মস্থল হিসেবে বাংলাদেশে আমি খুব এনজয় করছি। খুব ভালো লাগছে।”
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ক্রমশ ভালোর দিকে যাচ্ছে।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে বলেন, “আমি নিজেকে বাংলাদেশি মনে করি। সেজন্য এখানে এসেছি সকলের সাথে কথা বলতে। আই মিস বাংলাদেশ সো মাচ।”
অনুষ্ঠানে অতিথিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। তিনি বলেন, “আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। সুশাসন ব্যতীত উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব নয় বলেই শেখ হাসিনার সরকার যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।”