১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে টানা তিনবার সাফল্য পেয়ে বিশ্বকাপ জয়ের ‘হ্যাটট্রিক’ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। গতবার ফিরতে হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে। তবে এবার রাজসিক ঢংয়েই চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। রোববার ফাইনালে পাত্তাই পায়নি নিউজিল্যান্ড। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সহজেই ৭ উইকেটে জিতে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপার আনন্দে ভেসে যাচ্ছে অস্ট্রেলীয়রা।
অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কের বিদায় এর চেয়ে রঙিন হতে পারত না! ফাইনালের আগের দিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রোববারই হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ ওয়ানডে। বিদায়ী ম্যাচে ৭৪ রান করে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের অন্যতম নায়ক ক্লার্ক। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ৫৬ রানে অপরাজিত ছিলেন স্টিভেন স্মিথ।
১৮৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় এবং নিজের প্রথম ওভারেই অ্যারন ফিঞ্চের (০) ফিরতি ক্যাচ নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে দারুণ সূচনা এনে দেন বাঁহাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্ট। তবে ডেভিড ওয়ার্নার আর স্টিভেন স্মিথের দৃঢ়তায় ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে গড়েন ৬১ রানের জুটি।
ওয়ার্নার আস্থার সঙ্গেই খেলছিলেন। তবে ৪৫ রান করে ম্যাট হেনরিকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে গ্র্যান্ট এলিয়টের হাতে ধরা পড়েন এই বাঁহাতি ওপেনার। ত্রয়োদশ ওভারে ওয়ার্নারকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া পরিণত হয় দুই উইকেটে ৬৩ রানে।
তবে ক্লার্ক-স্মিথের দৃঢ়তায় জয় পেতে সমস্যা হয়নি। তৃতীয় উইকেটে দুজনের ১১২ রানের জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপার ভিত রচিত। ক্লার্কের ৭২ বলের অধিনায়কোচিত ইনিংসটা সাজানো ১০টি চার ও একটি ছক্কায়।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের হোঁচট খাওয়া শুরু প্রথম ওভারেই। মিচেল স্টার্কের করা দিনের পঞ্চম বলেই বোল্ড হয়ে যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। কিউই অধিনায়ককে ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩২ রান ওঠার পর আবার আঘাত। এবার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বোল্ড করেন অন্য ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে। পরের ওভারে মিচেল জনসন কেন উইলিয়ামসনের ফিরতি ক্যাচ নিলে স্কোর দাঁড়ায় ৩৯/৩।
চতুর্থ উইকেটে রস টেলর আর এলিয়টের ১১১ রানের জুটি কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছিল কিউই শিবিরে। কিন্তু দ্বিতীয় পাওয়ারপ্লের শুরুতে, ৩৬তম ওভারের প্রথম বলে জেমস ফকনার টেলরকে (৪০) কট বিহাইন্ড করার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ফেলা নিউজিল্যান্ড।
ঐ ওভারের পঞ্চম বলে কোরি অ্যান্ডারসনকে বোল্ড করেন ফকনার। স্টার্কের করা পরের ওভারে লুক রনকি ক্যাচ দেন স্লিপে থাকা মাইকেল ক্লার্ককে। দুজনের কেউ রান করতে পারেননি।
এরপর একাই খেলতে হয়েছে এলিয়টকে। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ফাইনালেও দলের পরিত্রাতা। রোববার তাঁর অবদান ৮২ বলে ৮৩ রান। কিন্তু ৭টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো এলিয়টের দৃঢ়তাভরা ইনিংস দুশ রানও এনে দিতে পারেনি ৩৩ রানে শেষ ৭ উইকেট হারানো কিউইদের।
অস্ট্রেলিয়ার তিন বাঁহাতি পেসারই শেষ করে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডকে। জনসন ও ফকনার নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। স্টার্কের শিকার দুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড : ৪৫ ওভারে ১৮৩ (গাপটিল ১৫, ম্যাককালাম ০, উইলিয়ামসন ১২, টেলর ৪০, এলিয়ট ৮৩, অ্যান্ডারসন ০, রনকি ০, ভেট্টরি ৯, সাউদি ১১, হেনরি ০, বোল্ট ০*; জনসন ৩/৩০, ফকনার ৩/৩৬, স্টার্ক ২/২০, ম্যাক্সওয়েল ১/৩৭)