মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন করা হয়েছে। তাঁর আইনজীবী শিশির মনির গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
শিশির মনির বলেন, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাঁর সঙ্গে দেখা করে। তিনি বলেন, ‘আজ বিকেল ৪টায় দেখা করার অনুমতি চেয়েছি আমরা। এ জন্য বেলা ১১টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে আমরা কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করব। দেখা করার পর রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এর আগে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের ওই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেছিলাম। আশা ছিল, পুনর্বিবেচনার রায়ে তিনি খালাস পাবেন। আদালত আজ আবেদনটি খারিজ করে নিষ্পত্তি করে দেন।’
কামারুজ্জামানের রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য আসামিপক্ষ আজ থেকে সাতদিন সময় পাবেন। যদি তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে মার্সি পিটিশন (প্রাণভিক্ষা) না করেন, তবে সাতদিন পর যেকোনো সময় দণ্ড কার্যকর হতে পারে। আসামিপক্ষ যদি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন, সে ক্ষেত্রে আবেদনটির বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কী সিদ্ধান্ত নেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
এ ছাড়া প্রাণভিক্ষার আবেদন যদি নাকচ হয়, তবে তাঁর আত্মীয়স্বজন দেখা করার সুযোগ পাবেন। এর পর কারাবিধি অনুযায়ী যেকোনো সময় দণ্ড কার্যকর করা যাবে বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
রাষ্ট্রপতির কাছে মানবতাবিরোধী অপরাধীরা প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘সংবিধানে বিষয়টি এখনো সংশোধন করা হয়নি। এ কারণে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
আজ সোমবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।