ভারতীয়দের কাছে তিনি ক্রিকেটের ঈশ্বর; বিশ্ব ক্রিকেটের ‘মহানায়ক’। সেই শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে হাতের কাছে পেয়ে আনন্দের সাগরে ভাসল নারায়ণগঞ্জের শিশু-কিশোররা। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনল ‘ক্রিকেট অধীশ্বরের’ একেকটা বাক্য।
‘কেমন আছো বন্ধুরা? আমি ভালো আছি’- বলছিলেন বাংলায়। নিজেদের ভাষায় তার কথা শুনে উল্লাসে ফেটে পড়ে শতশত শিশু-কিশোর। করতালির মাধ্যমে জানায় স্বাগত।
মঙ্গলবার দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে স্যানিটেশন ও সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে তারাবো নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়েছিলেন ইউনিসেফের এই বিশেষ দূত।
এর আগে কালো হেলিকপ্টারে চড়ে লুৎফর রহমানের সঙ্গে তারাব এলেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। হেলিকেপ্টার থেকে নেমেই বিশ্বরোড বালুর মাঠে একটি আম গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। পরে স্কুল মাঠে উপস্থিত শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে করেন বলেন, “আমি এসেছি তোমাদেরকে স্যানিটেশন ও গাছ লাগানো সম্পর্কে কিছু শেখাতে।”
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থীকে স্যানিটেশন পদ্ধতিতে হাত ধোয়া শেখান শচীন। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার হাতে তুলে দেন আএফআইসি ব্যাংকের দেওয়া পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক।
শচীন মূলত ঢাকায় এসেছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগের ক্লাব গাজী ট্যাঙ্কের পরিবর্তিত নাম ‘লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ’ ও এর নতুন লোগো উন্মোচন করতে। দলটির চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাদলের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণেই বাংলাদেশে আসেন তিনি।
তারাবো নোয়াপাড়া স্কুল মাঠে নাতিদীর্ঘ ২৫ মিনিটের আয়োজন শুধু সচেতনতাই তৈরি করেনি, এক ঈর্ষণীয় স্মৃতির অধিকারী করেছে শিশু-কিশোর আর উপস্থিত জনতাকে।
সকালের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন চিত্র বিকেলের অনুষ্ঠানে। প্রখর রোদে নয়, এই বেলার অনুষ্ঠানটা সোনারগাঁও হোটেলের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বলরুমে। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জায়গায় এখানে দর্শক সারিতে ছিলেন অধিনায়ক সাকিবসহ লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের খেলোয়াড়েরা, আমন্ত্রিত হিসেবে ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার, আইসিসির সভাপতি, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, বিসিবি কর্মকর্তাসহ ক্রীড়াঙ্গনের অনেক মুখ।
লেজার শোর মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনীর পর হলো লোগো ও জার্সি উন্মোচন আর গ্রুপ ছবি তোলার পর্ব। সংক্ষিপ্ত কিন্তু স্পষ্ট বক্তব্যে টেন্ডুলকার তুলে ধরলেন বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর জীবনের আবেগের অংশটুকু, ‘বাংলাদেশে প্রতিটা সফরই আমার কাছে বিশেষ কিছু। প্রতিটাই স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপে খেলতে আসার কথা মনে আছে। এরপর এসেছি বাংলাদেশের জন্য গৌরবময় এক মুহূর্তে, বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেকে।’ প্রশংসা করলেন বাংলাদেশের দর্শকদের, নস্টালজিক হয়ে ফিরে গেলেন ঢাকায় সুনীল গাভাস্কারের রেকর্ড ছোঁয়ার স্মৃতিতেও, ‘৩৪তম টেস্ট সেঞ্চুরি করে সুনীল গাভাস্কারের রেকর্ড ছোঁয়ার কথা মনে আছে আমার। গাভাস্কার স্বয়ং মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাকে অভিনন্দন জানানোর জন্য।’ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল গাজী ট্যাঙ্কের নাম পরিবর্তনের জন্য গত বছর বিসিবির কাছে আবেদন করেছিলেন লুৎফর রহমান বাদল। নতুন নাম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।’ ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট রং হারিয়েছে অনেক আগেই। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অতিথি হয়ে আসা শচীন টেন্ডুলকার যেন সেই বর্ণহীন ক্লাব ক্রিকেটে লাগিয়ে দিলেন এক পোচ নতুন রং।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি শতক, টেস্ট-ওয়ানডে দুই ধরনের ক্রিকেটেই সবচেয়ে বেশি রান ও শতকসহ ব্যাটিংয়ের বহু রেকর্ড টেন্ডুলকারের অধিকারে। গতবছরের নভেম্বরে বিশ্রামে যান তিনি।
ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর এটিই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।