সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বমহিমায় ও সসম্মানে আবার অধিষ্ঠিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন ইতিহাসকে তিনি দৃষ্টির ভিতরে রাখেন এবং জনমতকে মূল্যায়ন করতে জানেন। সৈয়দ আশরাফুলকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা ভুল কি সঠিক ছিল তা বাইরে থেকে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে আদেশ পরিবর্তন করে প্রথাগতভাবে এতদিন প্রধানমন্ত্রীর নিজের হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান অবশ্যই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবাহী। তাই সমগ্র ঘটনার বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন অনেক রকম হবে সেটাই স্বাভাবিক। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সৈয়দ আশরাফকে ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী চমক সৃষ্টি করেছেন। ঘটনার পেছনেও ঘটনা থাকে। কোনটি সঠিক তা কেবল ভবিষ্যৎই বলবে। তবে দফতরবিহীন মন্ত্রী করার প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর যে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তাতে সমগ্র ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে সৈয়দ আশরাফের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। এতে শেখ হাসিনার হাত আরও শক্তিশালী হলো।
এ কারণেই বোধহয় একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, দলের অভ্যন্তরে সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধবাদীদের মুখ বন্ধ করার জন্য এটা ছিল শেখ হাসিনার একটা কৌশলী পদক্ষেপ। রাজনীতির অস্ত্র হলো কৌশল। চক্রান্ত, হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের দ্বারা ক্ষণকালের জন্য ক্ষমতা দখল করা যায়, রাজনীতি হয় না। আধুনিক সিঙ্গাপুরের স্থপতি লি কুয়ান তার আত্দজীবনীতে বলেছেন- বিরুদ্ধবাদীদের ঘায়েল করার জন্য তিনি সব সময় পকেটে ছুরি লুকিয়ে রাখতেন। কখন কোন অস্ত্র কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন তা কেউ জানত না। যথাসময়ে সঠিক কৌশলের ব্যবহারকে বলা হয় রাজনৈতিক প্রজ্ঞা। আর ভুল হলে তা শুধরিয়ে নেওয়াকে বলা হয় রাজনৈতিক সাহস।
জওহরলাল নেহরু নাইনী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৯৩০ সালের ২৬ অক্টোবর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধীর তেরতম জন্মদিনের উপহার হিসেবে একটি অসাধারণ চিঠি লিখেছিলেন। তাতে তিনি মেয়ের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ভয় পাওয়ার মতো কাজ না করলে যে সাহস একজন মানুষের মনে সৃষ্টি হয় তার সঙ্গে অন্য কোনো গুণের তুলনা হয় না’। প্রজ্ঞা ও সাহস ব্যতিরেকে সরকারে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায়, কিন্তু রাষ্ট্রনায়ক হওয়া যায় না। ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি কখনো কারও জন্য ভালো হয়নি। পঁচাত্তরের পর যারা ক্যু, হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছেন বা এসেছেন তাদের শেষ পরিণতি যে ভালো হয়নি এবং হবে না, বাংলাদেশে তার প্রমাণ আমরা আগেও দেখেছি, এখনো দেখতে পারছি। দৃষ্টি প্রসারিত করলেই দেখা যায়।
বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা হয়েছে ঘরপোড়া গরুর মতো, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস হলো হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। যুগে যুগে বাংলাদেশে মীর জাফরদের জন্ম হয়েছে এবং এখনো তা অব্যাহত আছে। অনেক কঠিন সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পাওয়ার জন্য যারা মনে করেন এখনো আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই তাদের কাছে মনে হয়েছে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবাদীরা নিজেদের মধ্যে নেতৃত্ব এবং চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্বের সীমানা বজায় রাখতে অতীতে যেমন ভুল করেছেন, এখনো করছেন। তারা চাওয়া-পাওয়ার দ্বন্দ্বে এতটাই অন্ধ হয়ে যান, তাতে নিজেরাই যে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছেন তা বুঝতে পারেন না। পঁচাত্তরে প্রমাণ হয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আঘাত হানলে কেউ রক্ষা পাবেন না।
পঁচাত্তরে তাজউদ্দীন, শেখ মণি কেউ বাঁচতে পারেনি। আওয়ামী লীগ একটি মাল্টিক্লাস তৃণমূলভিত্তিক দল। এ দলে কে কখন কোন ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ছে তা নির্ণয় ও ট্রেস করা অনেক কঠিন কাজ। খন্দকার মোশতাক ও তার সহযোগীরা ক্ষমতার চূড়ায় উঠেছেন এবং মশহুর রাজাকারের পুত্র শফিউল আলম প্রধান স্বাধীনতার পরপর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের ভিতরে প্রগতিশীল অংশের নিজেদের মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের কারণে তারা এই সুযোগ পেয়েছেন। আসল ভয়ের জায়গাটি এখানে। আওয়ামী লীগের মতো দলে বিভীষণ ও মেঘনাদ দুই পক্ষই থাকবে। কারা বিভীষণ আর কারা মেঘনাদ সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।
অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ণ, ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে নিজের কাজ সম্পাদন ও তার জবাবদিহিতা নয়, তোষামোদী, স্তাবকী, চাটুকারিতা এবং অন্যের গিবত-বদনাম করাই নিজের টিকে থাকার প্রধান অবলম্বন হয়। রাজনীতিতে প্রগতিশীল ও প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। নিজ দলের প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী, একাত্তরের পরাজিত শক্তি, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ, এ তিন পক্ষের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর দোষ তিনি প্রগতিশীল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিতে ছিলেন অটল, অবিচল ও আপসহীন। প্রাসঙ্গিকতার খাতিরে ১৯৭২ সালে ২৩ মার্চ গণভবনে বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটা অংশের উদ্ধৃতি করছি।
বঙ্গবন্ধু সেদিন বলেছিলেন, “উপমহাদেশের গত কয়েক যুগের রাজনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য ও দুর্ভোগের মূল কারণ সাম্প্রদায়িকতা। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতায় রূপ দেওয়া হয়েছে। এটা সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তের ফল। আগে যা ছিল সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে হানাহানি, এখন সেটা রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে হানাহানির রূপ ধারণ করেছে। ভারত বিরোধিতা এ রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতার একটা ছদ্ম আবরণ। কয়েক শতাব্দীর সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত এবং অভিশপ্ত সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ হিসেবেই স্বাধীন, জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের অভ্যুদয়। আমরা যদি সব প্রতিকূলতার মধ্যে সেক্যুলার বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারি, তাহলে এ উপমহাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা সফল হবে।
জনগণের দুঃখ, দারিদ্র্য ও অভাব মোচনের জন্য এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি হচ্ছে একটা পূর্বশর্ত” (ইতিহাসের রক্তালাশ- আবদুল গাফফার চৌধুরী)। মনে হয় বঙ্গবন্ধু সবই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগের প্রগতিশীল অংশের অন্যতম স্তম্ভ তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ছিটকে পড়লেন। খন্দকার মোশতাক ও গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর আরও কাছে চলে আসার সুযোগ পেলেন। মূল দল আওয়ামী লীগের এই দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ল সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে।
তারই জের ধরে ১৯৭৪ সালের ৫ এপ্রিল সূর্যসেন হলে সাত মার্ডারের ঘটনা ঘটল। মাঝরাতে ব্রাশফায়ারে নিহত হলেন ছাত্রলীগের সাতজন নেতা। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা তখনকার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আজকের ২০-দলীয় জোটের নেতা শফিউল আলম প্রধান। শফিউল আলম প্রধানের বিচার ও শাস্তি হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান সামরিক আইনের ক্ষমতায় তাকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। পঁচাত্তরের পরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ও তাদের প্রতিভূদের দীর্ঘ সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে ধনেজনে ওদের শক্তিমত্তা এখন প্রবল। ফলে বর্তমান সময়ে প্রগতিশীলদের সঙ্গে প্রতিক্রিয়াশীলদের সংঘাত এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরও প্রকট ও কঠিন। তাই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও বাঙালি সংস্কৃতির একমাত্র শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যুহ আওয়ামী লীগের ভিতরে প্রগতিশীল অংশকে দুর্বল হতে দেখলে মানুষ শঙ্কিত হয়। যার কারণে সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হলে এবং তার দেশ ত্যাগের কথা শুনে প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ প্রমাদ গুনেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, দেশ ও মানুষের প্রতি তার অঙ্গীকার আছে। ২০০৯ সালের শুরুতে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত একেকটি পাহাড়সম বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশকে একটি মর্যদাপূর্ণ অবস্থানে এনেছেন। কিন্তু পুঁজিবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রভাবে চরম ভোগবাদী ভাইরাস আজ রাজনীতিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। টাকার প্রতি অতি লোভী ও সংকীর্ণ স্বার্থপরায়ণ নেতা, সে বাহ্যিকভাবে যতই আনুগত্য দেখান না কেন, শত্রুপক্ষের লোভনীয় কোনো প্রস্তাব পেলেই সে সব কিছু করতে পারে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু তার- ‘গি্লমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্টরি’ বইয়ের এক জায়গায় বলেছেন, ‘হীনভাবে অনুগত কাউকে দয়া করা যেতে পারে, তাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া যায় না’।
এখন চারদিকের পাঁচ ফ্রন্টে শেখ হাসিনা একাই সেনাপতি ও সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করছেন। নিজের দলকে সামলানো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া চরম বৈরী পক্ষের মোকাবিলা, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর চক্রান্তের চ্যালেঞ্জ এবং উগ্রবাদী জঙ্গি সন্ত্রাসীদের হুমকি থেকে রাষ্ট্র ও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সব ফ্রন্টের তিনিই সেনাপতি। একই সঙ্গে এবং একই কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ইস্যুটি আজ বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার নিজের অর্থমন্ত্রী জগৎ শেঠের বেআইনি টাকা পাচার বন্ধ করতে গিয়েই মুর্শিবাদের ব্যবসায়ী এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। শেখ হাসিনা আজ এত ফ্রন্টে একা যুদ্ধ করতে গিয়ে কাকে কখন শত্রুতে পরিণত করছেন তা হয়তো তিনি নিজেও সব সময় জানেন না। তাই সৈয়দ আশরাফের মতো আদর্শবাদী দৃঢ়চেতা লেফটেন্যান্ট তার আশপাশে থাকা একান্ত প্রয়োজন। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে নিরাপত্তার প্রশ্নে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়ার উপায় নেই। চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিছানো জালে কার পা যে কখন পড়বে তা আগাম বলা যায় না।
রাশিয়ার বলশোভিক বিপ্লবের ব্রিলিয়ান্ট নেতা, প্রচণ্ড বাগ্মী ও নিষ্ঠাবান সংগঠক ছিলেন ট্রটস্কি। ট্রটস্কির পাশে স্ট্যালিনকে সাধারণ মনে হতো। অনেকে মনে করেন ১৯২৪ সালে লেনিনের মৃত্যুর পর স্ট্যালিনের পরিবর্তে ট্রটস্কি সোভিয়েত ইউনিয়নের হাল ধরলে এত তাড়াতাড়ি বোধহয় সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতন হতো না। কিন্তু পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ট্রটস্কি হন দেশছাড়া এবং স্ট্যালিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সুদূর মেক্সিকোর এক নিভৃত শহরের একটি সুরক্ষিত বাড়িতে স্ত্রীসহ ট্রটস্কি আশ্রয় নেন। ট্রটস্কির দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সেক্রেটারি ছিলেন শিক্ষিত ও স্মার্ট এক মার্কিন মহিলা ‘সিলভিয়া এজলভ’। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্ট্যালিনের কেজিবি ও হিটলারের গোয়েন্দা গেস্টাবো বাহিনীর বিছানো জালে সিলভিয়া নিজের অজান্তেই আটকা পড়ে যান। ১৯৪০ সালের ২০ আগস্ট সুরক্ষিত বাড়ির ভিতরে সিলভিয়া ও তার প্রেমিক স্পেনীয় নাগরিক র্যামন মার্কেডারের ছুরির আঘাতে ট্রটস্কি নিহত হন।
স্ট্যালিনের কবল থেকে পালিয়ে নিউইয়র্কে আশ্রয় নেওয়া কেজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আলেকজান্ডার অরলভ একটি গোপন চিঠিতে ট্রটস্কিকে আগেই সতর্ক করেছিলেন, তিনি যেন আগন্তুকদের সম্পর্কে সজাগ হন এবং ঘনিষ্ঠজনদের ব্যাপারে ডাবল ডাবল চেক রাখেন। কিন্তু ট্রটস্কি অরলভের চিঠিকে গুরুত্ব দেননি, বরং ভুল বুঝেছেন। জননেতাদের নিরাপত্তা ও জনসংযোগের সীমানা নির্ধারণ করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। ফিরে আসি আজকের মূল প্রসঙ্গে। রাষ্ট্রের মৌলনীতি সম্পর্কে শতভাগ বিপরীতমুখী চরম বিভাজনের রাজনীতিতে আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি আস্থাবান সৎ নেতা-কর্মীর প্রয়োজন যত বেশি, পাওয়া তত কঠিন। কারণ পুঁজিবাদী ভোগবিলাসের টানে আদর্শ এখন শিকায় উঠেছে। এখন আদর্শ হলো, যত পার টাকা হস্তগত এবং বিদেশে পাচার কর।
বিপদ দেখলে বিদেশে চলে যাওয়া যাবে। এদের কাছে দেশপ্রেম শুধুই মুখের বুলি, টাকা উত্তোলন ও আহরণের অবলম্বন মাত্র। এ রকম পরিস্থিতিতে আশরাফুল ইসলামকে নিয়ে দুটি বিপরীতমুখী কথা চালু আছে। প্রথমত, তিনি আদর্শবাদী, নেতৃত্বের প্রতি আস্থাবান এবং তার সততা প্রসঙ্গে কোনো প্রশ্ন নেই। দ্বিতীয় কথা তিনি কর্মতৎপর নন, দলের ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের প্রতি তিনি সুবিচার করছেন না। তবে বাংলাদেশের মতো ষড়যন্ত্রকবলিত রাজনীতিতে একটি কথা আজ বড় সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাহলো A friend in need is a friend indeed বিপদেই বন্ধুর পরিচয়। সৈয়দ আশরাফ বিগত দিনের দুঃসময়ে সেই পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে হয়। তাই লেখার শুরুতে বলেছিলাম ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। সুতরাং সৈয়দ আশরাফের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি কোনো চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে তবে আপাতত সেটি ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।-বিডিপ্রতিদিন
লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
[email protected]