চামেলী খাতুন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক নারী ক্রিকেটার। মনে আছে নামের এই মেয়েটির নাম? চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর দিকে ঝুকে পড়া সেই মেয়েটি। গত ১৯টা দিন তার তার কাছে ছিল ১৯ বছরের সমান। শোকে যেন পাথর হয়ে গেছেন চামেলী।
২১ দিন হলো ঢাকায় এসেছেন। এই ২১ দিনের প্রথম দুই দিন তাকে নিয়ে সরগরম ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রধানের কার্যালয়েও। দেশের গণমাধ্যম কর্মীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল তার গ্রামের বাড়িতে। বাদ যায়নি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালও। কিন্তু কী হয়েছে তাতে?
শুধু আশ্বাসই পেয়ে গেলেন সবার। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে শুরু করে জাতীয় দলের টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান কিংবা রুবেল হোসেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে আশ্বাস দিলেও শেষপর্যন্ত চামেলী লড়ছেন একাই।
পঙ্গু হাসপাতালে প্রথম দুই দিন ছাড়া গত ১৯ দিনই চিকিৎসার ব্যয়ভার চালাচ্ছেন নিজেই। চামেলীর একটাই আকুতি, আমার জন্য কিছু করেন। আমি এভাবে শেষ হতে চাই না!
আজ সোমবার বিকেলে চামেলী খাতুন মুঠোফোনে কথা বলেছেন আরটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে লেখা হচ্ছে, আপনার পাশে কেউ নেই। প্রথম দিকে খোঁজ নেয়া হলেও এখন নিচ্ছে না- এটা কতটুকু সত্য?
‘প্রথম দিকে বেশ কিছুদিন খোঁজ-খবর নিয়েছেন অনেকেই কিন্তু এখন কোনও খোঁজখবর নেই। আমি জানি না তারা তাদের ব্যস্ততার জন্য খোঁজ নিতে পারছেন না নাকি এমনিতেই নিচ্ছেন না। তবে ট্রেইনাররা নিয়েছেন।’
গত কয়েকদিন ধরেই আছেন ঢাকার পঙ্গু হাঁসপাতালে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আশ্বাস ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খুব ঘটা করেই আনা হয় ঢাকায়। বলা হয়েছিল, তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বিসিবি নিবে। এতো আশ্বাস পাবার পর ঢাকায় এসে হতাশ চামেলী।
‘প্রথম দুইদিন বাদে এই ১৯ দিন ধরে আমার চিকিৎসা খরচ আমিই বহন করছি। আমার খোঁজ তো কেউ নিচ্ছেনই না উল্টো আমি ফোন দিলে আমার ফোনও ধরছেন না। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য যা কিছু করেছেন সেটা আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি এখন নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত আছেন, তাই হয়তো আমার খোঁজ নিতে পারছেন না।’
চামেলী হতাশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকাণ্ডে। গত কয়েকদিন বিসিবির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে যোগাযোগেও ব্যর্থ হোন তিনি।
চামেলীর দাবি, বিসিবির প্রধান নির্বাহী তাঁর ফোন নম্বর ব্লক করে রেখেছেন। ‘আমি খুব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, উনি আমার ফোন নম্বর ব্ল্যাকলিস্টে ফেলে দিয়েছেন।’
শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকেই নয়, চামেলীর পাশে থাকার কথা দিয়েছিলেন জাতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার। তারাও আর এখন কোনও খবর নিচ্ছেন না।
‘সাকিব ভাই আমাকে বলেছিল, আমি আপনার সাথে আছি। রুবেল ভাই আমার সাথে ছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা আমি টাকা চাই না, সাপোর্ট চাই। আর সেই সাপোর্টটাই আমি বিসিবি থেকে পাচ্ছি না।
সবশেষ চামেলীর আকুতি, তাকে যেন উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হয়। কোথায় চিকিৎসা করাবেন এসবেরও খোঁজ নিয়েছেন ইতোমধ্যে।
‘আমাকে খুব দূরে যেতে হবে না। ভারতের বেঙ্গালুরুতে খোঁজ নিয়েছি আমি। সেখানে যাবার জন্য ভিসাও করিয়েছি। এখন শুধু টাকার জন্য যেতে পারছি না। সম্পূর্ণ চিকিৎসার জন্য পাঁচ লাখ টাকা লাগবে।’সুত্র: আরটিভিঅনলাইন