ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এদিন আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানি দেবেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী। বেশি লাভের আশায় কৃত্রিম উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন তারা। স্টেরয়েড ইনজেকশন প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করেন এসব ব্যবসায়ী।
তবে এসব গরুর মাংস খাওয়া শরীরের ক্ষতিকর। শরীরে পানি জমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, মূত্রনালি ও যকৃতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোরবানির হাটে কীভাবে এসব গরু সহজেই চিহ্নিত করা যাবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম।
অধ্যাপক কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, সুস্থ প্রাণীর রং চকচকে থাকবে তবে এর কুঁজ থাকবে মোটা। চামড়া থাকবে টানটান। সুস্থ গরুর চামড়ায় কোনো দাগ থাকবে না। গরুর গায়ে স্পর্শ করা হলে সে স্থানে সেনসেশন দেখা যাবে। সুস্থ গরু সর্বদা চঞ্চল থাকবে। সুস্থ গরুর ক্ষেত্রেও যখন তাকে অনেক দূর থেকে হাঁটিয়ে হাটে নিয়ে আসা হয় তখন শরীরের তাপমাত্রা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু তা এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। সুস্থ গরুগুলো কোনো খাবার দেখলেই খাওয়ার আগ্রহ দেখাবে, খেতে চাইবে।
তিনি বলেন, যেসব গরুর মুখে কম লালা বা ফেনা থাকে, সেই গরু কেনার চেষ্টা করুন। সুস্থ গরু নিয়মিত জাবর কাটে। প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করা পশুর গায়ে চাপ দিলে মাংস খুব বেশি দেবে যাবে না। যতটুকু দেবে যাবে, তা সঙ্গে সঙ্গে আগের অবস্থায় চলে আসবে। সুস্থ গরুর নাকের ওপরের অংশ ভেজা বা বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা থাকবে।
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু কীভাবে চেনা যাবে সে বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন বাকৃবির এ অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর দেহ থলথলে থাকবে এবং দেহে পানির পরিমাণ বেশি বোঝা যাবে। নাক থাকবে শুকনা। গরু ঘন ঘন শ্বাস নেবে। একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাবে, সর্বদা ক্লান্ত দেখাবে। এসব গরুর দেহের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকবে। সহজেই খাবার খেতে চাইবে না, ক্ষুধামন্দার ভাব থাকবে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর মুখ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়তে থাকে। এই লালা ফেনাযুক্ত হতে পারে অথবা ফেনা ছাড়াও হতে পারে। নিয়মিত জাবর কাটবে না।’
অধ্যাপক কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর দেহের বিভিন্ন অংশে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মাংস বাড়তে থাকে। গায়ে আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ওই স্থানের মাংস দেবে যায় এবং আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে। ইনজেকশন দেওয়া গরুর রানের মাংস স্বাভাবিক গরুর রানের মাংসের চেয়ে অনেক নরম থাকে। হাড় খুবই নরম ও নমনীয় থাকবে। দুর্ঘটনাবশত যদি গরুটি পড়ে যায়, তাহলে তার হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর শরীর ভারী হয়ে যায়। বেশি পানি জমার কারণে সহজে হাঁটতে চায় না। এক জায়গায় বসে থাকে। এজন্য বসে থাকা গরুকে উঠিয়ে হাঁটিয়ে দেখা উত্তম।’
তথ্যসূত্র: জাগোনিউজ২৪