জীবনের নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ একথা বলেন।
তিনি বলেন ‘জীবন যিনি দেন তিনিই জীবন নেন। আমার জীবন কখন যাবে সেটা আল্লাহই ভালো জানে। আমি মৃত্যু নিয়ে কখনই উদ্বিগ্ন থাকি না। জন্মিলে মরতে হবে, এটাই সত্য।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর তিন দিনের সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখত বক্তব্য ছাড়াও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে তো বহুবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। চোখের সামনে গুলি হতে বহুবার দেখেছি। বহুবার বোমাবাজি দেখেছি। চট্টগ্রামে ট্রাকে গুলি করা হয়েছে। একবার আমার মাথার ওপর দিয়ে গুলি চলে গেছে। একবার ইশ্বরদী যাওয়ার পথে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ৩ বার গুলি করা হয়েছে। কাজেই আমার নিরাপত্তা নিয়ে আমি কখনই উদ্বিগ্ন থাকি না।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা নির্বাচন যেহেতু করেছি, আরেকটি নির্বাচন পরে আসবে। নির্বাচন সময় মতোই হবে। তবে যেকোনো সময় নির্বাচন দেয়ার ক্ষমতা সরকারের থাকে।’
লিখিত বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নাকি আপনি বলেছিলেন, এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন, আরেকটি নির্বাচন দেবেন। আমার প্রশ্ন, সেইদিন আপনি কি বলেছিলেন? ৫ বছর আগে নির্বাচন দেয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না?
প্রধানমন্ত্রী তার উত্তরে বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার নির্বাচন। সংবিধান রক্ষায় নির্বাচন দিতে হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণের জন্য আমি চেষ্টা করেছি। বিএনপির সঙ্গে সব রকমের আলোচনা করেছি। টেলিফোনে কথা বলেছি। কিন্তু তারাতো নির্বাচনে আসবেই না বরং নির্বাচন হতেও দেবে না বলে হুমকি দিয়েছিল। এ অবস্থায় নির্বাচন ছাড়া বিকল্প কিছু ছিল না। কারণ একবার ১১/১ এসেছে; আবারও ১/১১ এর মতো পরিস্থতি আসতে দেয়া যায় না।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ৫ বছর পুরো মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগ সরকারই দেখিয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় ছিল।’
এ সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আমার প্রশ্ন, যখন গাজায় নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে তখন কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি? সে সময়তো আপনাদের উদ্বেগ দেখিনি। উদ্বেগ হয় তখন যখন মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিচার হয়।’
শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘আমার দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। আমার দেশের আইন অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্গনকারীদের বিচার হবে।’
যুদ্ধাপরাধীরা যেন রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফের কোনও সুযোগ না পায়, তা সুস্পষ্ট করতে সংবিধান সংশোধনের দাবি উঠলেও তা না করার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই বিষয়ে সরকারের অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক।
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির একটা অধিকার থাকে। এটা থাকতে পারে।… আমরা দেশ চালাই। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাতে কিছু ক্ষমতা থাকতে হয়, এটা থাকতে পারে।’
উল্লেখ্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি আপিলের রায়ে কমে কারাদণ্ড হওয়ার পর সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবি জোরেশোরে উঠলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও তা বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
৪৯ অনুচ্ছেদে যেটা বলা হয়েছে, “কোনও আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনও দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যে কোনও দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।”