জাতীয় গ্রিডে ত্রুটির কারণে আজ সকাল থেকে সারা দেশের সব জায়গায় এক নজিরবিহীন বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অফিস-কারখানা ও দোকানপাট ও হাসপাতালগুলো জেনারেটর থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চালাচ্ছে।
সন্ধ্যার পর প্রায় পুরো ঢাকা শহর অন্ধকারে ডুবে আছে। এই বিপর্যয়ের সময় ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর অফিস, পার্লামেন্ট, এবং অন্যন্য সরকারি ভবনেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে জেনারেটরের থেকে পাওয়া বিকল্প বিদ্যুৎ দিয়ে কাজ চলছে।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একে একে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে শুরু করে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপর্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘জাতীয় গ্রিডে কারিগরী সমস্যার কারণে পুরো দেশজুড়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুত সরবরাহ ফিরে আসছেন এবং ত্রুটি মেরামতের জন্য প্রকৌশলীরা কাজ করছেন।’
ত্রুটি সারতে কাজ চলছে জানালেও কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। ফলে সন্ধ্যা নামার পর থেকে অন্ধকারে ডুবে যায় রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ।
এর মধ্যে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। দেশের ইতিহাসে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর মানুষের মধ্যে উদ্বেগের পাশাপাশি নানা ধরনের গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণ তদন্তে একটি কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা রিকভারির কাজ করছি। তবে সময় লাগবে। এর আগে বিকেলে বিদ্যুৎ বিভাগ সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা দেখিয়েছিল। কিন্তু মেরামতের মধ্যেই পুনরায় বিপর্যয় দেখা দিলে তা আর হয়নি।’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দ্রুত রিকভারি করতে গিয়েছিলাম। ৭০০ পর্যন্ত (মেগাওয়াট) রিকভার করেছিলামও। এর মধ্যেই গ্রিড আবার ফেইল করে। দ্রুত এগোনোয় সমস্যা হয়েছে। এখন আমরা স্লোলি (ধীরে) এগোচ্ছি। ঢাকাতে আমরা বন্ধ রেখেছি। আমরা বাইরের সাইড থেকে চালু করে করে আসছি। এখন আর মিস করা যাবে না।’
এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সময় লাগার কারণে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎসচিব মনোয়ার হোসেন।
বিকেলে পাওয়ার গ্রিড কম্পানির (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আল-বেরুনির কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে তিনিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পিজিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর কারণ নিরূপন, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এর নেতৃত্বে ৭ (সাত) সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী তিন (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দুপুর সোয়া ১টার দিকে বলেছিলেন, জাতীয় গ্রিড ফেইল করেছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ আসতে শুরু করেছে। পুরো সিকোয়েন্স ঠিক করতে আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক লেগে যাবে।
এরপর পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ে, সকাল ১১ টা ২৮ মিনিটে কারিগরি ত্রুটির কারণে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সাময়িকভাবে বিপর্যয় ঘটে। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সারাদেশে গ্রাহকগণকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। দুপুর ১২ টা ২৬ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করা হচ্ছে। আশা করা যায়, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র দেশে বিদ্যুৎ পুনরায় সংযোগ করা সম্ভব হবে।