কবি নজরুলের ইরানী বালিকার চিঠি যেন নারীর প্রতিবাদী রূপ

পীর হাবিবুর রহমান

পীর হাবিবুর রহমান

আমার একার নয়, মানবিক হৃদয়সম্পন্ন সব মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছে খবরটি। ফাঁসিকাষ্ঠে ২৬ বছরে নিভে যাওয়া এক উচ্ছল আত্মমর্যাদাশীল সাহসী তরুণী রেহানা জাব্বারির কথা বলছি। অনিন্দ্য সুন্দরী এই তরুণীর বয়স যখন যুগলবন্দী হওয়ার, প্রিয়তম পুরুষের উষ্ণ বাহুর আলিঙ্গনে একটি রোমান্টিক জীবনের স্বপ্ন দেখার ঠিক তখন একদল কাপুরুষ তার ইজ্জত লুটতে চেয়েছিল। সেই পুরুষদের বিকৃত লালসার কাছে সে আত্মসমর্পণ করেনি। পাল্টা ছুরি চালিয়ে ধর্ষকের জীবন কেড়ে নিয়ে আত্মরক্ষা করেছিল ইরানী তরুণীটি। কিন্তু ধর্মীয় শাসনকবলিত ইরানের সুপ্রিমকোর্ট শরিয়াহ আইন অনুযায়ী তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। ইরানের রেজা শাহ পাহলভির রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব সেদিন ঘটেছিল। শাহদের বাদশাহী শাসন যুগের পর যুগ জগদ্বল পাথরের মতো ইরানের জনগণের ওপর চেপে বসেছিল। ভোগবিলাসে মত্ত শাসকেরা মানুষকে মানুষই মনে করেনি। জনগণকে তাদের গোলাম মনে করে চিরস্থায়ী বাদশাহীর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগ অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইরানের ধর্মীয় নেতা ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইসলামী বিপ্লবের পথে ইরানের শাহেনশাহ রেজা শাহ পাহলভিকেই উৎখাত করেননি, শাহদের রাজবংশের দীর্ঘ রাজত্বের ইতি টেনে দেন। সেদিন শাহদের স্বেচ্ছাচারি শাসনামলের করুণ পরিণতিতেই মৌলবাদী ধর্মীয় শক্তির উত্থানই ঘটেছিল এবং তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে। ইরানী সিনেমার মান অনেক উন্নত। ইরানের শিল্প-সংস্কৃতির ঐতিহ্য গর্ব করার মতো। কিন্তু মানুষের দম বন্ধ সমাজে ২৬ বছরের তরুণী রেহানা জাব্বারির করুণ ফাঁসি গোটা বিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। দুনিয়ার তামাম মানবাধিকার সংগঠন রেহানার ফাঁসির আদেশের বিরোধিতা করেছিল। দুনিয়ার তাবৎ নেতারা প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছিলেন। এমনকি রেহানার স্নেময়ী মা ‘শোলেহ’ মেয়ের বদলে তাকেই ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানোর করুণ আকুতি জানিয়েছিলেন। সরকার মানেনি। শরিয়াহ আইন অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের রায় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভোরের স্নিগ্ধ আলো ফোটার আগেই তরতাজা রেহানার প্রদীপ নিভিয়ে দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে মেয়েটি তার মাকে হৃদয়স্পর্শী চিঠি লিখে গেছেন। এই মৃত্যুকে সে নিয়তির বিধান বলে অবহিত করলেও বিন্দুমাত্র অনুতাপ করেনি। বরং ফাঁসির পর তার মাকে অনুরোধ করেছে দেহের নানা অংশ যার জীবন লাভের জন্য দরকার তাকেই দিয়ে দিতে। তবে তার পরিচয় যেন গোপন রাখা হয়। মা কেন ফাঁসির হুকুম তাকে আগে জানায়নি তা নিয়ে রেহানা প্রশ্ন তুলেছে। বলেছে, তোমার কি মনে হয়নি এটা আমার আগেই জানা উচিত ছিল? তুমি দুঃখে ভেঙে পড়েছ জেনে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছি। ফাঁসির আদেশ শোনার পর তোমার আর বাবার হাতে চুমু খেতে দাওনি কেন আমায়? কী করুণ আকুতি! মাকে লেখা ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলন্ত চিঠিখানি পড়তে পড়তে আমাদের বুকের ভেতর হু হু করে কান্না এসেছে। এমন কান্না মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষেরই আসে। আত্মরক্ষার্থে, সম্ভ্রম রক্ষায় সে ধর্ষককে হত্যা করেছিল। কিন্তু বিচারে তারই ফাঁসি হলো! দেশে দেশে যুগে যুগে এমন বিচার প্রহসনের বিচার হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে। মাকে লেখা চিঠিতে রেহানা জাব্বারি যখন বলছে, ‘দুনিয়া আমায় ১৯ বছর বাঁচতে দিয়েছে। সেই অভিশপ্ত রাতে আমারই তো মরে যাওয়া উচিত ছিল, তাই না? আমার মৃতদেহ ছুড়ে ফেলার কথা ছিল শহরের কোনো অজ্ঞাত কোনে। কয়েক দিন পর মর্গে যা শনাক্ত করার কথা ছিল তোমার। সঙ্গে এটাও জানতে পারতে যে, হত্যার আগে আমাকে ধর্ষণও করা হয়েছিল। হত্যাকারীরা অবশ্যই ধরা পড়ত না, কারণ আমাদের না আছে অর্থ, না আছে ক্ষমতা। তারপর বাকি জীবনটা সীমাহীন শোক, অসহ্য লজ্জায় কাটিয়ে কয়েক বছর পর তোমারও মৃত্যু হতো। এটাই যে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে রাতের আকস্মিক আঘাত সব কিছু ওলট-পালট করে দিল। শহরের কোনো গলি নয়, আমার শরীরটা প্রথমে অ্যাভিঞ্জেলের নিঃসঙ্গ কুঠুরিতে। আর সেখান থেকে কবরের মতো এই শাহর-এ রায় কারাগারের সেলে। কিন্তু এ নিয়ে অনুযোগ করো না মা, এটাই নিয়তির বিধান। আর তুমি তো জানো যে, মৃত্যুতেই সব শেষ হয়ে যায় না।’ একজন ইরানী তরুণী ফাঁসির রশি গলার সামনে রেখে সাহসিকতার সঙ্গে তার মাকে এই চিঠি লেখার মধ্য দিয়ে শুধু একজন নারীকেই ঝাঁকুনি দিয়ে যায়নি। বিশ্ববিবেকের দরজায় কড়া নেড়ে গেছে। গ্লানির স্পর্শ দিয়ে গেছে। সে তার মাকে আরও লিখেছে, ‘তুমিই তো শিখিয়েছ অভিজ্ঞতা লাভ ও শিক্ষা পাওয়ার জন্যই আমাদের জন্ম। মাঝে মাঝে লড়াই করতে হয়, সে শিক্ষা তো তোমার থেকেই পেয়েছি। সেই গল্পটা মনে পড়ছে, চাবুকের ঝাপটা সহ্য করতে করতে একবার প্রতিবাদ জানানোর ফলে আরও নির্মমতার শিকার হয়েছিল এক ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়। কিন্তু প্রতিবাদ তো সে করেছিল। আমি শিখেছি, সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে অধ্যবসায় প্রয়োজন। তার জন্য যদি মৃত্যুও আসে তাকেই মেনে নিতে হয়। স্কুলে যাওয়ার সময় তুমি শিখিয়েছিলে নালিশ ও ঝগড়াঝাটির মাঝেও যেন নিজের নারীসত্তা বিসর্জন না দিই। তোমার মনে আছে মা- কত যত্ন করেই না মেয়েদের খুটিনাটি সহবত শিখিয়েছিলে আমাদের? কিন্তু তুমি ভুল জানতে মা। এসব ঘটনার সময় আমার সেসব তালিম একেবারেই কাজে লাগেনি। আদালতে আমায় এক ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু আমি চোখের পানি ফেলিনি। ভিক্ষাও করিনি। আমি কাঁদিনি কারণ আইনের প্রতি আমার অটুট আস্থা ছিল। কিন্তু বিচারে বলা হলো, খুনের অভিযোগের মুখেও নাকি আমি নিরুত্তাপ। আচ্ছা মা, আমি তো কোনো দিন একটা মশাও মারিনি। আরশোলাদের চটিপেটা না করে শুঁড় ধরে জানালার বাইরে ফেলে দিয়েছি। সেই আমিই নাকি মাথা খাটিয়ে মানুষ খুন করেছি! উল্টো ছেলেবেলার ওই কথাগুলো শুনে বিচারপতি বললেন, আমি নাকি মনে মনে পুরুষালি। তিনি একবার চেয়েও দেখলেন না আমার হাতের লম্বা নখের ওপর কী সুন্দর নেইল পালিশের জেল্লা ছিল। হাতের তালু কত নরম তুলতুলে ছিল। নারীত্বের পুরস্কার হিসেবে মাথা মুড়িয়ে ১১ দিনের নির্জন বাসের হুকুম দেওয়া হলো। দেখেছ মা, তোমার ছোট্ট রেহানা এই কদিনে কত বড় হয়ে গেছে?’ রেহানা তার মাকে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানুষের জীবন ধারণের জন্য দান করার আকুতি জানিয়ে বলে গেছেন, তার পরিচয় না জানাতে। কারণ আত্মমর্যাদাশীল এই অভিমানী তরুণী চায়নি তার সমাধিতে কেউ ফুলের তোড়া রেখে আসুক। এমনকি তার মাও নয়। সে চায়নি তার কবরের পাশে কালো পোশাক পরে তার মা কান্নায় ভেঙে পড়ুক। বরং তার দুঃখের দিনগুলো হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতে বলেছে। জীবনদানের মধ্য দিয়ে নির্মম উপলব্ধি থেকে রেহানার যেন করুণ আর্তি এই পৃথিবী আমাদের ভালোবাসেনি মা। চায়নি আমি সুখী হই। এবার মৃত্যুর আলিঙ্গনে তার পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে। তবে ধর্মপ্রাণ মেয়েটি অবলীলায় বলে গেছে, সৃষ্টিকর্তার আদালতে সে বিচার পাবেই। সেখানে দাঁড়িয়ে সে অভিযোগ তুলবে সেই সমস্ত পুলিশ অফিসারের দিকে, বিচারকদের দিকে, আইনজীবীদের দিকে আর তাদের দিকে যারা তার অধিকার বুটের নিচে পিশে দিয়েছে। বিচারের নামে মিথ্যা ও অজ্ঞানতার কুয়াশায় সত্যকে আড়াল করেছে। একবারও বোঝার চেষ্টা করেনি, চোখের সামনে যা দেখা যায় সেটাই সর্বদা সত্য নয়।কবি নজরুলের অমরগীতি সেই ছেলেবেলা থেকে শুনতে শুনতে ইরানী বালিকার প্রতি আমাদের এক নির্মোহ ভালোলাগা হৃদয়তন্ত্রীতে ছড়িয়েছিল। আমাদের আকর্ষণবোধ তৈরি হয়েছিল। সেই বালিকা রেহানার তরুণী হতে না হতেই জীবনের করুণ সমাপ্তি দেখল। আর তার সমাপ্তির মাধ্যমে লেখা চিঠিতে গোটা দুনিয়াকে নারীর সম্ভ্রম রক্ষার তাগিদ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ধাক্কা প্রতিটি রাষ্ট্রকে দিয়ে গেছে। এ ধরনের জীবনদান ভবিষ্যতের নির্মাণপর্বে সংস্কারে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে থাকে। কবি নজরুল তার গানে লিখেছিলেন- ‘নাচে নাচে ইরানী মেয়ে/ নাচে ইরানী মেয়ে/ মরু বালুকায় ঘরোসি হয়ে।/ ইরানী বালিকা যেন মরুচারিণী/ পল্লীর প্রান্তর বন মনোহারিণী/ছুটে আসে সহসা গৈরি বরণী/ বালুকার উড়ানী গায়।’ সেই ইরানী বালিকারাই নয়, দেশে দেশে বালিকারা, তরুণীরা ইভ টিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। ধর্ষকের পাশবিক লালসার শিকার হচ্ছে সর্বত্র। ইরানী কন্যা রেহানা জাব্বারির মতো কেউ আত্মরক্ষার্থে বা সম্ভ্রমের হেফাজতে ধর্ষকের বুকে এভাবে সাহসিকতার সঙ্গে ছুরি চালাতে পারে না। কবি নজরুলের সেই ইরানী বালিকা গোটা বিশ্বের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অসহায় নারীদের প্রতিবাদী মুখ হিসেবে ইতিহাসের ক্যানভাসে ঠাঁই নেবে। ২০০১ সালের ২৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী সীমা বানু সিমি বখাটেদের অত্যাচার সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিল। তার চিরকুটের সূত্র ধরে সেসব বখাটেকে জেলে পুরা হলেও আইনের ফাঁক গলে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। সিমি মরে গেলেও তার পরিবার বখাটেদের উৎপাতের শিকার হয়েছে। পুলিশ প্রহরা রেখেও হুমকি-ধমকি সইতে হয়েছে। খিলগাঁও থানার বাড়িটিতে ওরা আগুনও দিয়েছে। সেদিন থানার পুলিশ কর্মকর্তা বখাটেদের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। সেই বখাটেদের সঙ্গে একজন সাব-ইন্সপেক্টরও জড়িত ছিলেন। ২০০২ সালের ১৭ জুলাই গাইবান্ধাতে বখাটেদের ধাওয়া খেয়ে স্কুল পড়–য়া সাফিয়া সুলতানা তৃশা পুকুরে ডুবে মারা যায়। উচ্চ আদালতে আসামিদের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুরে ইভ টিজিংয়ের শিকার জামেনা আক্তার আত্মহত্যা করে। একই বছরের ১০ অক্টোবর ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় ভাষানটেকের গুলটেক হাউজিংয়ের নাসির আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে মারা হয়। একই বছর ৬ সেপ্টেম্বর খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়ায় বখাটেদের উৎপাত সইতে না পেরে উম্মে কুলসুম ঋতু নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করে। এ ধরনের ঘটনা হামেশাই ঘটছে। কোনো কোনো ঘটনা গণমাধ্যমে আসে, অনেক ঘটনা আসেই না। ধর্ষণও একই অবস্থায়। দেশে দেশে এমনকি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দুনিয়ায়ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কোনোটির বিচার হয়, কোনোটির হদিস মেলে না। আমরা এমন এক নিরাপদ আবাস গড়তে চাই যেখানে শুধু নারীই নয়, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আমরা এমন একটি উদার গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক জবাবদিহিমূলক গণআকাক্সক্ষার শাসনব্যবস্থা ও বাংলাদেশ চাই যেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের উত্থান না ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর গণতান্ত্রিক দুর্নীতিমুক্ত জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থাই পারে কবি নজরুলের ইরানী বালিকার মতো এ ধরনের ঘটনা ও ফাঁসির করুণ পরিণতি রুখতে। জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলার সিমিদের জীবনের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার পূর্ণতা দিতে। ইয়াসমিন-পূর্ণিমাদের ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা করতে। ইরানের রেহানা জাব্বারির চিঠি যেন আজকের দুনিয়ায় কবি নজরুলের ইরানী বালিকা হয়ে প্রতিবাদের এক মূর্ত রূপ। সমাজে, দেশে, বিদেশে মাঝে-মধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে প্রতিটি মানুষের ভেতরের বাউল মন ঢুকরে কেঁদে ওঠে। ইরানী সুন্দরী তরুণীর তার মা শোলেহর কাছে লেখা চিঠিখানি এতটাই হৃদয়স্পর্শী যে, নিজের অজান্তেই ভিতরের কবি মন হাহাকার করে ওঠে। নিজের অজান্তেই অশ্রুসজল হয়ে ওঠে চোখ। বুক কাঁপে, মন কাঁদে সময়ে সমাজের অস্থিরতায়, অন্যায় অবিচারে দ্রোহে ক্ষোভে। রাজনৈতিক কলামে নজরুলের ভাষায় লিখেছিলাম- ‘অমর কাব্য লিখিও বন্ধু তোমরা যারা আছ সুখে। দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি তাই মুখে যাহা আসে তাহাই কহি।’ এমনকি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বার বার তার কবিতায় যেমন ‘নীরা’কে নিয়ে আসতেন তেমনি আমিও ‘মন্দিরা’ চরিত্র উপস্থাপন করতাম। নীরাকে জানতে চাইলে সুনীল শুধু হাসতেন। মন্দিরার প্রশ্নে কারও কৌতূহল দেখলে আমারও চিবুকে রহস্যের হাসি খেলত। সৃষ্টিশীল মানুষদের অন্তহীন হাহাকার, অতৃপ্তি ও বেদনাবোধ থাকে। দহন যত বাড়ে সৃষ্টি তত উজ্জ্বল হয়। নজরুলের দহন যত তীব্র ছিল তার সৃষ্টি তত আগ্রাসী ছিল। তাই বলে রবীন্দ্রনাথের মনোজগৎ কি রহস্যময় ছিল না? ৬১ বছরের কবিগুরু ৩১ বছরের ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রেমে পড়লেও তার সৃষ্টি শুধু নিজেকেই নয়, বাংলা সাহিত্যকেই বর্ণাঢ্য ও সমৃদ্ধ করে গেছে। ফজিলাতুন্নেছার জন্য কবি নজরুলের যত হাহাকার, আকুতি রবীন্দ্রনাথের বেলায় সেই আগ্রাসী রূপ দেখা যায়নি সত্য কিন্তু যাতনা কি কম ছিল? প্রেমের এক স্বর্গীয় মাহাত্ম্য রয়েছে। যুগে যুগে প্রেমিকরা আলোকোজ্জ্বল হয়েছেন ইতিহাসের ক্যানভাসে। ধর্ষক, কামুকেরা নগর সভ্যতা ধ্বংস করে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছেন। ইতিহাস তাদের নিন্দিত করেছে। মাঝে-মধ্যে আমারও ইচ্ছে করে ‘বুনো’কে নিয়ে আমার প্রাণের হাওরে ছুটে যাই। জোছনা রাতে নাওয়ে ভাসি। জলজোছনার নৈস্বর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে বিশুদ্ধ হই। বর্ষার মুষলধারে নেমে আসা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ‘বুনো’কে নিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরি। আসলে আমরা সবাই আমাদের স্বপ্নের নিরাপদ আবাসভূমি ও জীবন চাই। রাষ্ট্রের কাছে গণমানুষের এটাই আকুতি। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে সেই আকুতি যতটা মর্যাদা পায় মানুষের জীবন ততটাই সুখময় হয়।

লেখকঃ প্রখ্যাত সাংবাদিক


মুক্তমত বিভাগের আরো খবর...
প্রসঙ্গ পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ পদ্মা সেতু
‘আজও খুঁজি তাঁকে মানুষের ভিড়ে’ ‘আজও খুঁজি তাঁকে মানুষের ভিড়ে’
একটি চক্রান্ত ব্যর্থ হলো! একটি চক্রান্ত ব্যর্থ হলো!
পেট্রোল বোমায় নিহত এক কিশোরীর চিঠি ! পেট্রোল বোমায় নিহত এক কিশোরীর চিঠি !

কবি নজরুলের ইরানী বালিকার চিঠি যেন নারীর প্রতিবাদী রূপ
(সংবাদটি ভালো লাগলে কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।)
tweet