একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত প্রত্যেক যুদ্ধপরাধীর রায় বাংলার মাটিতে কার্যকর করা হবেই বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার ‘জেলহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নির্বাচন না করে যে ভুল করেছেন সেই ভুলের খেসারত দেশের মানুষ কেন দেবে, যুদ্ধাপরাধীদের রায়ও কার্যকর করা হবে। যুদ্ধাপরাধের প্রতিটি বিচারের রায় এই মাটিতে কার্যকর করা হবে। খালেদার জন্য জামায়াত হয়েছে সাপের ব্যাঙ গেলার মতো, গিলতে পারে না আবারও ফেলতেও পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি জামায়াতে ইসলাম ওনাদের জন্য কেঁদে মরেন, তাদের দৃষ্টিতে বিষয়টি ঠিকই আছে। কিন্তু বিচারর রায় কার্যকর করে বাংলার মাটিকে অভিশাপ মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ।’
খালেদা জিয়ার আমলে হাওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতির কথা প্রধানমন্ত্রী আবারও স্মরণ করিয়ে দেন।
‘হাওয়া ভবনে বসে খালেদা জিয়ার পুত্র হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এসব কারণে দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। তাদের আমলে বাংলাদেশের মানুষ গরিব থেকে গরিব হয়, অথচ আর একশ্রেণীর মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়। ‘
তিনি বলেন, ‘জিয়ার ভাঙা স্যুটকেস ছিল, অথচ ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছরের মাথায় খালেদা জিয়ার পুত্ররা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়।’
জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে হত্যা, ক্যু’র রাজনীতি শুরু হয় বলেও এ সময় মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিকেল সাড়ে চারটায় বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় ঘাতকদের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এম মনসুর আলী এবং মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লাখো মা-বোনের ইজ্জত এবং ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যে নেতারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ৩রা নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের হত্যা করা হয়। কোনো সভ্য দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল হত্যার মত নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।’
জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়েই দেশে হত্যা ও ক্যু’র রাজনীতির শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে ১৮/১৯ বার ক্যু হয়েছে। সেনা সদস্যদের, সেক্টর কমান্ডারদের, রাজনীতিকদের হত্যা করা হয়।
বিকাল ৩টায় শুরু হওয়া এ সভার সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা সহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ সামনে রেখে দুপুর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সমাবেশ উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করে সমাবেশে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের দেহ তল্লাশি করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি তার বিশ্বস্ত সহযোগী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং মোহাম্মদ কামরুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে এই চার নেতাই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।