বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় কাহিনী

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা শয়তানের ত্রিভূজ নামেও পরিচিত, আটলান্টিক মহাসাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল, যেখান বেশ কিছু জাহাজ ও উড়োজাহাজ রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয়। অনেকে মনে করেন ঐ সকল অন্তর্ধানের কারণ নিছক দূর্ঘটনা, যার কারণ হতে পারে প্রাকৃতিক দূর্যোগ অথবা চালকের অসাবধানতা। আবার চলতি উপকথা অনুসারে এসবের পেছনে দায়ী হল কোন অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি বা ভিনগ্রহের কোন প্রাণীর উপস্থিতি।

---

অবস্থান: বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অবস্থান ক্যারিবীয়ন সমুদ্রে। এর এক প্রান্ত হচ্ছে বারমুডায়, অন্য প্রান্তটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মায়ামি এবং আরেকটি প্রান্ত স্পর্শ করেছে পুয়োর্তরিকোর সাজ জুয়ান এলাকায়। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর আংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। অবশ্য এই বিন্দু নির্ধারণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বেশিরভাগ লেখক-গবেষকই এই নির্দিষ্ট অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছেন সীমানা বরাবর মিয়ামি, সানজুয়ান, পুয়ের্তো রিকো, মধ্য আটলান্টিক আর বারমুডা নিয়ে তৈরি একটি ত্রিভুজ বা বলা ভালো একটি ট্রাপিজিয়াম আকৃতির চতুর্ভুজ। তবে বেশিরভাগ হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো ঘটেছে দক্ষিণ সীমানায় বাহামা দ্বীপপুঞ্জ ঘিরে এবং ফ্লোরিডা উপকূলের আশপাশে। কত জাহাজ ও বিমান হারিয়ে গেছে এ এলাকায় যেগুলোর বেশিরভাগেরই কোনো রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়নি আজও।

রহস্যের শুরু যেভাবে: ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এক প্রবন্ধে সাংবাদিক ই ভি ডাবলিউ জোনস প্রথম বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অস্বাভাবিক ঘটনার কথা লিখে একে নজরে আনেন। ১৯৫২ সালে ‘ফেট’ ম্যাগাজিন-এর জর্জ এক্স সান্ড লিখেন “সি মিসট্রি অ্যাট আওয়ার ব্যাক ডোর”। জর্জ এক্স সান্ড ৫ জন ইউএস নেভি সহ ১৯ নং ফ্লাইটের নিখোঁজ সংবাদ ছাপেন। শুরু হয় বারমূডা রহস্য!

এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো, কোনো জাহাজ এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলে। ঘটনা তদন্তে এর মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞানসম্মত যে ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে তা হলো, এলাকাটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে স্বাভাবিকের চাইতে কুয়াশা অনেক বেশি এবং এর ঘনত্বও তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে নাবিকেরা প্রবেশের পরই দিক হারিয়ে ফেলে এবং তাদের মধ্যে একপ্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। হয়তো এ বিভ্রান্তির ফলেই তারা যথাযথভাবে বেতার তরঙ্গ পাঠাতে পারে না। প্রমাণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, আধুনিক কালের সমস্ত জাহাজ জি এস এম প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে, তাদের একটিও এ সমস্যায় পড়েনি।

ট্রায়াঙ্গলের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিখ্যাত কিছু দূর্ঘটনা
১. ১৯৪৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওই ত্রিভুজ স্থানে যানগুলো রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। ঘটনাটিকে বলা হয় মেরি সিলেক্ট অব দি স্কাই। মেরি সিলেক্ট জাহাজটির অন্তর্ধান কাহিনীও অদ্ভুত। সেটি অবশ্য বারমুডার সীমানার মধ্যে ঘটেনি, তবু এটিকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আকাশে বিমান মহড়া চলছে। এরকম প্রতিদিনই হয়। প্রতিটি বিমানেই পাইলটকে নিয়ে তিনজন ক্রু থাকে। সেদিন ছিল একজন কম। তারিখ ৫ ডিসেম্বর। ফলে আবহাওয়া পরিষ্কার। কন্ট্রোল টাওয়ার বিশেষ জরুরি। ভীত একটি কণ্ঠস্বর। ‘মনে হচ্ছে আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছি। আমরা মাটি দেখতে পাচ্ছি না।’ টাওয়ার জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমাদের পজিশন জানাও।’ তাও আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমরা হারিয়ে গেছি। বিকাল গড়িয়ে গেল। তখনো তারা যেই তিমিরে সেই তিমিরেই। ১৩ জন ক্রু নিয়ে একটি বিরাট মার্টিন মেরিনার ফ্লাইং বোট পাঠানো হলো তাদের উদ্ধার করে আনার জন্য। এ ফ্লাইং বোটটি অশান্ত সমুদ্রেও নামতে পারে এবং এমনভাবে তৈরি যে, জলেতে ডুবে না। ফ্লাইট নাইনটির উদ্দেশ্যে কন্ট্রোল টাওয়ার বার্তা প্রেরণ করল-যেখানে আছ সেখানেই থাক। সাহায্য পাঠানো হলো। কিন্তু আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। মেরিনার আকাশে উঠে কোনো বিমান দেখতে পেল না। এটুকু খবর পাওয়ার পরই ব্যস। মেরিনারের সঙ্গেও আর যোগাযোগ করা গেল না। দমকা হাওয়া। কোথায় যে গেল, কী যে হলো কিছুই বোঝা গেল না। ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করে, তল্লাশি চালিয়ে, হইহই ফেলে দিয়েও বিমানের একটি টুকরারও কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না। নেভার বোর্ড অব ইনকুয়ারির বৈঠক বসল। তদন্ত হলো। তদন্তের জন্য যারা বিমান নিয়ে গেল তারা কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যে পথভ্রষ্ট হলো না।

২. ১৯৪৯ সালের ১৭ জানুয়ারী স্টার এরিয়েল নামের একটি বিমান লন্ডন থেকে জ্যামাইকা যাচ্ছিল। সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে এটি বারমুডার আকাশে উড়ল। তখন আবহাওয়া ছিল স্বাভাবিক ও সুন্দর। আর সমুদ্র ছিল শান্ত। ওড়ার ৫৫ মিনিট পর বিমানটি অদৃশ্য হয়ে গেল। এ নিয়ে অনেক অনুসন্ধান হলো। কিন্তু সমুদ্রের কোথাও বিমানটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেল না। বিমানটি অদৃশ্য হয়েছিল ১৭ জানুয়ারি রাতে। ১৮ তারিখ রাতে এক অনুসন্ধানী দল জানাল, সেখানকার সমুদ্রের বিশেষ বিশেষ একটি জায়গা থেকে অদ্ভূত একটি আলোর আভাস দেখা যাচ্ছে। এ ঘটনার এক বছর আগে সেখান থেকে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল একটি ডিসি-৩ বিমান। সেটি যাচ্ছিল সানজুয়ান থেকে সিয়ামি। ক্যাপ্টেনের নাম রবার্ট লিংকুইসড। ভোর ৪টা ১৩ মিনিটে বিমানটি থেকে শেষ বেতার বার্তা ভেসে এলো, আমরা অবতরণ ক্ষেত্রের দিকে এগিয়ে চলেছি। দক্ষিণে আর মাত্র পঞ্চাশ মাইল দূরে সিয়ামি বিমানবন্দর। আমরা সিয়ামি শহরের আলোকমালা দেখতে পাচ্ছি। সব ঠিক আছে। কোনো গোলমাল নেই। অবতরণের নির্দেশের অপেক্ষায় রইলাম। এই শেষ বার্তা পাঠিয়ে বিমানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর এর আর কোনো হদিস মেলেনি।

৩. ১৯৪১ সালে ওই রহস্যময় জায়গাতে অদৃশ্য হয়ে গেল তিনিটি ট্যাঙ্কার, একটি চার ইঞ্জিনের উড়োজাহাজ আর একটি ট্রলার।

৪. আরেকটি বিমান যাচ্ছিল নাসাউ থেকে বাহামার গ্রান্ডটার্ক দ্বীপের দিকে। ওই দ্বীপের কাছাকাছি এসে পাইলট বেতার সংকেতে জানালেন, ‘আমি কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। দুটি অজানা দ্বীপের চারপাশে চক্কর মারছি। অথচ নিচে কিছুই দেখেতে পাচ্ছি না। এই ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসার কোনো উপায় আছে কি? যারা এই দুর্ঘটনার সাক্ষী তারা দেখতে পেল ওই হালকা বিমানটি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে দ্বীপের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে মেঘমুক্ত আকাশে হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। এই গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের একটি রহস্যময় অঞ্চল হলো জলীয়কেন্দ্রের একটি বিন্দু। ফ্লোরিয়া থেকে বাহামার মধ্যে একটা অঞ্চলকে বলা হয় রেডিও ডেড স্পট। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেখানে কোনো বেতারতরঙ্গ প্রবেশ করতে পারে না এবং বের হতেও পারে না। এমন একটি বিন্দু আছে যেখানে কম্পাস অচল হয়ে যায়।

৫. ১৯১৮ সালে সেখানে ইউএস নেভির কয়েকটি জাহাজ নিখোঁজ হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে সাইক্লোপস জাহাজের অদৃশ্য হওয়া। তাতে ছিল ৩০৯ জন যাত্রী। ১৯ হাজার টন ভারী জাহাজটি বারবাডোস থেকে বাল্টিমোরের দিকে যাত্রা করেছিল। এ জাহাজটি সেখানে অদৃশ্য হয়ে যায়।

৬. বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের আরেকটি বিখ্যাত ঘটনা হলো ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে অন্তর্ধান হওয়া ফ্লাইট নাইনটিন। আর এটি নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনে লেখা হয়, “বলা হয়ে থাকে এই ফ্লাইটের দলনেতাকে নাকি বলতে শোনা গিয়েছে, ‘আমরা কোথায় আছি জানি না, সবুজ রঙের জল, কোথাও সাদা কিছু নেই। এতেই প্রথম ফ্লাইট নাইনটিনকে কোনো অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।’” বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি ও গবেষণা হয়েছে।

এ নিয়ে যারা লিখেছেন তাদের মতে ক্রিস্টোফার কলম্বাস সর্বপ্রথম এই ত্রিভুজ বিষয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। তিনি লিখেছিলেন যে তার জাহাজের নাবিকরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এছাড়া তিনি এখানে কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক-নির্দেশনার কথাও বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১ অক্টোবর, ১৪৯২ সালে তার লগবুকে এসব কথা লিখে রাখেন। তবে বর্তমান বিশেষজ্ঞরা লগবুক পরীক্ষা করে যে মত দিয়েছেন, নাবিকরা যে আলো দেখেছেন তা হলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নৌকায় রান্নার কাজে ব্যবহৃত আগুন। আর কম্পাসে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে।অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রথম খবরের কাগজে রিপোর্ট বেরোয় ১৯৫০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ইভিডবি্লউ জোন্স লিখিত এই খবর প্রকাশের দু’বছর পর ‘ফেইট’ ম্যাগাজিনে জর্জ এক্স. স্যান্ড ‘সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর’ শিরোনামে একটি ছোট্ট প্রবন্ধ লেখেন। এ প্রবন্ধে তিনি ফ্লাইট নাইনটিন (ইউএস নেভীর পাঁচটি টিবিএম অ্যাডভেঞ্চার বিমানের একটি দল, যা প্রশিক্ষণ মিশনে গিয়ে নিখোঁজ হয়)-এর নিরুদ্দেশের কাহিনী বর্ণনা করেন এবং তিনিই প্রথম এই অপরিচিত ত্রিভুজাকার অঞ্চলের কথা সবার সামনে তুলে ধরেন। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে ফ্লাইট নাইনটিন নিয়ে আমেরিকান লিজান ম্যাগাজিনেও লেখা বেরোয়। এরপর ভিনসেন্ট গডিস ‘প্রাণঘাতী বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নামে আরেকটি লেখা লেখেন ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি আরও বিস্তর বর্ণনা সহকারে লেখেন ‘ইনভিজিবল হরাইজন’ মানে’অদৃশ্য দিগন্ত’ নামের বই। জন ওয়ালেস স্পেন্সার লেখেন ‘লিম্বো অব দ্য লস্ট’, মানে ‘বিস্মৃত অন্তর্ধান’, চার্লস বার্লিটজ লেখেন’দি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’, রিচার্ড উইনার লেখেন ‘দ্য ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গল’ বা ‘শয়তানের ত্রিভুজ’ নামের বই। এছাড়া আরও অনেকেই লিখেছেন। এরা সবাই ঘুরেফিরে একটি বর্ণিত অতিপ্রাকৃত ঘটনাই বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন। লেখকদের এসব রচনাকে অতিরঞ্জন বলা হলেও এই বারমুডার আরেকটি রহস্যের সমাধানও দিতে পারেনি কেউ। আর তা হচ্ছে একটি অদ্ভুত জৈবের রহস্যময় উপস্থিতি। প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে গভীর সমুদ্রে যাতায়াত করেছেন টেডি টাকার নামের এক ডুবুরি। কয়েক বছর আগের কথা। একদিন সকালবেলা বারমুডার বেলাভূমিতে টেডি একটি অদ্ভুত বস্তু দেখতে পেলেন। সেটি ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ পাউণ্ড ওজনের উজ্জ্বল সাদা একটি পিণ্ড। স্থানীয় লোকেরা ওই রহস্যময় বস্তুটির নাম দিল বারমুডা ব্লপ। সেটি পরীক্ষা করে টেডি বলেন, ‘জিনিসটি যে জৈব পদার্থ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এরকম কোনো প্রাণী কখনও দেখা যায়নি। এই পিণ্ডের একটি টুকরা কেটে নিয়ে গবেষণা করাহলো মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়া গেল, ওই পিণ্ডটি কোনো প্রাণীদেহেরই অংশ।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি খুব অদ্ভুত কোনো কোলাজেন টিউমার। আর সেটি অবশ্যই কোনো বড়সড় জলচর প্রাণীর। যেমন তিমি। কিন্তু আরেক দল গবেষক বলেছেন, ওটি একটি প্রকাণ্ড অক্টোপাস। রহস্যময় ব্যাপার হলো_ পিণ্ডটি বেলাভূমিতে পড়ে থেকে থেকে শেষ পর্যন্ত ভেঙে টুকরা টকুরা হয়ে যায়। অথচ তাতে এতটুকু পচন ধরেনি। বারমুডার এই নতুন রহস্যের মীমাংসা হয়নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় সব অন্তর্ধানের কারণ নিয়ে অনেকগুলো তত্ত্ব দাঁড় করানো হয়েছে। কেউ বলেছেন, ওখানকার সমুদ্রে বা আকাশে আস্ত একটা ফাটল আছে। প্রকৃতির সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে বিমান বা জাহাজ হারিয়ে যায় চিরকালের মতো। কেউ বলেন, অজানা এক সভ্যতার কথা, যেখানে আগুনের গোলা লাফিয়ে ওঠে। বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায় সব জাহাজ ও উড়োজাহাজ। কারো মতে, ওই অঞ্চলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের জন্য বিশাল জলস্তম্ভ জাহাজ, উড়োজাহাজ সবকিছুকে নিজের গহবরে টেনে নেয়। কেউ বলেছেন, অন্য গ্রহের প্রাণী বা এই জাতীয় কিছু, যা আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য। কেউ আবার ব্যাখ্যা করেছেন ফোর্থ ডাইমেনশন বা চতুর্থ মাত্রার। তাদের মতে, সময়ের একটা অনন্ত ফাটল ওই অঞ্চলে সক্রিয় থাকে। ওইসব জাহাজ ও বিমান সময়ের সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে হারিয়ে যায় বর্তমান কালের কাছ থেকে। তারা চলে যায় সুদূর অতীতের কোনো সময়ে। নয়তো ভবিষ্যতের গর্ভে। কেউ আবার চুম্বকীয় তত্ত্বের মাধ্যমে রহস্যটি মীমাংসা করতে চেয়েছেন। তাদের মতে, ওই অঞ্চলে আকাশ ও সমুদ্রের মধ্যে এক তড়িতাহত ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে থাকে। সেখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র। কারো মতে, ওই রহস্যময় অংশে পর্যায়ক্রমে অজানা এই রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি হয়। সেই যৌগ যাবতীয় ইচ্ছাশক্তি ও ইন্দ্রিয়ের অনুভূতিকে অবশ করে দেয়। সমুদ্রের মধ্যে বিভিন্ন বিপাকক্রিয়ার ফলে এক অজানা জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে। এর ফলে সেখানে রহস্যময় ঘটনাগুলো ঘটেছে।

রহস্য: বারমুডা ট্রায়াঙ্গল” পৃথিবীর খুব পুরনো একটি রহস্য। আজ অব্দি এই রহস্য, রহস্যই রয়ে গেছে। হলিউডে এ নিয়ে অসংখ্য মুভি তৈরি হয়েছে। বারমুডা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কখনই কমেনি বরং, দিন দিন আরও বেড়ে চলেছে। সমাজমনস্তত্ববিদদের মতে, অশিক্ষার ফলে কুসংস্কারে আবদ্ধ আশেপাশের মানুষেরা বিভিন্ন কল্পকাহিনী তৈরি করছে ও বিশ্বাস করছে। এর মধ্যে অস্বাভাবিকতা কিছুই নেই, যা আছে তা হলো কল্পনা। যে সংখ্যক জাহাজ ও বিমান হারিয়ে গেছে বলে দাবি করা হয়, তা হিসেব করলে দেখা যাবে পৃথিবীর অন্যান্য অনেক অঞ্চলে বিমান বা জাহাজ হারানোর সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়, বরং কোথাও কোথাও বেশি। কিন্তু প্রথম থেকেই জায়গাটি অতিপ্রাকৃত বলে আখ্যা পাওয়ায় এখানকার হারানোর ঘটনাগুলো সহজেই আলোচনায় উঠে আসে। মরুভূমিতে, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে কিংবা আমাজন এলাকায় প্রতি বছর যতো সংখ্যক হারানোর ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়, তার সংখ্যা কিন্তু বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে হারানোর সংখ্যার চাইতে অনেক বেশি। তার চাইতে বড় কথা হলো, আধুনিক প্রযুক্তি আসার ফলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে এসব নিখোঁজ সংবাদ দিন দিন বিরল খবরে পরিণত হয়েছে। এখন প্রতিদিন শত শত জাহাজ এই এলাকা দিয়ে চলাচল করে কিন্তু কোনো ধরনের রহস্যময়তার খবর পাওয়া যায় না। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল যদি সত্যিই রহস্যময় হয়েও থাকে, তবে তার সব রহস্য পরাজিত হয়েছে প্রযুক্তির কাছে।

তবে গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি তারা দিয়ে থাকেন সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে একটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনো দুরূহ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততোটাই কঠিন। ফলে এ এলাকায় কোনো ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে। সূত্রঃ ওয়েবসাইট


আলোচিত বিভাগের আরো খবর...
ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম ভেঙে দেওয়া হচ্ছে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম
‘বাঙালীরা মুজিবের ওপর বিশ্বাস রাখেন’ ‘বাঙালীরা মুজিবের ওপর বিশ্বাস রাখেন’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা
এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ এইডসের গুজবে বিব্রত মমতাজ
প্রিন্স মামুনের রিমান্ড নামঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রিন্স মামুনের রিমান্ড নামঞ্জুর, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
ঈদে বাংলা ও হিন্দি গান শোনাবেন মাহফুজুর রহমান ঈদে বাংলা ও হিন্দি গান শোনাবেন মাহফুজুর রহমান
কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায় জানালেন বাকৃবি অধ্যাপক কৃত্রিমভাবে মোটাতাজা করা গরু চেনার উপায় জানালেন বাকৃবি অধ্যাপক
মোদীর শপথের আগে মায়ের সঙ্গে পুতুলের ‘কুইক বাইট’ মোদীর শপথের আগে মায়ের সঙ্গে পুতুলের ‘কুইক বাইট’
ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও বুড়িগঙ্গা ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও বুড়িগঙ্গা
গণফোরামে যোগ দিলেন আ’লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ গণফোরামে যোগ দিলেন আ’লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় কাহিনী
(সংবাদটি ভালো লাগলে কিংবা গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।)
tweet