ঢাকা : সৌরবিদ্যুতে আলোকিত হবে নতুন আরও ২৭ লাখ বাড়ি। ২০১৭ সালের মধ্যে এসব বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)।
লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতি মাসে ৬৫ হাজার বাড়িতে সৌর প্যানেল বসানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে ২০২১ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা’ শীর্ষক সরকারি অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা হবে।
এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রায় ৩৫ লাখ বাড়ি সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের (সোলার হোম সিস্টেম) আওতায় এসেছে। তাছাড়া সৌরবিদ্যুৎ কর্মসূচির মাধ্যমে ৭০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান এবং বার্ষিক ৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার জ্বালানি ভর্তুকি সাশ্রয়ে বিশাল ভূমিকা পালন করছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)।
সৌরবিদ্যুৎ কর্মসূচির পাশাপাশি ইডকল ধোঁয়ামুক্ত ও পরিবেশবান্ধব ১০ লাখ উন্নত সৌরচুলাও সাধারণ মানুষকে সরবরাহ করবে। ইডকল সূত্র জানায়, এক হাঁড়ি ভাত রান্না করতে যে পরিমাণ লাকড়ির তাপ লাগবে সৌরচুলায় এক হাঁড়ি ভাত রান্না করতে ৫০ ভাগ কম তাপ লাগবে। এতে রান্নার জ্বালানি খরচ ৫০ ভাগ কমে আসবে। তাছাড়া সৌরচুলায় রান্নায় ধোঁয়া থাকবে না, পরিবেশও দূষণ হবে না। প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ বায়োগ্যাস প্লান্ট, ১ হাজার ৫৫০টি সেচপাম্প, ৫০টি সোলার মিনি গ্রিড ও ১৪০টি বায়োগ্যাসভিত্তিক বৈদ্যুতিক প্রকল্প গড়ে তোলা হবে।
দেশের ৪৭টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ‘অংশীদার সংগঠন’ হিসেবে ইডকলের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে বাড়িভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, জাইকা, ইউকে এইড, ইউএসএআইডি, জিআইজেড, কেএফডব্লিউ প্রভৃতি সংস্থা।
প্রকল্পে সব থেকে বেশি অনুদান দিয়েছে জার্মানির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা (জিআইজেড) ৪৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর রয়েছে ইউনাইটেড কিংডম’স ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) দিয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ (২৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার। অংশীদার সংগঠনগুলো গ্রাহক সংগঠনগুলোর বিনিয়োগ করা অর্থের ৮০ শতাংশ ইডকল ৬ থেকে ৯ শতাংশ সুদে পাঁচ বছরের জন্য ঋণ হিসেবে দেয়। এ টাকা ইডকল পায় সরকারের কাছ থেকে ৩ শতাংশ সুদে। সরকার দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে ঋণও অনুদান হিসেবে পায়।
ইডকলের অংশীদার সংগঠনগুলো গ্রাহকের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করে। শুরুতে গ্রাহককে মোট দামের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ নগদ পরিশোধ করতে হয়। তারপর সমান মাসিক কিস্তিতে তিন বছরে অবশিষ্ট দাম পরিশোধ করতে হয়। গ্রাহক তিন বছর পর বিদ্যুৎ-ব্যবস্থাটির (সিস্টেম) মালিকানা স্বত্ব পান। কোনো গ্রাহক ৩০ ওয়াট পিকের একটি সিস্টেম কিনলে (বর্তমান দাম ১৫ হাজার ৫০০ টাকা) দেড় থেকে ২ হাজার টাকার মতো নগদ দিতে হবে। এরপর তাকে এ ক্ষমতার একটি সৌর প্যানেল, তিন ওয়াট ক্ষমতার দুটি এলইডি লাইট, একটি ব্যাটারি, একটি চার্জ কন্ট্রোলার (ব্যাটারির চার্জ নিয়ন্ত্রণ করার যন্ত্র), প্যানেলটি স্থাপনের একটি ফ্রেম ও প্রয়োজনীয় তার দিয়ে সিস্টেমটি স্থাপন করে দেয়া হবে। তাকে প্যানেলের জন্য ২০ ও ব্যাটারির জন্য পাঁচ বছরের গ্যারান্টি দেয়া হয়। তিন বছর পর্যন্ত মেরামতের সেবাও দেয়া হয়।
৩০ ওয়াটের সিস্টেমটির মাধ্যমে দুটি লাইট ও একটি এলসিডি বা এলইডি সাদাকালো টেলিভিশন চালানো যাবে। সৌরবিদ্যুতের এ ব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক পাখাও চালানো যায়। তবে তা ডিসি বিদ্যুচালিত হতে হবে। আর ৭৫ ওয়াটের কম ক্ষমতার প্যানেলে সাধারণত পাখা চালানোর অনুমতি দেয়া হয় না। কারণ, পাখায় বিদ্যুৎ খরচ হয় বেশি। একটি পাখা চালাতে তিন ওয়াটের চারটি লাইটের সমান বিদ্যুৎ লাগে।
বর্তমানে দেশে ৫ থেকে ১৩৫ ওয়াটের প্যানেল গ্রাহকরা কিনছেন। ১৩৫ ওয়াটের একটি প্যানেলসহ সিস্টেমের দাম ৪৬ হাজার ১০০ টাকা। এই ক্ষমতার সিস্টেমের সাহায্যে ১২টি লাইট, দুটি পাখা ও একটি টেলিভিশন চালানো যাবে।