পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন প্রধান আসামি শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ ওরফে মাসুমের ভাই মনোয়ার হোসেন ওরফে মো. মোনায়েম ওরফে মনাকে নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দা থেকে আটক করেছে র্যাব।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান আজ মঙ্গলবার দুপুরে জানান, ‘সোমবার রাতে মনাকে আটক করা হয়।’
সাজিদের অপকর্মে মনার প্রচ্ছন্ন সহায়তা ছিল বলে আজ দাবি করেন ফরাজীকান্দা গ্রামের বাসিন্দারা। ফরাজীকান্দা গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, খাগড়াগড় কাণ্ডে ধৃত সাজিদই এই গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা ওরফে মাসুম। স্থানীয়রা সাজিদকে মাসুদ রানা ওরফে মাসুম নামে চিনত। সাজিদের বাবার মৃত্যুর পরে ৪ ভাই, ৪ বোনের সংসারে সব চেয়ে ছোট সাজিদকে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনের পাল্লায় পড়ে সে বিপথে চলে যায়।
ফরাজীকান্দায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ঘটনার পরে সাজিদের পরিবারের অন্য সদস্যেরা আত্মগোপন করেছেন। ফরাজীকান্দায় তাদের পৈতৃক বাড়িতে এখন কেবল রয়েছেন শেফালি ও রোকেয়া নামে দুই মহিলা। শেফালি আটক মনার স্ত্রী। ভারতে বুরহান শেখের নামে পরিচয়পত্র তৈরি করিয়েছিল মাসুম ওরফে সাজিদ।
আটক মনার বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, ‘বুরহান তাঁদের আর এক ভাইয়ের নাম। তিনি মালয়েশিয়ায় চাকরি করেন। গতকাল বুরহান মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন।’
কিন্তু ৪৫ বছর বয়সী ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মোনায়েম ওরফে মনা গ্রেফতার হওয়ার পরে পরিবারের বাকিদের নিয়ে বুরহানও গা-ঢাকা দেন।
ফরাজীকান্দার বাসিন্দাদের দাবি, সাজিদ যে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তা তাঁরা জানতেন। তবে সে যে এত বড় জঙ্গি নেতা তা তাঁদের জানা ছিল না। তাঁদের দাবি, সাজিদের কাজকর্মে মনাও মদত দিতেন। ১৯৯৭-এ চট্টগ্রামে প্রচুর বিস্ফোরক, ডিটোনেটর, জেহাদি বই-সহ গ্রেফতার হয় সাজিদ ওরফে মাসুম। তখন মনাই তাকে জামিনে ছাড়ান। পরে অবৈধ অস্ত্র-সহ আবার গ্রেফতার হয় সাজিদ। তখন পৈতৃক জমি বিক্রি করে ফের তার জামিনের ব্যবস্থা করেন মনা। শেষ পর্যন্ত সাজিদ দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছাড়ে। তার পরে আর তার খোঁজ মেলেনি।
সাজিদের আর এক ভাই মামুন স্কুলশিক্ষক। তার বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আরও জানায়, এক সময়ে ফরাজীকান্দার বাড়িতে সাজিদের কাছে বিভিন্ন অপরিচিত লোক যাতায়াত করত। এক সময়ে সাজিদের সন্দেহজনক চলাফেরায় বাধা দেন স্থানীয়েরা। পাশের গ্রাম মাধবপাশায় গিয়ে ওই অপরিচিতদের সঙ্গে বৈঠক করত সাজিদ। তাদের জন্য সাজিদের বাড়ি থেকে খাবারও পাঠানো হতো।
মঙ্গলবার দুপুরে র্যাবের পক্ষ থেকে মোনায়েম ওরফে মনাকে আটকের বিষয়টি জানানো হয়, যদিও তার প্রায় ১২ ঘণ্টা আগেই আটকের বিষয়টি প্রকাশ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।