মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা জানিয়েছে নিউইয়র্ক শিল্পকলা একাডেমি। এ উপলক্ষে স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সকল বিভেদ ভুলে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান।
সাংবাদিক আশরাফুল হাসান বুলবুলের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এরপর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির সদস্য সচিব বাবলী হক।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্য ব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন হোসেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রর শিল্পী শহীদ হাসান ও রথীন্দ্রনাথ রায়, কমিউনিটি লিডার নাসির আলী খান পল, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুকিত চৌধুরী, কবি, গীতিকার ও সাংবাদিক জীবন চৌধুরী, সঙ্গীতজ্ঞ নাদিম আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আইরিন পারভিন, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, সাপ্তাহিক ঠিকানার ভাইস প্রেসিডেন্ট মঞ্জুর হোসেন, সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক রানার’র প্রধান সম্পাদক তাসের মাহমুদ, ইকবাল আহমেদ মাহবুব, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার, নারী নেত্রী অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন, নূরুল ইসলাম বর্ষন, দেওয়ান বজলু, আতাউর রহমান আতা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী এবং রাশেদ আহমেদকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শামীম আহসানতাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে সম্মান জানান শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরন নবী অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শিল্পকলা একাডেমি ইউএসএ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাকে যে সম্মান জানিয়েছে তাতে তিনি একা নন, সকল মুক্তিযোদ্ধা সম্মানিত হয়েছেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু তরুণ বয়স থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য তিনি তরুণ প্রজন্মকে সংগঠিত করেছিলেন। তার আহ্বানেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এ কারণেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের নেতা।
নাট্য ব্যক্তিত্ব জামাল উদ্দিন হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পেছনে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ছিল। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছেন। তিনি দুর্বার শক্তি জুগিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। তাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালি জাতিকে দ্বিখণ্ডিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সবসময় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে পুরো বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
কমিউনিটির লিডার নাসির আলী খান বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে বিভক্তি থাকতে পারে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাঙালি জাতির মধ্যে কোনো বিভক্তি থাকা ঠিক নয়। তিনি বলেন, সব দলেই মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। কিন্তু দলীয় ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সংগঠন থাকা ঠিক নয়। তিনি নিউইয়র্কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গঠনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কনসাল জেনারেল শামীম আহসান নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না জানলে জাতি হিসাবে আমরা পিছিয়ে পড়বো। তিনি এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসান ও রথীন্দ্রনাথ রায়। কবিতা আবৃত্তি করেন জীবন চৌধুরী। এছাড়া নৃত্য পরিবেশন করে হৈমন্তী, পারমিতা, অনিন্দিতা ও হৃদিতা মণ্ডল। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শিল্পকলা একাডেমির আহ্বায়ক মনিকা রায়।